Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এল চতুর্থ বার্ষিকী, হল না মহানায়িকার স্মৃতিসৌধ

চার বছর হতে চলল। এর মধ্যে মহানায়িকার আরও তিনটি মৃত্যু দিবস পার হয়ে গিয়েছে। এখনও সুচিত্রা সেনের স্মৃতিতে গড়ে ওঠেনি সেই সৌধ। এ নিয়ে নতুন ভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে শুনে মহানায়িকার নাতনি অভিনেত্রী রাইমা সেন বলেন, ‘‘ওখানে স্মৃতিসৌধ হলে তো খুব ভাল হয়।’’

সমাধি: কেওড়াতলা শ্মশান সংলগ্ন এই উদ্যানেই সুচিত্রা সেনের স্মৃতিসৌধ হওয়ার কথা। —নিজস্ব চিত্র।

সমাধি: কেওড়াতলা শ্মশান সংলগ্ন এই উদ্যানেই সুচিত্রা সেনের স্মৃতিসৌধ হওয়ার কথা। —নিজস্ব চিত্র।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩১
Share: Save:

২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি মৃত্যু হয় বাংলা সিনেমার কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেনের। কেওড়াতলায় চিত্তরঞ্জন দাস মেমোরিয়াল উদ্যানে সে দিন দুপুরেই দাহ করা হয়েছিল তাঁর দেহ। দাহকার্যের শুরু থেকে সারাক্ষণ ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাজ্যের এক ডজন মন্ত্রী থেকে আমলা। মুখ্যমন্ত্রী সে দিনই বলেছিলেন, সেখানে মহানায়িকার স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে। সেই কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন কলকাতা পুর প্রশাসনকে।

চার বছর হতে চলল। এর মধ্যে মহানায়িকার আরও তিনটি মৃত্যু দিবস পার হয়ে গিয়েছে। এখনও সুচিত্রা সেনের স্মৃতিতে গড়ে ওঠেনি সেই সৌধ।এ নিয়ে নতুন ভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে শুনে মহানায়িকার নাতনি অভিনেত্রী রাইমা সেন বলেন, ‘‘ওখানে স্মৃতিসৌধ হলে তো খুব ভাল হয়।’’

কেমন আছে দাহকার্যের সেই স্থান?

শুক্রবার গিয়ে দেখা গেল, চিত্তরঞ্জন দাস মেমোরিয়াল উদ্যান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তারই মাঝে বিপ্লবী চিত্তরঞ্জন দাস, তাঁর সহধর্মিণী বাসন্তীদেবী, যতীন দাস, হেমচন্দ্র ঘোষ থেকে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ত্রৈলোক্যানাথ চক্রবর্তীর স্মৃতিসৌধ রয়েছে পুরো চত্বর জুড়ে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের স্মৃতিসৌধও আছে সেখানে। কিন্তু সুচিত্রা সেনের দাহকার্যের সেই জায়গাটা আজও খালি পড়ে আছে।

ঠিক কোথায় দাহ হয়েছিল রুপোলি জগতের মহানায়িকার দেহ? শ্মশানের কর্মীরা বাঁশের চারটি খুঁটি পুঁতে ঘিরে রেখেছেন সেই জায়গা। তার ঠিক সামনে রয়েছে দেশবন্ধুর স্ত্রী বাসন্তীদেবীর স্মৃতিসৌধ। জানালেন, এখানেই দাহ হয়েছিল তাঁর দেহ। সোনালি জরিপাড়ের সাদা বেনারসিতে ঢাকা মহানায়িকার দেহ দাহ করতে সে দিন প্রায় দেড় কুইন্টাল চন্দন কাঠ এবং ৫০ কেজি ঘি আনা হয়েছিল। তা দিয়েই সাজানো হয়েছিল চিতা। গান স্যালুট দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল মহানায়িকাকে। দুপুর দেড়টা নাগাদ জ্বালানো হয় চিতা, শেষ হয় বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। দাহ কাজ শেষ হতেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের দেহ যেখানে দাহ করা হচ্ছে, সেখানেই তৈরি হবে তাঁর স্মৃতিসৌধ।’’ তা যে দ্রুত করতে হবে, তাও জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

তার পর থেকে তিনটি মৃত্যুর দিন পার হয়েছে তাঁর, চিত্তরঞ্জন দাস মেমোরিয়াল পার্কে মহানায়িকার দাহ স্থানে কেউ একটা মালা দিতেও আসেনি। স্থানীয় একাধিক কর্মীর একটাই আক্ষেপ, মুখ্যমন্ত্রী বলার পরও এখনও গড়ে উঠল না সেই স্মৃতিসৌধ! অথচ পুর প্রশাসনের কাছে এই সৌধ বানানো যে কঠিন কাজ, তাও নয়। তা হলে কেন এত বিলম্ব? কেনই বা ফেলে রাখা হচ্ছে? মুখ খুলতে চাননি পুর প্রশাসনের কোনও আমলা এবং ইঞ্জিনিয়ার। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরপরই এটা যে করা উচিত ছিল, তা মেনে নিয়েছেন মেয়র-সহ একাধিক মেয়র পারিষদও। সঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর আরও নির্দেশ ছিল, কিংবদন্তী নায়িকার বাসস্থান এলাকা অর্থাৎ, বালিগঞ্জ ফাঁড়ির নামকরণ হবে সুচিত্রা সেন স্কোয়ার। তা অবশ্য ইতিমধ্যেই করা হয়েছে।

আগামী ১৭ জানুয়ারি মহানায়িকার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। এখনও কি খালিই পড়ে থাকবে তাঁর চিতাস্থল? এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় আশ্বাস দেন, ‘‘আগামী মৃত্যু দিনের আগেই ওখানে সুচিত্রা সেনের স্মরণে স্মৃতিসৌধ বানানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE