আপৎকালীন: সহ-উপাচার্যের ঘরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফোল্ডিং খাট। মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র
অফিসেই বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটি ফোল্ডিং খাট আনিয়ে রেখেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য প্রদীপকুমার ঘোষ। কেননা সোমবার শুরু হওয়া ঘেরাওয়ে ক’দিন আটকে থাকতে হবে, মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেও তা অনিশ্চিত ছিল। বিভিন্ন দাবিতে এ দিনেও ছাত্রছাত্রীদের একাংশের হাতে ঘেরাও হয়ে থাকতে হয় উপাচার্য এবং অন্য কর্তাদের। পাঁচ মাসে যাদবপুরে এই নিয়ে পাঁচ বার কর্তৃপক্ষকে ঘেরাও করা হল বলে জানান প্রদীপবাবু।
আন্দোলনরত পড়ুয়ারা অবশ্য তাঁদের ধর্না-বিক্ষোভকে ঘেরাও বলতে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য, কাউকে তাঁরা ঘেরাও করে রাখেনি। পড়ুয়াদের অভিযোগ ও দাবির কথা জানাচ্ছেন মাত্র। উপাচার্য-সহ আধিকারিকেরা যদি তাঁদের উপর দিয়ে যেতে চান, চলে যেতে পারেন। আটকে থাকা কর্তারা যে এ ভাবে বেরিয়ে যাবেন না, অফিসেই থেকে যাবেন, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ তা জানিয়ে দেন। পড়ুয়াদের অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য কর্তৃপক্ষ একটি তথ্যানুসন্ধানী কমিটি গড়ার আশ্বাস দেওয়ার পরে বেশি রাতে ঘেরাও তুলে নেওয়া হয়।
আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের মূল অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ডিসএবিলিটি স্টাডিজের কার্যকলাপ নিয়ে। তাঁদের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে ওই সেন্টারের কার্যকলাপে নানা ধরনের অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। ওখানে যে-আর্থিক অনুদান এসেছে, তা তছরুপ হয়েছে। অরিত্র মজুমদার নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘‘এই ডিসএবিলিটি স্টাডিজে যে-সব গবেষণা হচ্ছে, তার সঙ্গে এই বিভাগের কোনও সম্পর্ক নেই। যেমন এই বিভাগের টাকায় ইংরেজি রবীন্দ্র রচনাবলির বাংলা অনুবাদ হয়েছে। প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের ক্রিকেট খেলা হয়েছে চিত্রতারকাদের সঙ্গে। এই ধরনের এমন সব কাজে টাকা খরচ করা হয়েছে, যার সঙ্গে এই বিভাগের গবেষণার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, তাঁদের অভিযোগ নিয়ে তদন্তের জন্য একটি কমিটি গড়া হয়েছে। কিন্তু যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের নামেই ফের আর্থিক অনুদান এসেছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, অবিলম্বে এই সেন্টার পুনর্গঠন করতে হবে।
সহ-উপাচার্য প্রদীপবাবু অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, রাতারাতি এই সেন্টার পুনর্গঠন করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কয়েকটি প্রক্রিয়া আছে। রাতারাতি এই সেন্টার পুনর্গঠন করতে বা উঠিয়ে দিতে পারি না আমরা। শুধু এই সেন্টার নয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যত স্টাডি সেন্টার আছে, তাদের পঠনপাঠনের মূল্যায়ন করা হবে। সেই মূল্যায়নের পরেই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বারে বারেই প্রশ্ন তুলেছেন, প্রেসিডেন্সি আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এত গোলমাল কেন? আর ক্ষুব্ধ সহ-উপাচার্য এ দিন প্রশ্ন তোলেন, নানান দাবিদাওয়ায় এই নিয়ে পাঁচ মাসে পাঁচ বার তাঁদের ঘেরাও করা হল। আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে? ‘‘ওরা (আন্দোলনকারীরা) মুখে ঘেরাও করে রাখেনি বলে দাবি করছে ঠিকই। কিন্তু বলছে, ‘আমাদের উপর দিয়ে আপনারা চলে যান।’ আমরা এই নাটক করতে চাইছি না। তাই এখানে বসে রয়েছি,’’ বলেন প্রদীপবাবু।
এই ঘেরাও নিয়ে যাদবপুরের শিক্ষক সমিতি জুটা-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের বক্তব্য, পড়ুয়ারা গণতান্ত্রিক উপায়ে দাবি জানাতেই পারেন। কিন্তু সেটা অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy