Advertisement
E-Paper

৩৭টি কেস, তবু ছুটছিল বেপরোয়া বাস

অনেকে বলছেন, পুলিশ থেকে পরিবহণ দফতর সকলেই ‘ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকা’ পালন করায় এটা সম্ভব হচ্ছে। যদিও রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের টনক নড়েছে ওই বাস দুর্ঘটনায় এক জনের প্রাণহানির পরে!

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৩৩
রেষারেষির জেরে দুর্ঘটনায় পড়া সেই বাস। ফাইল চিত্র

রেষারেষির জেরে দুর্ঘটনায় পড়া সেই বাস। ফাইল চিত্র

হাওড়া সেতুতে রেষারেষি করে অন্য বাসে ধাক্কা মারা বেপরোয়া বাসটির বিরুদ্ধে আগে থেকেই পুলিশের খাতায় অভিযোগ ছিল ৩৭টি। সব ক’টিই ট্র্যাফিক আইন ভাঙার জন্য। এক জনের মৃত্যু এবং বড়সড় বিপর্যয় ঘটিয়ে শনিবার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮-এ। রবিবার রাত পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চম্পট দেওয়া ওই বাসের চালক। যা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, এতগুলি অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এই ধরনের বাস দিনের পর দিন শহরে চলে কী করে?

অনেকে বলছেন, পুলিশ থেকে পরিবহণ দফতর সকলেই ‘ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকা’ পালন করায় এটা সম্ভব হচ্ছে। যদিও রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের টনক নড়েছে ওই বাস দুর্ঘটনায় এক জনের প্রাণহানির পরে! কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল (ট্র্যাফিক) অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার সময়ে আমি ইডেনে ডিউটিতে ছিলাম। পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ রাজ্য পরিবহণ দফতরের সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের আবার বক্তব্য, ‘‘যে বাসগুলির বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এ বার ব্যবস্থা নিতেই হবে। কী ভাবে এই ধরনের বাস রাস্তায় চলছে, তার একটা তদন্ত করতে হবে।’’ তিনি এ-ও জানান, শনিবারের ঘটনার পরে বিভিন্ন রুটের বাসগুলি সম্পর্কে পুলিশের কাছে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেছে পরিবহণ দফতর। এর পরেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাওড়া সেতুর দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটি বেসরকারি ৭৩ নম্বর রুটের। পুলিশ জানায়, ওই বাসের বিরুদ্ধে ট্র্যাফিক বিধি লঙ্ঘন করার জন্য ৩৭টি অভিযোগ করা হয়েছিল। তার মধ্যে ২০টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ভিত্তিতে গাড়ির মালিকের মোবাইলে যাওয়া ‘সাইটেশন কেস’। বাকি ১৭টি করেছেন কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক সার্জেন্টরা, বিভিন্ন জায়গায় বাসটিকে পাকড়াও করে। জানা গিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল, মে এবং জুন মাসে একাধিক বার বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ওই বাসের চালকের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে মামলা হয়েছিল মোটরযান আইনের ১৮৪ নম্বর ধারায়। নিয়ম মতো এই ধরনের মামলা হলে প্রতি ক্ষেত্রে চালককে এক হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হয়। সেই জরিমানা মেটানো হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

তার পরেও ওই চালকের হুঁশ ফেরেনি। দুর্ঘটনায় আহত, ওই বাসের এক যাত্রী তনুশ্রী ঘোষ বলেন, ‘‘হাওড়া থেকেই চালক তীব্র গতিতে বাসটি চালাচ্ছিলেন। বহু বার বারণ করা সত্ত্বেও শোনেননি। তারই খেসারত দিতে হল আমাদের।’’ রবিবার সকালে হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে তনুশ্রী হুগলির উত্তরপাড়ার বাড়িতে শয্যাশায়ী।

তবু বাসের দোষ দেখছেন না জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট্‌স-এর সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ ইচ্ছে করে রাস্তার ক্যামেরার ছবি দেখে সাইটেশন কেস দেয়। ওই বাসকেও এ ভাবেই এত কেস দেওয়া হয়েছিল। আমরা ইতিমধ্যেই এ হেন পুলিশি জুলুমের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি।’’ অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘শনিবারের ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। এক শ্রেণির বাসচালকদের সচেতনতার অভাবেই এমন ঘটনা ঘটছে। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিক।’’

Bus Accident Kolkata Traffic Police Howrah Bridge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy