চলতি বছর থেকে পড়ুয়াদের মূল্যায়নের জন্য চালু হয়েছে হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড। শুধু পড়াশোনায় নয়, পড়ুয়ার সামগ্রিক মানোন্নয়ন কেমন হচ্ছে, তার প্রতিফলন ঘটবে এই হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ডে। কিন্তু শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, কী ভাবে এই হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড তৈরি করা হবে, তা নিয়ে অন্ধকারে বহু স্কুলের শিক্ষক। তাঁদের দাবি, এই নিয়ে নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন করতে হবে শিক্ষা দফতরকে। কারণ, হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড তৈরি করতে শিক্ষকেরা নানা অসুবিধায় পড়ছেন।
চলতি বছরে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এই নতুন ধরনের মূল্যায়ন, হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড চালু করছে শিক্ষা দফতর। ওই রিপোর্ট কার্ডে তিনটি পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নে থাকছে পড়ুয়ারা বিষয়-ভিত্তিক কত নম্বর পেল। পাশাপাশি থাকছে, সারা বছর ধরে ওই পড়ুয়ার বৌদ্ধিক বিকাশ কেমন ও স্কুলে পড়াশোনায় কতটা মনোযোগী সে। অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে মেশার ক্ষমতা, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, স্কুলে সে নিয়মিত আসে কিনা, পড়াশোনা ছাড়াও কোন বিষয়ে উৎসাহ আছে পড়ুয়ার, খেলাধুলো করে কিনা— এ সবই ওই হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ডে প্রতিফলিত হবে। এই কার্ড তৈরি করবেন ক্লাস টিচার।
এই কার্ডে এক জন পড়ুয়ার রেকর্ড থাকবে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। অর্থাৎ, কোনও পড়ুয়ার ওই হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড দেখে শুধু এক বছরের নয়, তার সামগ্রিক আট বছরের মূল্যায়ন পাওয়া যাবে। যে পড়ুয়ার পঞ্চম শ্রেণি থেকে হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড তৈরি হবে, তার পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মূল্যায়ন ওই রিপোর্ট কার্ডে পাওয়া যাবে।
শিক্ষকদের মতে, হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড খুবই ভাল উদ্যোগ। কিন্তু এই মূল্যায়ন একদমই নতুন। ফলে, কী ভাবে এই কার্ড তৈরি করতে হবে, তার জন্য শিক্ষকদের কর্মশালা প্রয়োজন। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘এত বড় একটা প্রক্রিয়া কার্যকর হয়ে গেল, কিন্তু সব শিক্ষককে নিয়ে কোনও কর্মশালা হল না! কেবলমাত্র স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অথচ, সব শিক্ষকের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। পাশাপাশি প্রয়োজন, স্কুলগুলিতে উপযুক্ত পরিকাঠামো এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক। না হলে খাতায়-কলমেই থেকে যাবে এই রিপোর্ট কার্ড। কার্ডে প্রকৃত মূল্য়ায়ন প্রতিফলিত হবে না।’’
তবে শিক্ষা দফতরের দাবি, বেশ কিছু স্কুলে হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড তৈরির কর্মশালা শুরু হয়েছে। যোধপুর পার্ক বয়েজ় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বলেন, ‘‘বছরের শুরুতে এই হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ডে মূল্যায়ন করা নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। সম্প্রতি আমাদের স্কুলে খুব ভাল কর্মশালা হল। সেখানে শুধু আমাদের স্কুলের শিক্ষকেরাই নন, আশপাশের ১৫টি স্কুলের শিক্ষকেরা অংশ নেন। কী ভাবে মূল্যায়ন করা হবে, তা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা তৈরি হয়েছে। এই কর্মশালার দরকার ছিল।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)