Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সন্তানদের বেচেই কি এসেছিল বাইক, গ্যাস

পুলিশ সূত্রের খবর, প্রায় রোজই বিকেলের দিকে লালবাজার থেকে ঝর্না-সঞ্জীব এবং গ্রেফতার হওয়া বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হচ্ছে। দম্পতির মুখ থেকে বিক্রি হওয়া বাচ্চার সংখ্যা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

ধৃত ঝর্না দাস ও সঞ্জীব দাস। ফাইল চিত্র

ধৃত ঝর্না দাস ও সঞ্জীব দাস। ফাইল চিত্র

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭ ০২:২২
Share: Save:

প্রথম বার যখন সদ্যোজাত মেয়ে মারা গিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন, তার দিন কয়েকের মধ্যে ঝর্নার বাড়িতে রান্নার গ্যাসের সংযোগ এসেছিল। দ্বিতীয় বার ‘পেটে জল জমেছে’ জানিয়ে যখন ‘জল বার করতে’ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তার পরে তাঁদের বাড়িতে নতুন বাইক ঢুকেছিল। এ ভাবেই এক-এক বার এক-একটি ‘শখ পূরণ’ করেছেন দাস দম্পতি। এর বেশির ভাগটাই সন্তান বিক্রির টাকায় হয়েছে বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তাঁদের আত্মীয়েরা।

আর এতেই তাজ্জব বনে যাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। তাঁদেরও প্রশ্ন, কী ভাবে নিজেদের সন্তানদের একের পর এক বিক্রি করে দেওয়া সম্ভব? আর কী ভাবেই বা সম্ভব তার পরেও এমন নির্বিকার থাকা?

পুলিশ সূত্রের খবর, প্রায় রোজই বিকেলের দিকে লালবাজার থেকে ঝর্না-সঞ্জীব এবং গ্রেফতার হওয়া বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হচ্ছে। দম্পতির মুখ থেকে বিক্রি হওয়া বাচ্চার সংখ্যা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তাঁদের বক্তব্য, এক বারও বিক্রি হওয়া ছেলেমেয়েরা কেমন আছে, তা জানতে চাননি ওই বাবা-মা। এমনকী, হোমে থাকা দুই ছেলে তাঁদের অনুপস্থিতিতে কেমন আছে, সেই প্রশ্নও করেননি। মঙ্গলবার পুলিশ ঝর্নার জা, শাশুড়ি এবং পরিবারের আরও কয়েক জনকে জেরা করে। তাঁদের কাছ থেকেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

প্রশ্ন উঠেছে, একের পর এক সন্তান বিক্রি করার পরেও বাবা-মায়ের পক্ষে এমন নির্লিপ্ত থাকা কি কোনও গুরুতর মানসিক ব্যাধি? মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব মনে করেন, সমস্যাটা মানসিক নয়, বরং সামাজিক। তিনি বলেন, ‘‘সামাজিক কোনও প্রতিবন্ধকতাই হয়তো এ ক্ষেত্রে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। অনেক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার এখনও কন্যাসন্তানকে স্বাভাবিক ভাবে স্বীকার করতে পারে না। ফলে মেয়ে অন্য পরিবারে গেলে ভাল থাকবে, এই চিন্তার পাশাপাশি হাতে কিছু টাকা আসার চিন্তাও
কাজ করে।’’ এই ধরনের ঘটনা খুব বেশি সামনে না এলেও চোরাগোপ্তা এমন অনেক কিছুই ঘটে বলে জানিয়েছেন মনোবিদেরা।

গত ২ জুন মানিকতলার ওই দম্পতির এক আত্মীয় পুলিশের কাছে বাচ্চা বিক্রির অভিযোগ দায়ের করার পরেই পুলিশ তদন্তে নামে। প্রথমে মালদহে আড়াই মাসের শিশুপুত্রের খোঁজ মিললে তাকে উদ্ধারের পাশাপাশি সেই দম্পতিকে আটক করে কলকাতায় আনা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। পরে ৪ জুন বড়তলা থানার দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটের এক যৌনকর্মীর বাড়ি থেকে দেড় বছরের এক শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ওই যৌনকর্মী তরুণীকেও। জেরায় ওই যৌনকর্মী জানান, দেবজিৎ শেঠ নামে এক যুবক তাঁর কাছে ওই শিশুটিকে এনেছেন। তবে অভিযুক্ত মা ঝর্নার দাবি, তিনি তাঁর কন্যাসন্তানকে রত্না নামে এক মহিলার কাছে দিয়েছিলেন। সেই মহিলা যে মেয়েটিকে সোনাগাছির মতো জায়গায় বিক্রি করেছেন, তা তিনি জানতেনই না!

এ দিন সোনাগাছির বাসিন্দা ওই তরুণীর ঠিকানায় গিয়ে জানা গেল, তিনি আপাতত পুলিশি হেফাজতে রয়ে‌ছেন। পুলিশ জানিয়েছে, আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত তাঁকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তাঁর ভাড়া নেওয়া একতলার ঘরটি বন্ধই পড়ে রয়েছে। তবে ওই তরুণীর এক দিদির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁর বোন কন্যাসন্তানটিকে ‘দত্তক’ নিয়েছিলেন। কিন্তু বছর তেইশের তরুণী হঠাৎ করে কেন কন্যাসন্তান দত্তক নিলেন, সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Parents Money Child Trafficking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE