সোমবার গভীর রাতের অতি বর্ষণের পরে কেটেছে প্রায় দু’দিন। অথচ, বুধবার বিকেল পর্যন্তও বালিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ছিল জলবন্দি। বালিগঞ্জের অনিল মৈত্র রোড, কর্নফিল্ড রোড, ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্স, বালিগঞ্জ প্লেসে ঘুরে দেখা গেল, রাস্তার জমা জলের উপর দিয়ে গাড়ি গেলে ঢেউ উঠছে। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আশপাশের এলাকায় যখন জল নেমে গিয়েছে, তখনও তাঁদের এলাকা জলমগ্ন। এই পরিস্থিতি ফিরিয়ে দিচ্ছে তাঁদের আমপানের স্মৃতি।
অনিল মৈত্র রোড ধরে এগোতেই জমা জলের গভীরতা বাড়ছিল। আশপাশের দোকান, রেস্তরাঁর ভিতরে গোড়ালি সমান জল জমে। রাস্তায় সেই গভীরতাপ্রায় হাঁটু সমান। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ। একটি রেশন দোকানের সামনে বসে রাজেন শূর নামে এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘আজ দুপুরে সাহস করে দোকান খুলে দেখি, শোকেসের উচ্চতায় জল উঠেছিল। প্রচুর জিনিস নষ্ট হয়েছে।’’ পাশের একটি ওষুধের দোকানের কর্মী ইন্দ্রজিৎ সাহু বলেন, ‘‘জলের তোড়ে দোকানের কাঠের কাউন্টার পিছিয়ে গিয়েছে। দোকানের নীচের তাকের সমস্ত ওষুধ নষ্ট হয়েছে।’’
ওই রাস্তার বাঁ দিকে মেয়েদের সরকারি আইটিআই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেটি দেখিয়ে স্থানীয় কয়েক জন জানান, আপাতত তাঁদের ঠিকানা ওই কেন্দ্র। কারণ, ওই বাসিন্দাদের বাড়ির একতলায় এতটাই জল ঢুকেছে যে, থাকা যাচ্ছে না। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বাড়িতে থাকব কী করে? পানীয় জল নেই। শৌচাগারেও জল নেই। দু’দিন পরেও কেন ঘরের জল নামছে না?’’
অনিল মৈত্র রোড এবং বালিগঞ্জ প্লেসের সংযোগস্থলের একটি আবাসনের বাসিন্দাশুভময় বসু বেরিয়েছিলেন পানীয় জল কিনতে। তাঁর আবাসনের সিঁড়িতে তখনও হাঁটু সমান জল জমে। সিঁড়ির নীচে রাখা তিনটি মোটরবাইক দেখিয়ে শুভময় বলেন, ‘‘এই বাইকগুলো জলের নীচে চলে গিয়েছিল। আজ সকালথেকে কিছুটা জল নেমেছে। তার মধ্যে বিদ্যুৎ নেই। বাড়ির প্রবীণেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’’
বালিগঞ্জ প্লেসের রাস্তায় দেখা মিলল আর এক বাসিন্দা গৌরব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। গৌরব বলেন, ‘‘আমার বাড়ির ফ্রিজের অর্ধেক উচ্চতা পর্যন্ত জল উঠে গিয়েছিল। ফ্রিজ খারাপ হয়ে গিয়েছে। ফ্রিজের খাবার নষ্ট হয়েছে তো বটেই। ফ্রিজে রাখা ইনজেকশনও বোধহয় নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’
কিছুটা এগিয়ে নজরে এল, একটি অন্ধকার রেস্তরাঁ থেকে বালতি বালতি জল বার করছেন মালিক মালিনী দাস। মালিনী বলেন, ‘‘কোমর সমান জল ছিল রেস্তরাঁয়। বালতি ভরে জল বার করছি। পুজোর মরসুমের জন্য বেশি করে খাবার ফ্রিজে রেখেছিলাম। সব নষ্ট হয়ে গেল।’’
এ দিন দেখা গেল, ম্যানহোল খুলে জমা জল বার করার কাজ করছেন কলকাতা পুরসভার কর্মীরা। এক পুরকর্মী ম্যানহোল দেখিয়ে বললেন, ‘‘দেখুন, ভিতরে কত রকমের আবর্জনা জমে আছে। প্লাস্টিকের বোতল, কাচের বোতল, নিত্য প্রয়োজনীয় বাতিল জিনিস, এমনকি পুরনো জামাকাপড়ও আছে। এ সব নালায় ফেললে কোনও দিন জমা জলের সমস্যা মিটবে না।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)