সল্টলেকের অভিজাত এলাকায় সোমার নেল পার্লারে পৌঁছে রহস্যের স্বাদ পেল আনন্দবাজার অনলাইন। গ্রাফিক— সনৎ সিংহ
অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের মতো রাজনৈতিক নেতার ‘ঘনিষ্ঠ’ নন, গোপাল দলপতির প্রাক্তন স্ত্রী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো টলিপাড়াতে যাতায়াতও নেই, তবুও এ যাবৎ অখ্যাত এক সোমা চক্রবর্তীর নাম হঠাৎই এঁদের সঙ্গে একই নিশ্বাসে উচ্চারিত হচ্ছে! কারণ রহস্যে বাকি দু’জনকেই অনয়াসে টক্কর দিতে পারেন সোমা! সল্টলেকের অভিজাত এলাকায় সোমার নেল পার্লারে পৌঁছে সেই রহস্য আরও ঘনিয়ে উঠতে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।
কে এই সোমা? ইডি সম্প্রতি জেনেছে নিয়োগ মামলায় অভিযুক্ত হুগলির তৃণমূলের যুবনেতা কুন্তলের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক ছিল সোমার। কুন্তলের অ্যাকাউন্ট থেকে অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা পাঠানো হয় সোমার অ্যাকাউন্টে। এক বার নয়, মাঝে মধ্যেই জমা পড়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। অবশ্য তার পরও কুন্তলকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সোমার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। কেন, তা স্পষ্ট নয়। অন্য দিকে সোমাও নিজেকে এখনও পর্যন্ত আড়ালে রেখেছেন। নিয়োগ মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। কিন্তু সশরীরে ইডির দফতরে হাজির হয়েও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকেছেন তিনি। অটোতে উঠে নিমেষে চোখের আড়ালে চলে গিয়েছেন। অর্পিতা বা হৈমন্তীর মতো তাঁর গল্প হঠাৎ হাট হয়ে যায়নি সর্বসমক্ষে। বরং এখনও রহস্যেই মোড়া রয়েছে সোমার পরিচয়। সোমবার আচমকাই সেই ‘রহস্যময়ী’র একটি নেল পার্লারের খোঁজ পাওয়া গেল। আর সেই পার্লারের সূত্র ধরে ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করল তাঁর অজানা জীবনের একটা দিক।
সল্টলেকের অভিজাত মলের নজরকাড়া জায়গায় সোমার নেল পার্লার। নাম, নেল লাউঞ্জ অ্যাট সিসি। নখের সজ্জা ছাড়াও সেখানে চোখের পাতা সাজিয়ে দেওয়া হয়। সংস্থার একটি বিজ্ঞাপনে এক টলিউড অভিনেত্রীকেও দেখা যায় সোমার নেল লাউঞ্জে বসে নখ সাজাতে। আকারে খুব বড় নয়, তবে বিলাসবহুল পরিষেবায় নাকি বিন্দুমাত্র কমতি নেই। গ্রাহকেরা নখসজ্জার পাশাপাশি ভিআইপি যত্নআত্তি পান এখানে। এমনই জানিয়েছিলেন সোমা, এক পুরনো সাক্ষাৎকারে। এক সংবাদপত্রের শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপনে ফলাও করে এই পরিষেবার কথা ছাপিয়েছিলেন সোমা নিজেই। অর্থের বিনিময়ে ছাপানো ওই বিশেষ বিজ্ঞাপনের সঙ্গেই প্রকাশিত হয়েছিল সোমার ওই সাক্ষাৎকার। যেখানে নিজের সাফল্যের নেপথ্যে তাঁর বিলাসবহুল যত্নআত্তির কথাই বার বার জানিয়েছেন সোমা। বলেছেন, শ্যাম্পেনের গ্লাস হাতে নিয়ে নখের যত্ন পেতে চাইলে এখানে আসুন! যদিও ইন্টারনেটে সোমার পার্লারের সমালোচনায় দেখা যাচ্ছে ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। গ্রাহকেরা আকছার তাঁর পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রকাশ করেছেন অসন্তোষও।
সাফল্যের নেপথ্যে তাঁর পেশাগত দক্ষতার কথাও উল্লেখ করেছিলেন সোমা। বলেছিলেন, বিভিন্ন দেশ ঘুরে নখসজ্জার সেরা শিক্ষাটি অর্জন করেছেন তিনি। সেটাও সাফল্যের কারণ। যদিও সোমবার যখন সেই পার্লারের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে আনন্দবাজার অনলাইন। তাঁরা সাফ জানিয়েছেন, সোমা কখনও এই পার্লারে আসেনই না। চার পাঁচ বছর ধরে সোমার পার্লারে কাজ করছেন এক কর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘উনি কখনওই আসেননি। মাসে দু’-তিনবার ফোনেই পার্লারের হিসাবনিকাশ বুঝে নেন। কিন্তু তা হলে সোমার পেশাগত দক্ষতা কী ভাবে পান ক্রেতারা। কর্মীদের নিয়োগই বা করা হল কী করে? এই সব প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা।
সোমার পুরনো বাড়িতেও পৌঁছেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। রিজেন্ট পার্কের সেই বাড়ি একটি সাধারণ ফ্ল্যাট বাড়ি। এই বাড়িতে থাকেন সোমার খুড়তুতো ভাই এবং তাঁর পরিবার। একসময় নাকি সোমা তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে এখানেই থাকতেন। খুড়তুতো ভাই অবশ্য জানালেন, সোমারা চলেও গিয়েছেন অনেক দিন হল। তবে তার আগে জেঠতুতো দিদির জীবন যাপনে হঠাৎই বড় পরিবর্তন লক্ষ করেছিলেন তাঁরা। পোশাক-আশাকে তো বটেই গাড়ি-বাড়ির ঠাটেও ফুটে বের হচ্ছিল সেই বদল। সোমার ভাই বলেই ফেললেন, ‘‘আমাদের এখনও এই অবস্থা, তবে দিদিদের হালচাল বদলে গেছে অনেক!’’ বছর ৩৫ এর যুবক। দিদির বয়স কত প্রশ্ন করাতে বললেন, ‘‘আমার থেকে অনেক বড়।’’ তবে কত বড়? বলেননি তিনিও। সম্ভবত তাঁর পরিবারও সোমার বিষয়ে সঠিক জানেন না। বা জানলেও বলতে চান না। তবে আসল ঘটনা যা-ই হোক সোমা তাঁর নামের অর্থ চাঁদের আবছা আলোর মতোই আলো আঁধারিতে রয়ে গিয়েছেন এখনও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy