ট্র্যাফিক আইন ভাঙার ক্ষেত্রে কাগজের চালানের মাধ্যমে জরিমানা মেটানোর ব্যবস্থা তুলে দিতে চলেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। রাস্তায় পুলিশ কিংবা মোটর ভেহিক্ল দফতরের আধিকারিকেরা ট্র্যাফিক আইন ভাঙার ঘটনায় এর পর থেকে অনলাইনে নির্দিষ্ট পোর্টালের মাধ্যমে জরিমানা আদায়ের কাজ করবেন। আগামী ১ জুন থেকে এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাচ্ছে বলে খবর। এর জন্য রাজ্যের পরিবহণ দফতর তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সহযোগিতায় ‘সংযোগ’ নামে নতুন একটি পোর্টাল তৈরি করেছে।
বছর দুয়েক আগে রাজ্যের মুখ্যসচিবের উপস্থিতিতে নবান্নে হওয়া একটি বৈঠকে ঠিক হয়, কাগজের অথবা স্থানীয় (লোকাল) সার্ভারের মাধ্যমে জরিমানা আদায়ের পরিবর্তে একটি সুসংহত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ওই ব্যবস্থার মাধ্যমে জরিমানা আদায়ের প্রক্রিয়াকে কেন্দ্রীভূত করা ছাড়াও কোনও একটি গাড়ি রাস্তায় ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে তার আগে সেটি কোথায়, কী অপরাধ ঘটিয়েছে, তা-ও এক নিমেষে দেখে ফেলতে পারবেন পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা। ফলে, অপরাধের প্রবণতা এবং চরিত্র অনুযায়ী জরিমানা ধার্য করা যাবে।
একই সঙ্গে সুসংহত পোর্টাল হওয়ার ফলে কলকাতা বা রাজ্য পুলিশ, যার এলাকাতেই আইনভঙ্গের ঘটনা ঘটুক না কেন, একই ব্যবস্থা সর্বত্র কার্যকর হবে। পুরনো ব্যবস্থায় এই সমন্বয় না থাকার কারণে বিপুল পরিমাণ জরিমানার অঙ্ক বকেয়া থাকছিল বলে পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর। আধিকারিকদের আরও দাবি, নতুন পোর্টাল চালু হলে জরিমানা আদায়ের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসবে।
তবে, নতুন পোর্টাল চালু করতে গিয়ে আরও একাধিক আনুষঙ্গিক নির্দেশিকার কথা জানিয়েছে পরিবহণ দফতর। যেমন, কোনও গাড়ির ক্ষেত্রে জরিমানার অঙ্ক বকেয়া থাকলে গাড়ির মালিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ছাড়পত্র এবং গাড়ির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র নেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। জরিমানার টাকা মেটানোর পরে তবেই এই ধরনের কোনও পরিষেবার জন্য আবেদন জানানো যাবে। ওই পোর্টালের মাধ্যমে আদায় হওয়া জরিমানার টাকা সরাসরি রাজ্য সরকারের কোষাগারে জমা হবে।
তবে, বিষয়টি নিয়ে চালক সংগঠনগুলির মধ্যে গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। এআইটিইউসি-র ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনের নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘জরিমানা আদায়ের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার কথা বলছে সরকার। কিন্তু, জরিমানা করার প্রক্রিয়াতেও স্বচ্ছতা আনা জরুরি। সেটা আগে দেখা দরকার।’’ বাসমালিক সংগঠন সিটি সাবার্বান সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘সরকার যান শাসনের তুলনায় জরিমানা আদায় করাকেই মুখ্য করে তুলতে চাইছে।’’
ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এককালীন জরিমানা মেটানোর সুযোগ পাওয়া যেত আগে। আইন বেশি কঠোর হলে রাস্তায় জরিমানা ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)