Advertisement
০৩ অক্টোবর ২০২৪

আগুন সর্বোচ্চ বাড়িতে, ঠুঁটো দমকল বাহিনী

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এলেও কার্যত কিছু করার ছিল না। কারণ আগুন জ্বলছিল অন্তত ৪০ তলা থেকে শুরু করে তার উপরের অংশে।

অঘটন: কলকাতার সর্বোচ্চ নির্মীয়মাণ বহুতল ‘দ্য ফর্টিটু’-তে আগুন। চৌরঙ্গিতে। নিজস্ব চিত্র।

অঘটন: কলকাতার সর্বোচ্চ নির্মীয়মাণ বহুতল ‘দ্য ফর্টিটু’-তে আগুন। চৌরঙ্গিতে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৪২
Share: Save:

মহানগরের সর্বোচ্চ বহুতল। তার গা বেয়ে নেমে আসছে দাউদাউ আগুন। শনিবার বিকেল পৌনে ৫টা। ঘটনাস্থল, চৌরঙ্গি রোডে নির্মীয়মাণ ‘দ্য ফর্টিটু’ (দি ৪২)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এলেও কার্যত কিছু করার ছিল না। কারণ আগুন জ্বলছিল অন্তত ৪০ তলা থেকে শুরু করে তার উপরের অংশে। অত উঁচুতে আগুন নেভানোর পরিকাঠামোই নেই দমকলের। ‘দ্য ফর্টিটু’-র নির্মাণকর্মীরা নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দিয়ে দমকল আসার আগেই আগুন অনেকটা আয়ত্তে আনেন। দমকলকর্মীরা এসে সেই কাজেই হাত লাগিয়েছেন।

পুলিশ ও দমকল জানায়, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত মালমশলা যাতে ছিটকে বাইরে না-পড়ে, সেই জন্য বহুতলের কয়েকটি দিকে সবুজ চট ঝোলানো আছে। লিটল রাসেল স্ট্রিটের দিকে ৪৫ বা তার উপরে কোনও তলার বাইরে এসি মেশিনের ‘ডাক্ট’ বসানোর কাজ চলছিল। ওয়েল্ডিং করে ‘ডাক্ট’ বসাচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। দমকলের অধিকর্তা সমীর চৌধুরী বলেন, ‘‘বহুতলে নির্মাণকাজের সময়ে বাইরের দিকে (নিরাপত্তার জন্য) যে জাল বিছানো হয়, তাতে জ্বলন্ত ফুলকি এসে পড়লে আগুন লেগে যায়।’’ আগুন ছড়িয়ে পড়ে ওই বহুতলের বাইরে লম্বা করে ঝোলানো থাকা চটের কাপড়েও। সেই আগুন ক্রমে নিচের দিকে নামতে থাকে।

শেক্সপিয়র সরণি থানা এলাকার ওই বহুতলের ৬৫ তলার ছাদে উঁচু ও শক্তিশালী একটি ক্রেন বসানো রয়েছে। নির্মাণকাজে নিযুক্ত দক্ষ কর্মীরা ক্রেন থেকে ঝোলানো শক্ত জালের ঝুড়িতে চেপে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে ধাপে ধাপে নেমে চটের আগুন নেভাতে শুরু করেন। দমকল আসার আগেই ৫০ থেকে ৪০ তলা পর্যন্ত আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দমকলের ডিজি জগমোহন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। অফিসারদের সঙ্গে লিফটে চেপে উপরেও ওঠেন তিনি।

বহুতলে কর্মরত কর্মীরা জানান, চটের কাপড় দিয়ে যে যে তলা ঘিরে এসি-র ডাক্ট বসানোর কাজ চলছিল, তার প্রতিটিতেই পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা রয়েছে। ওই তলাগুলিতে কর্মরত শ্রমিকেরাও এ দিন পাইপ দিয়ে জল ছিটিয়ে আগুন আয়ত্তে এনেছেন। দমকল সূত্রের খবর, আধ ঘণ্টার মধ্যেই আগুন আয়ত্তে আসে।

এ দিন ঘটনাস্থলে যান কলকাতার মেয়র তথা দমকল মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘ঠিক কোন তলায় আগুন লাগে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। কেউ বলছেন ৪০, কেউ বলছেন ৪৫ আবার কারও বক্তব্য ৫২। ডিজি ৪৫ তলায় উঠেছেন, সব কিছু খতিয়ে দেখেছেন। রয়েছেন পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীরাও। ডিজি ৪৫ তলার উপরের কয়েকটি তলাতেও যাবেন। এই বহুতলটি এখনও ‘ফিটনেস’-এর শংসাপত্র পায়নি। বহুতলে কেউ বসবাসও শুরু করেননি।’’ কিন্তু ভবিষ্যতে সেই শংসাপত্র এলেও এই ধরনের বহুতলে বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে উদ্ধারকাজে রাজ্য প্রশাসন আদৌ সক্ষম কি না, এ দিনের ঘটনা সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

বহুতলের আগুন নেভানোর জন্য দমকলের তিনটি যন্ত্রচালিত মই (ল্যাডার) রয়েছে। তার মধ্যে সব চেয়ে বড়টি পৌঁছতে পারে ৭০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায়। দমকল অফিসারদের কথায়, ‘‘২৪-২৫ তলা পর্যন্ত।’’ তা-ও জায়গার অভাবে সেটিকে কলকাতার ফ্রি-স্কুল স্ট্রিটে দমকলের সদর দফতরের বদলে রাখা হয় বিধাননগরে। অনেকেরই বক্তব্য, আগুন নেভানোর পরিকাঠামোর এমন শোচনীয় অবস্থা সত্ত্বেও কেন ‘দ্য ফর্টিটু’-র মতো বহুতল প্রকল্পের অনুমতি দিচ্ছে প্রশাসন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE