Advertisement
E-Paper

প্রেমিকা হাতছাড়া, বদলা নিতে বোমা কিনল কিশোর

শ’পাঁচেক টাকায় দু’টি বোমা আর একটা ভোজালি জোগাড় করেছিল বছর ষোলোর ছেলেটি। ছক কষেছিল, বান্ধবীর নতুন প্রেমিককে খুনের। তবে গোল বাঁধল কাঁচা হাতে তাজা বোমা পরীক্ষা করতে গিয়েই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৫ ০০:৪৩

শ’পাঁচেক টাকায় দু’টি বোমা আর একটা ভোজালি জোগাড় করেছিল বছর ষোলোর ছেলেটি। ছক কষেছিল, বান্ধবীর নতুন প্রেমিককে খুনের। তবে গোল বাঁধল কাঁচা হাতে তাজা বোমা পরীক্ষা করতে গিয়েই।

দুষ্কর্মের দায়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে গিয়েছে ‘অপেশাদার’ ওই ‘কিশোর-দুষ্কৃতী’।

শ্যামনগরের একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ওই কিশোর। ক্লাসেরই এক সহপাঠিনীর সঙ্গে কিছু দিন ধরেই তার ‘সম্পর্ক’ গড়ে উঠেছিল। পুলিশের জেরায় সে তা কবুলও করেছে। ওই ছাত্রের দাবি, ইদানীং সেই প্রেমের পথে বাধা হয়ে উঠেছিল অন্য স্কুলের দশম শ্রেণির আর এক ছাত্র। বান্ধবী অপেক্ষাকৃত বয়সে বড় সেই কিশোরের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে বুঝতে পেরেই ক্ষোভ জমছিল তার। সেই ‘বাধা’ দূর করতেই বোমা-ভোজালি জোগাড় করেছিল সে।

পুলিশি জেরায় প্রথমে সে ভাঙতে চায়নি। পরে অবশ্য সব দোষই কবুল করে নিয়েছে সে বলে পুলিশ জানিয়েছে। কিন্তু প্রেমের অন্তরায় হয়ে ওঠা প্রতিপক্ষকে ‘খুন’ করার সামগ্রী জোগাড় করল কী ভাবে? সপ্তম শ্রেণির ছাত্রটি পুলিশকে জানায়, কয়েক জন বন্ধুর সাহায্যে ইছাপুরের জনৈক বিকাশের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তার। তার কাছ থেকেই দু’দিন আগে ৫০০ টাকা দিয়ে বোমা আর ভোজালি কিনেছিল সে। এ ব্যাপারে জনা কয়েক মদতদাকাও পেয়ে গিয়েছিল সে বলে পুলিশকে জানিয়েছে ওই কিশোর। তাদের এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ।

তবে, বোমা কেনার পরে তার মনে হয়েছিল—‘ঠকিয়ে’ দেয়নি তো? মঙ্গলবার জগদ্দল স্টেশনের কাছে একটি ফাঁকা মাঠই তাই ওই হয়ে উঠেছিল তার ‘টেস্টিং গ্রাউন্ড।’ ভরদুপুরে মাঠে বোমাটি ছুড়তেই বিকট শব্দে আশপাশের লোকজন চলে আসেন। তাঁরা দেখেন, তিন কিশোর ছুটে পালাচ্ছে। বাসিন্দারা তাড়া করেন। এক জন অন্য দিকে পালায়। দুই কিশোর ছুটতে ছুটতে জগদ্দল স্টেশনে পৌঁছে উঠে পড়ে ট্রেনে। স্টেশনের লোকজনই ধরে ফেলে এক জনকে। খবর দেওয়া হয় জগদ্দল থানায়। মাঠের ধার থেকে ওই ছাত্রের স্কুলব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। তা থেকে আরও একটি বোমা আর ভোজালিও উদ্ধার করে পুলিশ। জেরায় ভেঙে পড় ওই কিশোর। জানিয়ে দেয় তার পরিকল্পনা।

পুলিশ জানায় ওই ছাত্রের বাবা পেশায় রং-মিস্ত্রি। শ্যামনগরে দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন। স্ত্রী মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। ছেলের ‘কীর্তি’ শোনার পরে বাবা বলছেন, ‘‘কয়েক দিন ধরেই দেখছি, মনমরা হয়ে থাকছে ছেলে।’’ তিনি জানান, সামান্য আয়ে সংসার চলে। তবু ওদের লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টাটা করে চলেছেন তিনি। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘সেই চেষ্টার এই পরিণতি!’’ ছেলে কোথা থেকে ৫০০ টাকা পেল, তা-ও ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।

বুধবার ওই ছাত্রকে জুভেনাইল আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার দুই সঙ্গীর খোঁজ চলছে। ছেলেটির সহপাঠিনীকেও জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কিন্তু সহপাঠিনী মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এমন প্রতিহিংসা জাগল?

মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘তথ্য -প্রযুক্তির দৌলতে যে কোনও খবরই এখন চোখের সামনে উঠে আসছে অনায়াসে। খুন-রক্ত-ধর্ষণ এ সবই খুব পরিচিত এবং আটপৌরে শব্দ হয়ে গিয়েছে অল্প বয়সীদের কাছে।’’ তিনি জানান, খুন-ধর্ষণের মতো কাজও খুব সহজেই করা যায় বলেও মনে করছে হালের কিশোর-কিশোরীরা। তারই ফলে ওই পরিকল্পনা। প্রবুদ্ধবাবু বলেন, ‘‘এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা থেকেই পাল্টা প্রতিহিংসার বোধ জন্মাচ্ছে। এর জন্য ওই বালক-কিশোরদের কাউন্সেলিং করা প্রয়োজন।’’

teen arrested triangular affair ex lover revenge triangular love case youth bomb love
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy