সুরজকুমার রায়
গঙ্গার ধারে এলাকারই বেশ কয়েক জন বাসিন্দা মিলে আয়োজন করেছিলেন পিকনিকের। চলছিল তারই তোড়জোড়। আচমকাই সেখানে হাজির হন সাদা ধুতি, স্যান্ডো গেঞ্জি পরা কপালে লাল তিলক কাটা এক যুবক। এক হাতে তলোয়ারের মতো ধারালো অস্ত্র ধরে তিনি মাঝেমধ্যেই হুঙ্কার দিচ্ছেন ‘জয় মা’ বলে!
এই পর্যন্ত ঠিক ছিল সবই। কিন্তু আচমকাই পিকনিকের রান্নার উনুনে কাঠ দিতে ব্যস্ত থাকা এক প্রৌঢ়কে জাপটে ধরে তাঁর ঘাড়ে কোপ মেরে বসেন ওই যুবক। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই প্রৌঢ়কে মাটিতে ফেলে হাতে, ঘাড়ে কোপাতে শুরু করেন তিনি। বাঁচাতে এসে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম আরও পাঁচ জন। এর পরে অন্ধকারে চম্পট দেওয়ার সময়ে স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডের এক বাস মালিকের হাতে কোপ মারেন ওই যুবক। জখমদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মঙ্গলবার রাতে এমন ভাবেই দক্ষিণেশ্বরে নিবেদিতা সেতুর নিচে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। যদিও গভীর রাতে বরাহনগর থানার পুলিশ পার্শ্ববর্তী অম্বেডকর কলোনি থেকে সুরজকুমার রায় ওরফে টারজান নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের দাবি, মানসিক ভাবে অসুস্থ টারজানই এই কীর্তি করেছেন। তবে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের আবার দাবি, তাঁরা আলো আঁধারিতে যে যুবককে দেখেছেন তাঁর সঙ্গে টারজানের তেমন মিল নেই। তদন্তকারীরা অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন, তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিলেছে ধারালো অস্ত্রটিও। টারজানের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টা নাগাদ নিবেদিতা কলোনির পিকনিকে আচমকা হামলা চালান টারজান। তার জেরে প্রথমে তারক দাস নামে এক ব্যক্তি ঘাড়ে, হাতে, পিঠে চোট পান। তাঁকে বাঁচাতে গেলে পল্টু কয়ালকে বাঁ হাতে কোপ মারেন টারজান। সামনে থাকা সোমনাথ যাদবেরও মাথার পিছনে কোপ মারা হয়। এই দৃশ্য দেখে ভয়ে চেঁচামেচি জুড়ে দেন অন্য যুবকেরা এবং কলোনির বাসিন্দারা। অনেকে আতঙ্কে ঘরে ঢুকে পড়েন। তখন ওই যুবককে জাপটে ধরার চেষ্টা করতে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের ঘায়ে জখম হন, তাপস নস্কর, রবি দত্ত, বাবাই রায় নামে আরও তিন জন। তাঁরা জানান, বাঁশ দিয়ে বারবার আঘাত করা হলেও কাবু হননি অস্ত্রধারী ওই যুবক। এর পরে পালানোর সময় বাস স্ট্যান্ডে বাবু রাম নামে এক বাস মালিকের ডান হাতে কোপ দেন ওই যুবক। তাঁর চারটি আঙুল বাদ গিয়েছে।
খবর পেয়েই এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। কিন্তু কোথাও ধুতি পরা যুবকের সন্ধান মেলে না। পরে অবশ্য গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অম্বেডকর কলোনিতে হানা দিয়ে বাড়ি থেকে টারজানকে ধরে পুলিশ। তখন অবশ্য তিনি সাদা-কালো ডোরা কাটা গেঞ্জি ও হলুদ হাফ প্যান্ট পরেছিলেন। বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় তখনও মাটিতে রক্তের দাগ স্পষ্ট। এক বাসিন্দা প্রশান্ত দাস বলেন, ‘‘সেতুর দুই নম্বর পিলারে আলো জ্বলছিল না। তাই জায়গাটা একটু অন্ধকার ছিল। ফলে ঠিক মতো বুঝতে পারা যায়নি মুখটা। তবে যাঁকে ধরা হয়েছে তাঁকে নিয়ে একটু সন্দেহ রয়েছে।’’ অম্বেডকর কলোনিতে সুরজের বাড়িতে গেলে তাঁর বাবা চন্দ্রশেখরবাবু জানান বরাহনগর জুট মিলে কাজ করতেন ওই যুবক। বছর দু’য়েক আগে তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তিনি বলেন, ‘‘প্রায়ই সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে সেতুর নিচে তাড়ি খেতে যেত। বাড়িতে সমস্যা করলেও কোনও দিন বাইরের কাউকে আক্রমণ করেনি। কিন্তু কী যে হল বুঝতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy