Advertisement
১১ নভেম্বর ২০২৪
Sweets

বদলের ডাকে বিপাকে মিষ্টি-বিক্রেতারা 

সামনে পুজো। ব্যবসায় মন্দার ধাক্কা সামলে সবে মিষ্টি-কারবারিরা সুখের মুখ দেখবেন ভাবছেন! সেই চাপের মুখে রোজ রোজ ফুরান-তারিখ পাল্টাতে হলে ঘোর মুশকিলে পড়তে হবে।

নিয়ম: খাওয়ার যোগ্য কত দিন, মিষ্টির সামনেই তা লেখা রয়েছে কাগজে। মঙ্গলবার, ভবানীপুরের একটি দোকানে। ছবি: সুমন বল্লভ

নিয়ম: খাওয়ার যোগ্য কত দিন, মিষ্টির সামনেই তা লেখা রয়েছে কাগজে। মঙ্গলবার, ভবানীপুরের একটি দোকানে। ছবি: সুমন বল্লভ

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৪৮
Share: Save:

অক্টোবরের পয়লা আসছে দিন! সন্দেশ-রসগোল্লার পরীক্ষার দিন।

তবে ‘পরীক্ষার্থীদের’ ঘোর আপত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা নিয়েই। অতিমারির ধাক্কায় পরীক্ষার দিন ইতিমধ্যেই পিছিয়েছে কয়েক মাস। তবু বিস্তর টানাপড়েনের শেষেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও মান নির্ণয় কর্তৃপক্ষের (ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা এফএসএসএআই) ফরমান, ১ অক্টোবর থেকে বিপণিতে বা প্যাকেটের গায়ে ওষুধের মতো মিষ্টির ফুরান তারিখ বা ‘বেস্ট বিফোর’ সময়সীমা লিখতে হবে।

সামনে পুজো। ব্যবসায় মন্দার ধাক্কা সামলে সবে মিষ্টি-কারবারিরা সুখের মুখ দেখবেন ভাবছেন! সেই চাপের মুখে রোজ রোজ ফুরান-তারিখ পাল্টাতে হলে ঘোর মুশকিলে পড়তে হবে। মিষ্টি ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠনের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে এই দুঃখের কথা জানানো হয়েছে। কাল, বৃহস্পতিবার ক্রেতা-সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডের সঙ্গে মিষ্টির কারবারিদের বৈঠকের দিনও ধার্য হয়েছে। সাধনবাবু বলেন, “মিষ্টির ব্যবসায়ীদের দাবি মন দিয়ে শুনব। মিষ্টি যাঁরা খান এবং মিষ্টি যাঁরা গড়েন, উভয়ের দিকই দেখতে হবে!” এ রাজ্যে এফএসএসএআই-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সৌমাল্য বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, “সরকারি নির্দেশ চলে এসেছে। কোন মিষ্টির মেয়াদ কত দিন, এ বার থেকে লিখেই রাখতে হবে।” তবে রাজ্যে কম করে ৭০-৮০ হাজার মিষ্টি বিপণিকে এ পথে আনার কাজটা কী করে সম্ভব? রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ইনস্পেক্টরেরা এফএসএসএআই-কে সাহায্য করেন। “পরিকাঠামোর অভাব আছে। তবু বিষয়টা দেখতেই হবে।”— বলছেন সৌমাল্যবাবু।

আরও পড়ুন: বেহাল বহু রাস্তা, পুজোর আগেই সারাতে অনুরোধ পুলিশের

শহরের সাবেক রসগোল্লা-স্রষ্টার ঘরের ধীমান দাশ বলছেন, “রোজ মিষ্টির এক্সপায়ারি ডেট পাল্টানো খুব মুশকিল। পাড়ার ছোট দোকান তো নাকানিচোবানি খাবে! ব্যবসা বন্ধ না-হয়।” সিমলের সন্দেশ-স্রষ্টার পরিবারের পার্থ নন্দীর কথায়, “বাঙালির নরমপাক সন্দেশের তো সুখী শরীর। দু’-এক দিনের মধ্যেই তা খেতে হয়, সক্কলে জানেন। এত লেখাজোখা কেন? বিশ্বাসের সম্পর্কের ভিত্তিতেই চিরকাল কারবার চলছে।”

তবে খাদ্য-নিরাপত্তা সংক্রান্ত আধিকারিকদের অভিযোগ, অনেক মিষ্টিতেই রং-গন্ধের প্রয়োগ আপত্তিকর। নানা কসরতে বাসি মিষ্টি চালানোর প্রবণতাও অনেক দিনের। একটা নিয়মের মধ্যে বিষয়টি এলে সবারই ভাল।

মিষ্টির বড় ব্র্যান্ডগুলো সমস্যাটা নিয়ে ওয়াকিবহাল। তবু রিষড়ার পুরনো দোকানের অমিতাভ মোদক বলছেন, “লাড্ডু-বরফির মতো মিষ্টির জন্য এ সব নিয়ম ঠিক আছে। সন্দেশ-রসগোল্লার উপরে এত চাপ কী দরকার!” শহরের একটি অ-বাংলাভাষী হালুইকরের মিষ্টি চেনের কর্তা পরীক্ষিত গুপ্তের কথায়, “কলকাতায় আমরাও বাঙালি মিষ্টিতেই সড়গড়। সন্দেশ, রসগোল্লার শোকেসে রোজ তারিখ বদলানো মহা ঝকমারি।” মিষ্টি-কারবারিদের আরও ক্ষোভ, সেপ্টেম্বরের ২৪-২৫ তারিখেও মিষ্টি বিক্রির এই বদল নিয়ে নির্দেশিকা পাল্টে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আর শুধু বাংলা নয় ভিন্ রাজ্যের ময়রা-হালুইকরদেরও এ নিয়ে আপত্তি।

আরও পড়ুন: পানশালায় গান আবার কবে, দিন গুনছেন শিল্পীরা​

তবে নতুন পথও বেরোচ্ছে। ভবানীপুরের সাবেক মিষ্টি বিক্রেতা তাঁদের বিভিন্ন শাখায় ইতিমধ্যেই নতুন নিয়ম মানার চেষ্টা করছেন। দোকানের কর্ণধার সুদীপ মল্লিকের কথায়, “ভেনঘরে কম্পিউটার বসিয়ে নতুন মিষ্টি তৈরিতেই তার উৎপাদন বা ফুরান তারিখের তথ্য বেরিয়ে আসছে। শোকেসে সেটাই থাকছে।” রাবড়ি, রসমালাই এক দিন, নরমপাক সন্দেশ দু’দিন, দরবেশ, লাড্ডুর জন্য চার দিনের মেয়াদ চিহ্নিত করে মিষ্টির তিনটি গোত্র ভাগ হয়েছে। তবে সুদীপবাবুও গড়পড়তা মিষ্টি-কারবারির সমস্যা মাথায় রাখা উচিত বলেই মনে করেন।

রসিক বাঙালির কাছে অবশ্য বরাবরই বিশ্বাসে মিলায় মিষ্টি, তর্কে বহু দূর! এখন ক’টা দোকান এত নিয়ম মানতে পারবে? পাড়ায় পাড়ায় মিষ্টির দোকানে নজরদারির দৌড়ও বা কতটা সম্ভব, এই প্রশ্নগুলোও মিষ্টি-হাওয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Sweets Business
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE