Advertisement
E-Paper

ভেন্ডিং মেশিনে টিকিট কেটে দেয় ওরা

ততটা প্রচার নেই। নেই যন্ত্র ব্যবহারের জন্য যাত্রীদের জন্য নির্দেশিকা। তাই হাতে স্মার্টফোন ধরা নিত্যদিনের রেলযাত্রীরাও স্টেশনে সিওটিভিএম (ক্যাশ/স্মার্ট কার্ড অপারেটেড টিকিট ভেন্ডিং মেশিন) র মুখো হতে চান না।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:১১

ততটা প্রচার নেই। নেই যন্ত্র ব্যবহারের জন্য যাত্রীদের জন্য নির্দেশিকা। তাই হাতে স্মার্টফোন ধরা নিত্যদিনের রেলযাত্রীরাও স্টেশনে সিওটিভিএম (ক্যাশ/স্মার্ট কার্ড অপারেটেড টিকিট ভেন্ডিং মেশিন) র মুখো হতে চান না। শহরতলির ট্রেনের টিকিট কাটতে সময় লাগলেও যাত্রীদের সিংহভাগই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন কাউন্টারে দাঁড়াতেই। নিত্যযাত্রীদের এমন সমস্যা থেকে তাই রেহাই দেওয়ার চেষ্টা করছে ওরা। রেলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই কারও। ওরা পথশিশু। তবে ব্যস্ত সময়ে বহু স্টেশনেই ভেন্ডিং মেশিন থেকে যাত্রীদের টিকিট কেটে দিয়ে সাহায্য করছে ওরা।

যাত্রীদের সুবিধার্থেই এক সময় রেলের তরফে বিভিন্ন স্টেশনে টিকিট কাটার ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছিল। যে মেশিনে টাকা ঢোকালেই টিকিট বেরোবে। টিকিট কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হবে না যাত্রীদের। অভিযোগ, উপযুক্ত প্রচারের অভাবেই ভেন্ডিং মেশিনের সুবিধা সম্বন্ধে যাত্রীরা তেমন সচেতন হতে পারেননি। তাই ব্যস্ত সময়ে শহর ও শহরতলির রেলস্টেশনে যাত্রীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে পথশিশু কিংবা রেলস্টশন চত্বরে বসবাসকারীরাই।

কী করছে ওই শিশুরা? বিধাননগর স্টেশনে দেখা গেল ব্যস্ত সময়ে রেল মাত্র তিনটি টিকিট কাউন্টার খোলা। যাত্রীদের লম্বা লাইন। এক কিশোর এক যাত্রীর কাছে গিয়ে বলল, ‘‘এ দিকে আসুন, টিকিট কেটে দিচ্ছি। ওই গুলো তো ফাঁকা পড়ে আছে!’’ এর পরে ওই যাত্রীকে নিয়ে গিয়ে সিওটিভিএম (ক্যাশ/স্মার্ট কার্ড অপারেটেড টিকিট ভেন্ডিং মেশিন) থেকে টিকিট কেটে দিল সে। ঘটনা দেখে লাইন ছেড়ে আরও কয়েক জন যাত্রী চলে এলেন ওই কিশোরের কাছে। লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা এড়াতে দু’-এক জন যাত্রী জনৈক কিশোরের হাতে ‘টিপস’ও দিলেন।

যাত্রীদের অনেকেরই দাবি, তাঁরা অনেকেই দ্রুত প্রযুক্তির ব্যবহারে ঘাবড়ে যান। রেলের তরফে কোনও নির্দেশিকা বোর্ডও থাকে না ওই মেশিনের কাছে। স্ক্রিনে হাত ছুঁইয়েই একের পর এক নির্দেশ মেনে টিকিট কাটতে হয়। যাত্রীদের সাহায্যের জন্য রেলকর্মীরাও কেউ থাকেন না।

সমস্যার কথা কার্যত স্বীকার করে পূর্ব রেলের জনসংযোগ অধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘সিওটিভিএম প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য নতুন করে প্রচার চালানোর ভাবনাচিন্তা চলছে। প্রয়োজনে স্টেশনে ব্যবহার-বিধি লিখে বোর্ডও দেওয়া হবে।’’

ওই পথশিশুদের সঙ্গে কথা বলেই জানা গেল,তাদের অনেকেরই দিন কাটে স্টেশনের মেঝেতে শুয়ে-বসে। কখনও রেলপুলিশের তাড়াও খেতে হয়। তা সত্ত্বেও নেহাতই খেলার ছলে ওই কচিকাঁচারা ভেন্ডিং মেশিন থেকে টিকিট কাটার কৌশল শিখে নিয়েছে।

দমদম স্টেশন চত্বরে মায়ের সঙ্গে থাকে বছর দশেকের নেহা সোরেন। তার মা স্টেশনে একটি খাবারের স্টলে সাফাইকর্মীর কাজ করেন। টিকিট কাটার কৌশল ভাল মতো জানা নেহার। তার কথায়, ‘‘প্রথমে এমনিই মজা লাগত। সারাদিন চালাতাম ওটা। এখন শিখে গিয়েছি।’’ শিয়ালদহ স্টেশনের রাজা সর্দারের বয়স ন’বছর। ভিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সে-ও টিকিট কেটে সাহায্য করে যাত্রীদের। রাজা বলল, ‘‘পুলিশ দেখলেই মারে আমাদের। আমরা তো ভাল কাজই করি।’’

পথশিশুদের এই ভূমিকাকে সমর্থন জানাচ্ছেন যাত্রীরা। বিধাননগর স্টেশনের এক যাত্রীর কথায়, ‘‘আমাদের কষ্ট কমে। কখনও দু’-পাঁচ টাকা দিই। তাতে ওদের ভিক্ষার ঝোঁক কমবে।’’ আশুতোষ কলেজের পড়ুয়া ঋতুপর্ণা রায়ের কথায়, ‘‘এক দিন দমদমের কাউন্টারে খুব লাইন হয়েছে। ট্রেন ধরার দরকার ছিল। একটি মেয়ে ডেকে নিয়ে দ্রুত টিকিট কেটে দিল!’’

Street Children Railway Ticket Vending System Railway
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy