Advertisement
E-Paper

মাটির মূর্তিতে প্রাণ পেল শাকিলা, বৈশাখীর ভাবনা

অবচেতনে থাকা বিদ্যার দেবীকে সাদা কাগজে এঁকেছিল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী শাকিলা সর্দার এবং অষ্টম শ্রেণির বৈশাখী হালদার। এর পরে তাদের ভাবনার সেই অবয়বকে মিলিয়ে প্রতিমা গড়ার ভার তাদেরই দেন শিক্ষিকারা। এ বছরে সিঁথির নবজাতক বিদ্যাভবনের সরস্বতী পুজো হয়েছে শাকিলা ও বৈশাখীর গড়া প্রতিমা দিয়েই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:১৪
আরাধনা: বৈশাখী হালদার ও শাকিলা সর্দারের তৈরি প্রতিমার সঙ্গে পড়ুয়ারা। রবিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

আরাধনা: বৈশাখী হালদার ও শাকিলা সর্দারের তৈরি প্রতিমার সঙ্গে পড়ুয়ারা। রবিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

তোমাদের চোখে সরস্বতী কেমন? জানতে চেয়েছিল স্কুল।

অবচেতনে থাকা বিদ্যার দেবীকে সাদা কাগজে এঁকেছিল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী শাকিলা সর্দার এবং অষ্টম শ্রেণির বৈশাখী হালদার। এর পরে তাদের ভাবনার সেই অবয়বকে মিলিয়ে প্রতিমা গড়ার ভার তাদেরই দেন শিক্ষিকারা। এ বছরে সিঁথির নবজাতক বিদ্যাভবনের সরস্বতী পুজো হয়েছে শাকিলা ও বৈশাখীর গড়া প্রতিমা দিয়েই।

শাকিলার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে। বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি, মা কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। ক্যানিংয়ের বাসিন্দা বৈশাখীর বাবা নেই, মা পরিচারিকার কাজ করেন। প্রধান শিক্ষিকা সুজাতা বসু চট্টোপাধ্যায় জানান, সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে ১৯৬০ সালে পথ চলা শুরু করেছিল নবজাতক বিদ্যাভবন। ২০১৩ সালে সর্বশিক্ষা মিশনের আওতায় প্রান্তিক ছাত্রীদের জন্য স্কুলেই তৈরি হয় ছাত্রীনিবাস। সেই প্রকল্পের হাত ধরেই সিঁথির স্কুলের আবাসিক হয়েছে এই দু’জন। প্রধান শিক্ষিকার কথায়, ‘‘এই ছাত্রীদের পড়াশোনার পাশাপাশি স্বনির্ভর হয়ে ওঠার শিক্ষা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। সব শিক্ষিকারা সেই চেষ্টাই করেন।’’ বস্তুত, এই ভাবনা থেকেই স্কুলের প্রতিমার ভার ছাত্রীদের হাতে দেওয়া হয় বলে জানাচ্ছেন তিনি।

চল্লিশ দিন আগে শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। মোট ১৫ জন ছাত্রীকে সরস্বতীর অবয়ব আঁকতে বলা হয়। তার মধ্যে শাকিলা ও বৈশাখীর ছবি শিক্ষিকাদের পছন্দ হয়। এর পরেই শিক্ষক গোপাল বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় প্রতিমা গড়ার কাজ। কিন্তু তা মোটেই সহজ ছিল না।

বৈশাখী হালদার ও শাকিলা সর্দার।ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

এ বছরের থিম ‘শত ফুল বিকশিত হোক’। প্রধান শিক্ষিকা জানান, থিম ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের কথাও খেয়াল রাখা হয়। তাই প্রতিমা ও মণ্ডপের সজ্জায় কোনও রাসায়নিক রং ব্যবহার করা যাবে না বলে ঠিক হয়েছিল। প্রতিমা গড়ার কাজে মাটি, রঙিন কাগজ, পুরনো খাতা-বই ছাড়া আর কিছু ব্যবহারের অনুমতি ছিল না। শাকিলার কথায়, ‘‘খড়ের মধ্যে কাদা ঘোলা করে প্রথমে দিলাম। যত দিন শুকোয়নি, অপেক্ষা করেছি। শুকিয়ে যাওয়ার পরে তিনটে বাঁশ ত্রিভুজের মতো রাখলাম। পেরেক ঠুকলাম, সুতো দিয়ে বাঁধলাম। ধড় পর্যন্ত এ ভাবে কাজ এগোল।’’ বৈশাখী বলে, ‘‘এর পরে কিছুতেই মুখটা হচ্ছিল না। মাটি দেওয়ার পরে বারবার খসে যাচ্ছিল। আরও বেশি করে ধানের শিস দেওয়ার পরে কাজ হয়।’’

খড়-মাটির সেই প্রলেপের উপরে পুরনো বই-খাতার পাতা ছিঁড়ে লাগানো হয়। তার উপরে রঙিন কাগজ। প্রতিমার চোখ, ভ্রূ, শাড়ি— সবই নিজেদের হাতে কাগজ কেটে তৈরি করেছে দুই বান্ধবী। মণ্ডপের বাকি সজ্জায় হাত লাগিয়েছে অন্য ছাত্রীরা। তৈরি হয়েছে দেওয়াল পত্রিকাও। ছাত্রীদের কীর্তি দেখে গর্বিত প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘মাধ্যমিকে আমাদের একটি মেয়েও হতাশ করেনি। গত পাঁচ বছরের কোনও সিসি পরীক্ষার্থী নেই।’’

মেয়ে মূর্তি গড়ছে শুনে শাকিলার মা বলেছিলেন, ‘‘ভাল করে স্কুলের জন্য মূর্তি তৈরি করো। পরে কাজে আসবে।’’ পরে কাজে আসাটাই মেয়ের জন্য মায়ের প্রার্থনা। হয়তো সেজন্যই প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘ওরা যেখান থেকে উঠে এসেছে, তাতে আত্মবিশ্বাসের পাঠ দেওয়া সবচেয়ে জরুরি।’’

আত্মবিশ্বাসের সেই পাঠ নিতে শাকিলাদের হাত ধরেছে বৈশাখীরাও।

Idol Sarswati Puja Girls Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy