Advertisement
E-Paper

মানিব্যাগ ফেলে আসা যাত্রীকে টাকা দিলেন ট্যাক্সিচালকই

পোস্তা পর্যন্ত পৌঁছে পকেটে হাত দিয়ে অরিজিৎ দেখলেন, মানিব্যাগ নেই! ট্যাক্সির ভাড়া দেবেন কী করে! জামশেদপুরে যাওয়ার কথা। ট্রেনের টিকিট তো অফিস কেটে দিয়েছে। কিন্তু, জামশেদপুর স্টেশন থেকে হোটেল? ঘাড় ঘুরিয়ে মুচকি হেসে ট্যাক্সিচালক যুবক অরিজিতের হাতে গুঁজে দিলেন ৩০০ টাকা!

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ০২:১৭
রামব্রিজ যাদব।

রামব্রিজ যাদব।

পোস্তা পর্যন্ত পৌঁছে পকেটে হাত দিয়ে অরিজিৎ দেখলেন, মানিব্যাগ নেই!

ট্যাক্সির ভাড়া দেবেন কী করে! জামশেদপুরে যাওয়ার কথা। ট্রেনের টিকিট তো অফিস কেটে দিয়েছে। কিন্তু, জামশেদপুর স্টেশন থেকে হোটেল?

ঘাড় ঘুরিয়ে মুচকি হেসে ট্যাক্সিচালক যুবক অরিজিতের হাতে গুঁজে দিলেন ৩০০ টাকা! বললেন, ‘‘নম্বর নিয়ে নিন। ফেরত দিয়ে দেবেন। খালি পকেট নিয়ে রাস্তায় বিপদে পড়ে যাবেন তো!’’

ট্যাক্সিতে গয়না-টাকার ব্যাগ ফেলে গেলে তা উজিয়ে গিয়ে যাত্রীকে ফেরত দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বিস্তর। সেই ট্যাক্সিচালকদের অনেককেই সংবর্ধনা, পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সম্মানিত করাও হয়েছে অনেককে। কিন্তু, কাদাপাড়ার বাসিন্দা ট্যাক্সিচালক রামব্রিজ যাদব যা করলেন, তা অভাবিতই ঠেকেছে সল্টলেকের আইএ ব্লকের অরিজিৎ ঘোষের কাছে।

গত শুক্রবারের ঘটনা। অফিসের কাজে অরিজিৎ জামশেদপুর যাচ্ছিলেন। সল্টলেকের ১৩ নম্বর ট্যাঙ্ক থেকে ট্যাক্সিতে ওঠেন তিনি। অরিজিতের কথায়, ‘‘পোস্তায় পৌঁছে স্ত্রীকে ফোন করে জানতে পারি, মানিব্যাগ বাড়িতেই রয়ে গিয়েছে।’’

গাড়ি চালাতে চালাতে যাত্রীর কথোপকথন কানে আসে রামব্রিজের। অরিজিৎ তাঁকে বলেন, ‘‘আপনি যদি আমাকে নামিয়ে বাড়িতে যান, আপনার ভাড়া দিয়ে দেবে।’’ রামব্রিজ পাল্টা জানতে চান, ‘‘আপনার কাছে তো টাকা নেই! আপনি ট্রেন ধরে যাবেন কী করে?’’ অপ্রস্তুত অরিজিৎ বলেন, ‘‘দেখি কী করা যায়!’’ রামব্রিজ বলেন, ‘‘আমার কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে যান।’’ হতভম্ব যাত্রীকে আরও অবাক করে চালক বলেন, ‘‘কী আছে! বাড়িতে বলে দেবেন, ভাড়ার সঙ্গে ওই টাকাটাও ফেরত দিতে। আমার মোবাইল নম্বর নিয়ে নিন।’’

রবিবার ফোনে রামব্রিজ বলেন, ‘‘কোনও মানুষ বিপদে পড়লে তাঁকে সাহায্য করাটাই তো মনুষ্যত্ব। কত মানুষ তো ঠকিয়ে চলে যায়। এই তো সে দিন খিদিরপুর থেকে বড়া মসজিদ পর্যন্ত গিয়ে যাত্রী বলল, ‘একটু দাঁড়ান। ভাড়া দিয়ে যাচ্ছি।’ সেই যাত্রী আর ফেরেননি। পাইকপাড়া থেকে এক যাত্রী খানিকটা গিয়ে বলেছিলেন, ‘ট্যাক্সি একটু সাইড করুন। মিষ্টি কিনব।’ সেই যাত্রীও হারিয়ে যান ভিড়ে। তা বলে মানুষের উপকার করা ছেড়ে দেব নাকি!’’

১০ বছর বয়সে বিহার থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। ২০ বছর ধরে এ শহরের রাস্তায় ট্যাক্সি চালাচ্ছেন ৪০ বছরের রামব্রিজ। আগে মালিকের ট্যাক্সি চালাতেন। এখন নিজেই গাড়ির মালিক। তিন ছেলে, তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার। আর আছে বন্ধুদের দল। শুক্রবার বন্ধুরা রামব্রিজকে বলেছিলেন, ‘‘যাত্রীকে যেচে ৩০০ টাকা দিয়ে দিলি! ফেরত না দিলে?’’ রামব্রিজের একই কথা, ‘‘না দিলে, না দেবে! কিন্তু, কাউকে বিপদে পড়তে দেখে চুপ করে থাকব কেন?’’

সে দিন বিকেল পর্যন্ত রামব্রিজকে না আসতে দেখে অরিজিতের স্ত্রী সঞ্চিতা ফোন করেন তাঁকে। সন্ধ্যায় সল্টলেকে তাঁর বাড়ি গিয়ে সেই ৩০০ টাকা আর সল্টলেক থেকে হাওড়ার ভাড়া ১৮০ টাকা, মোট ৪৮০ টাকা নিয়ে আসেন রামব্রিজ। তাঁকে মিষ্টিমুখ করাতে ভোলেননি অরিজিতের বাবা অরিন্দমবাবু। আর অরিজিতের কথায়, ‘‘রামব্রিজের দেওয়া টাকায় খাবার কিনেছি। জামশেদপুরে অটো নিয়ে হোটেল পৌঁছতেও ওই টাকা লেগেছে।’’

Taxi Driver Rambridge Yadav
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy