স্টিফেন কোর্টে নয়া অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা। নিজস্ব চিত্র
জ্বলন্ত স্টিফেন কোর্ট থেকে কোনওমতে নিজের অফিসের সব কর্মচারীকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন দিলীপকুমার বসু। আগুনে সেই অফিস প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ৬০-৭০ লক্ষ টাকা গুণাগার দিয়ে সবে কয়েক মাস আগে নিজের অফিসে ফিরতে পেরেছেন সেই প্রবীণ ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু এখনও দমকলের ছাড়পত্রের অভাবে ভুগতে হচ্ছে তাঁকে। আট বছর বাদেও ওই ইঞ্জিনিয়ারিং প্লান্টের পার্ক স্ট্রিটের অফিসটির ট্রেড লাইসেন্স, নিজস্ব বিদ্যুতের লাইন ইত্যাদি নিয়ে নানা ঝঞ্ঝাটে জেরবার কর্তারা।
খানিকটা একই সমস্যায় শহরের প্রাসাদোপম বহুতলটির পুরনো বাসিন্দা ললিত গোয়েনকা বা দেবাশিস গুহনিয়োগী। বাড়ির সংস্কারে কয়েক কোটি খরচের পরেও তাঁরা মসৃণ ভাবে পুরনো জায়গায় ফিরতে পারছেন না। ললিতবাবুর দাবি, ‘‘দমকল-পুরসভার শর্ত মেনে বাড়িটির নিরাপত্তায় যা করার, তার অনেকটাই শেষ। স্টিফেন কোর্টের ৯৫ শতাংশ বাসিন্দাই এককাট্টা। কিন্তু হাতে গোনা ক’জনের অসহযোগিতায় দমকলের ছাড়পত্র মিলছে না।’’ এই সঙ্কটে এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হতে ইচ্ছুক স্টিফেন কোর্টের বাসিন্দাদের অ্যাসোসিয়েশন। তাদের কর্তা দেবাশিসবাবু বলছেন, ‘‘তৃণমূল পুরবোর্ড ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মমতাদি ধারাবাহিক ভাবে সাহায্য করেছেন। দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দায়িত্বশীল বাসিন্দা হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে আমরা সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছি। আশা করছি, মুখ্যমন্ত্রী সমস্যাটি বুঝবেন।’’
তবু স্টিফেন কোর্টের চারটি ব্লকের বাসিন্দাদের নিয়ে বহুতলটি পুরনো ছন্দে ফেরার রাস্তায় এখনও কাঁটা। নীচে রয়েছে বেশ কয়েকটি রেস্তরাঁ। মিড্লটন স্ট্রিটের দিকে স্টিফেন কোর্টের একতলায় একটি হুকা বারও পথ চলা শুরু করেছে। কিন্তু অর্ধেকের বেশি বাসিন্দার বাড়ি ফিরতে বাকি। কয়েক জন বাসিন্দাকে ‘রিস্ক বন্ডে’ সই করিয়ে বাড়ির ‘নিরাপদ’ অংশে থাকার অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই। দমকল এখনও বাড়ির অ্যাসোসিয়েশনকে সীমিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তার ভিত্তিতেই স্টিফেন কোর্টে কয়েকটি অফিস সম্প্রতি চালু হয়েছে।
কিন্তু বাসিন্দারা ঐকমত্যে আসতে পারছেন না কেন? দেবাশিসবাবু বা বিজয় লীলারামের মতো ফ্ল্যাট মালিকদের বক্তব্য, হাতে গোনা ক’জন সংস্কারে টাকা দিতে চাইছেন না। তাঁরা এমনিতে অন্য ফ্ল্যাটে থাকেন। কেউ কেউ কলকাতার বাইরেও থিতু। ওঁরা একমত হলে দমকলের ছাড়পত্র পেতে সমস্যা হত না। অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে মতান্তর বজায় রেখেছেন সাত জন ফ্ল্যাট বা অফিসমালিক। তাঁদের মধ্যে দু’জন মামলাও করেছেন। জনৈক সোহম কপূরের দাবি, ‘‘অ্যাসোসিয়েশনের কাজ আরও পেশাদারিত্বের সঙ্গে করা উচিত ছিল।’’ সদ্য বাগড়ি মার্কেটের বিধ্বংসী আগুনের পটভূমিতে দমকলের ডিজি জগমোহন কিন্তু বলছেন, ‘‘স্টিফেন কোর্টের বাসিন্দাদের নিজেদের সমস্যা ওঁদেরই মেটাতে হবে। এর দরুন দমকলের সুপারিশ অনুযায়ী কিছু কাজ ওঁরা এখনও করতে পারেননি।’’
সম্প্রতি স্টিফেন কোর্টে তিন লক্ষ লিটার আয়তনের নয়া জলাধার, জলের পাম্প চালিয়ে মহড়া হয়েছে। বাড়ির গায়ে নতুন রঙের প্রলেপ, ফ্ল্যাটে-ফ্ল্যাটে আপৎকালীন বিকল্প সিঁড়ির সংযোগ চোখে পড়বে। আট বছর আগে অগ্নিগ্রস্ত দু’নম্বর লিফটের কাছেই দাঁড়িয়ে ছ’তলায় সত্তরোর্ধ্ব দিলীপকুমার বসু শুধু বলছেন, ‘‘চার দশক আগে অনেক আশায় অফিসটা তৈরি করেছিলাম। আশা করছি, সব কিছু দ্রুত পুরনো ছন্দে ফিরবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy