নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কলকাতায় শব্দ অনেক বেশি। বছরভরই গোটা কলকাতা ও আশপাশ শব্দদূষণে আক্রান্ত। কোনও বিশেষ উৎসবের মরসুম বলে নয়, শুধু শব্দবাজি বা মাইকের কারণেও নয়। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলছেন, ‘‘কলকাতা শহরে শব্দ খুব বেশি, বিশেষ করে দিনে তো বটেই।’’
শব্দদূষণের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে পরিবেশপ্রেমী ও পরিবেশকর্মীরা কাল, মঙ্গলবার শহর জুড়ে দিনভর কর্মসূচি নিয়েছেন। শব্দদূষণের বিরুদ্ধে প্রচার অভিযান আগেও হয়েছে। তবে ‘সবুজ মঞ্চের’ উদ্যোগে এ বার মানুষকে বোঝানো হচ্ছে, ‘না শোনারও আইনি অধিকার’ তাঁদের আছে। পরিবেশ সুরক্ষা আইন বা শব্দ বিধি নিজে মানা যথেষ্ট নয়, সেই আইন যাতে অন্য কেউ না ভাঙে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ, মানুষকে সক্রিয় হয়ে শব্দদূষণ ভাঙার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ বা প্রতিবাদ করতে সচেতন করা হচ্ছে। যা এই প্রথম। শব্দদূষণের বিরুদ্ধে প্রশাসন যাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়, সে জন্য স্বাক্ষরও সংগ্রহ করা হবে, যা পরে পাঠানো হবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। শব্দদূষণের বিরুদ্ধে নানাবিধ তথ্য, স্লোগান, উক্তি ও দাবিদাওয়া নিয়ে একটি ট্যাবলো ঘুরবে শহর জুড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কলকাতাকে সামগ্রিক ভাবে বাণিজ্যিক এলাকা ধরা হলে এর সহনীয় শব্দমাত্রা থাকা উচিত ৬৫ ডেসিবেল। অথচ বিভিন্ন পরীক্ষা ও সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, কাজের সময়ে শহরের বড় রাস্তার ধারে শব্দমাত্রা ৮০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে যায়। বহু গলিপথে শব্দমাত্রা থাকে ৭০ থেকে ৭৫ ডেসিবেল। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রর বক্তব্য, সাধারণ যানবাহনের হর্ন তো আছেই। এমনকী, অ্যাম্বুল্যান্সও বিকট শব্দে হুটার বাজিয়ে চলে। ফলে তার ভিতরে থাকা রোগীও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘শব্দ বিধি অনুযায়ী, নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ১০ ডেসিবেল বেশি শব্দ মানেই আদালতগ্রাহ্য অপরাধ। অথচ এই ব্যবস্থা কার্যকর করা হয় না।’’
‘সবুজ মঞ্চের’ পক্ষে নব দত্ত বলছেন, ‘‘শব্দ বিধি ও আদালতের বিভিন্ন রায়কে পুলিশ-প্রশাসন ও পর্ষদ যাতে কঠোর ভাবে প্রয়োগ করে, সেটাই আমাদের দাবি। শব্দ বিধি ভাঙলে পুলিশ যদি ব্যবস্থা না নেয়, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করতে হবে।’’
এই সব দাবি নিয়ে কাল সকাল ১০টায় কর্মসূচি শুরু হচ্ছে সল্টলেকে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদর দফতর ‘পরিবেশ ভবন’-এর সামনে। ট্যাবলোটি সল্টলেক, লেক টাউন, শ্যামবাজার, কলেজ স্ট্রিট, বি বা দী বাগ, প্রেস ক্লাব হয়ে হাজরা পর্যন্ত যাবে। প্রতিটি জায়গায় পথসভা এবং প্রচারপত্র, পুস্তিকা বিলি করা হবে। কর্মসূচি চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy