Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Coronavirus

সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, আতঙ্ক আলিপুরের দুই আদালতে

সম্প্রতি জেলা বিচারকের এক নির্দেশের পরে ওই দুই আদালতে সশরীরে শুনানি শুরু হয়েছিল। কিন্তু আলিপুর চত্বর কন্টেনমেন্ট জ়োন হওয়ার পরে গত দু’সপ্তাহ তা বন্ধ রয়েছে।

অকেজো: বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে আলিপুর ফৌজদারি আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসের জীবাণুনাশক টানেল। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

অকেজো: বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে আলিপুর ফৌজদারি আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসের জীবাণুনাশক টানেল। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২০ ০৫:৪৯
Share: Save:

আইনজীবী, বিচারক ও আদালতের কর্মী মিলিয়ে গত তিন মাসে সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ৪০ জন। মারা গিয়েছেন কয়েক জন আইনজীবী। এই হারে সংক্রমণ ছড়াতে থাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে আলিপুর দায়রা ও ফৌজদারি আদালতে।

সম্প্রতি জেলা বিচারকের এক নির্দেশের পরে ওই দুই আদালতে সশরীরে শুনানি শুরু হয়েছিল। কিন্তু আলিপুর চত্বর কন্টেনমেন্ট জ়োন হওয়ার পরে গত দু’সপ্তাহ তা বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে দিন কয়েক আগে জেলা বিচারকের দফতরের এক কর্মী করোনায় আক্রান্ত হন বলে খবর। তার পর থেকে দফতরের অন্য কর্মীদের বেশির ভাগই গৃহ-পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।

আইনজীবীদের একাংশের অভিযোগ, সংক্রমণ নানা ভাবে আদালত চত্বরে ছড়াচ্ছে। ফৌজদারি আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসের পিছনে একটি ছোট বসতি রয়েছে। প্রায় জনা পঞ্চাশেক মানুষ সেখানে থাকেন। তাঁদের কয়েক জন সম্প্রতি আক্রান্ত হয়েছেন। আইনজীবীদের অনুমান, তাঁদের থেকেও সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারে।

আদালত সূত্রের খবর, সশরীরে শুনানিতে অংশগ্রহণে সম্মতি দেওয়ার সময়ে ফৌজদারি আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ও অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসে জীবাণুনাশক টানেল বসানোর জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসের সামনে সেই টানেল বসানোও হয়। কিন্তু, কয়েক দিন যেতে-না-যেতেই রাসায়নিকের অভাবে তা বিকল হয়ে গিয়েছে।

ফৌজদারি আদালতে মুখ্য বিচারবিভাগীয় এবং অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসে সবচেয়ে বেশি মামলার শুনানি হয়। আইনজীবী, মক্কেল, আদালতের কর্মী ও পুলিশ মিলিয়ে দিনে অন্তত আড়াই-তিন হাজার লোক ওই দুই এজলাসে উপস্থিত থাকেন। তাঁরা আসছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে। আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, মুখে মাস্ক থাকলেও তাঁরা কতটা সংক্রমণমুক্ত, সেই সংশয় থেকেই যাচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক সশরীরে শুনানি চলার পরে ফৌজদারি আদালতের সাত জন আইনজীবী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সশরীরে শুনানিতে অংশগ্রহণে যথেষ্ট ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে বলেই অভিমত আইনজীবীদের।

আলিপুর আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরাও বলছেন, আদালতের কর্মীরা অধিকাংশই বিভিন্ন জেলায় থাকেন। তাঁরা অফিসে আসছিলেন গণপরিবহণের মাধ্যমে। ফলে তাঁরা আদতে কতটা সংক্রমণমুক্ত হয়ে আসছেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য তথা কলকাতা পুরসভার বিদায়ী মেয়র পারিষদ বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদালত চত্বরে বসতি এলাকায় সংক্রমণের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসে জীবাণুনাশক টানেলটি দ্রুত চালু করার চেষ্টা হচ্ছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে বার অ্যাসোসিয়েশনে আলোচনা করা হবে।’’

আরও পড়ুন: নিয়ম উড়িয়েই পথে বেরোচ্ছেন আক্রান্তের পরিজনেরা

দু’সপ্তাহ বন্ধ থাকার পরে আজ, সোমবার থেকে ফৌজদারি ও দায়রা আদালতে সশরীরে শুনানি ফের চালু হওয়ার কথা। কিন্তু সংক্রমণ বাঁচিয়ে তাঁরা কী ভাবে শুনানিতে অংশ নেবেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন আইনজীবীরা। আলিপুর আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংক্রমণের জন্য কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি বন্ধ রয়েছে। আপাতত কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলার সশরীরে শুনানি হবে বলে জেলা বিচারকের দফতর থেকে জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Covid-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE