থমকে: ভিআইপি রোডে যানজট। বুধবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
বিধায়কের পুজো! তাই কি শ্রীভূমির ভিড় নিয়ন্ত্রণে নাগরিক সুবিধার উপরে খড়্গহস্ত পুলিশ? বুধবার নাগরিকদের একাংশ এমনই প্রশ্ন তুলেছেন।
গত বছর শ্রীভূমির পুজো ঘিরে ভিড়ের চাপে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ভিআইপি রোড। এ বার তাই পুজোয় পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে পুজোকর্তাদের পাশাপাশি আগ্রহ ছিল জনমানসেও। এ দিন বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি (সদর) অমিত জাভালগি তিরিশ মিনিটের সাংবাদিক বৈঠক করে জানালেন, তৃতীয়া থেকে ভিআইপি রোডে গোলাঘাটা এবং বাঙুর অ্যাভিনিউয়ের মধ্যে কোনও গা়ড়ি দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। এমনকি, নির্দিষ্ট স্টপ থাকলেও সেখানে বাস-অটো দাঁড়াবে না। ভিআইপি রোডের ঘড়ি মোড় থেকে লেক টাউনমুখী রাস্তাও গাড়ির জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ, পুজোর দিনে ভিআইপি রো়ডে ভোগান্তির আশঙ্কা চোদ্দ আনা!
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, শ্রীভূমি ও গোলাঘাটার বাসিন্দাদের গাড়ির জন্য দক্ষিণদাঁড়ির পথ খোলা থাকছে। কিন্তু বিকেলের পরে সেই রাস্তায় যেতে হলে পুলিশের দেওয়া পরিচয়পত্র লাগবে।
ভিআইপি রোডের নির্মীয়মাণ শ্রীভূমি ও গোলাঘাটার ভূগর্ভস্থ পথ (সাবওয়ে) পুজোর আগেই উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কিন্তু শ্রীভূমির ভূগর্ভস্থ পথ সংরক্ষিত থাকবে শুধুমাত্র ‘ভিআইপি’-দের জন্য। শ্রীভূমির পুজোয় ঢুকতে হলে গোলাঘাটার সাবওয়ে দিয়ে রাস্তা পেরোতে হবে। পুজো দেখে বেরিয়ে রাস্তা পেরোনোর জন্য বাঙুর অ্যাভিনিউয়ের সাবওয়ে ব্যবহার করতে হবে দর্শনার্থীদের। গোলাঘাটা থেকে শ্রীভূমির প্রতিমা দর্শন করে বাঙুরের সাবওয়ে পর্যন্ত গোটা পরিক্রমা সারতে দর্শনার্থীদের হাঁটতে হবে ৬০০ মিটার।
সল্টলেক থেকে লোকজন গোলাঘাটা, শ্রীভূমি, লেক টাউনের ফুটব্রিজ দিয়ে ভিআইপি রোডে যাতায়াত করেন। ভগ্নস্বাস্থ্যের জেরে ভিড় বহনে অক্ষম হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে শুক্রবার বিকেলের পরে ওই তিনটি ফুটব্রিজ বন্ধ করে দেওয়া হবে পূর্ত দফতর ও পুলিশ সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে দমদম পার্ক এবং কেষ্টপুর-বৈশাখী ফুটব্রিজ দিয়ে পারাপার করতে হবে। অর্থাৎ, ভোগান্তি!
ডিসি (সদর) জানান, কলকাতা থেকে শ্রীভূমিগামী বাস, ট্যাক্সি, অটো দক্ষিণদাঁড়ির পরেই সার্ভিস রোডে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। যাত্রী নামিয়ে গাড়িগুলি গোলাঘাটা বাস স্টপের আগে আবার মূল রাস্তায় তোলা হবে। এর পরে বাঙুর পর্যন্ত আর কোনও গাড়ি থামবে না। ভিআইপি রোড থেকে যশোর রোড যেতে হলেও বাঙুর অ্যাভিনিউই ভরসা। যশোর রোড থেকে ভিআইপিমুখী গাড়ি লেক টাউন সুইমিং পুলের রাস্তা দিয়ে যেতে পারবে। গোলাঘাটা থেকে বাঙুর পর্যন্ত ভিআইপি রোডে পার্কিং নিষিদ্ধ। লেক টাউন ফুটব্রিজের পরে বাঙুরের সার্ভিস রোডে গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ থাকছে। ভিআইপি রোডের কলকাতামুখী সার্ভিস রোডেও গাড়ি পার্ক করা যাবে। উল্টোডাঙা উড়ালপুলের নীচে ৫০-৬০টি গাড়ি দাঁড় করানোর সুযোগ রয়েছে। তবে ভিআইপি রোডে উল্টোডাঙা থেকে বিমানবন্দরগামী গাড়ি গোলাঘাটার পর থেকে ঘোরানোর সুযোগ মিলবে না কেষ্টপুরের নারায়ণতলার আগে।
শ্রীভূমির পুজোর সর্বেসর্বা এবং বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু বলছেন, ‘‘মানুষ তো হেঁটেই পুজো দেখেন! যানজট যাতে না হয়, তার জন্য মানুষের কথা ভেবেই এই পরিকল্পনা করেছে পুলিশ। মনে হয় না সমস্যা হবে।’’ বিধাননগর কমিশনারেটের এক পদস্থ কর্তার মন্তব্য, ‘‘শ্রীভূমির পুজোর জায়গা স্বল্প। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় হলে দর্শনার্থীদের হাঁটানো ছাড়া উপায় কী!’’ তাঁর ব্যাখ্যা, গত বছর শ্রীভূমির পুজো প্যান্ডেলের কাছে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ায় সমস্যা হয়েছিল। লেক টাউন ঘড়ি মোড়ে রাস্তা পারাপারের জন্যও যানজট বেড়েছে। সেটা সামলানোই পুলিশের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে।
কিন্তু প্রবীণ নাগরিকেরা এতটা পথ হাঁটতে পারবেন? আম নাগরিকদের সমস্যায় পড়তে হবে না তো? ওই পুলিশকর্তার উত্তর, ‘‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তো রয়েছেই!’’
কিন্তু সেই ব্যবস্থা আদৌ নেওয়া হবে কি? উৎসবের ঢাকের আওয়াজে যেন চাপা পড়ে যায় সদুত্তর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy