Advertisement
E-Paper

সরকারি সমীক্ষাই দেখাল শহরে কী হাল অঙ্গনওয়াড়ির

একটা ভাঙা পাম্প-ঘর। সেখানে একচিলতে জায়গায় স্টোভ জ্বেলে রান্না চলছে। তার ধার ঘেঁষে মাদুরে বসে পড়াশোনা করছে কয়েকটি শিশু। ভাঙাচোরা দেওয়াল বেয়ে অবিরাম চলেছে নানা ধরনের পোকামাকড়। প্রৌঢ়া দিদিমণি জানালেন, বর্ষার সময়ে বেশ কয়েক বার সাপও বেরিয়েছে। উর্দুভাষী এলাকায় ঘুপচি ঘরে ক্লাস চলছে। দিদিমণি বাংলা ছড়া বলছেন। তার বিষয়বস্তু বুঝতে না পেরে নিজেদের মধ্যে গল্পে মত্ত শিশুরা।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৮
স্টোভ জ্বেলে চলছে রান্না, পাশেই শিশুদের বসার জায়গা। শহরের এক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। ছবি: সুমন বল্লভ

স্টোভ জ্বেলে চলছে রান্না, পাশেই শিশুদের বসার জায়গা। শহরের এক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। ছবি: সুমন বল্লভ

একটা ভাঙা পাম্প-ঘর। সেখানে একচিলতে জায়গায় স্টোভ জ্বেলে রান্না চলছে। তার ধার ঘেঁষে মাদুরে বসে পড়াশোনা করছে কয়েকটি শিশু। ভাঙাচোরা দেওয়াল বেয়ে অবিরাম চলেছে নানা ধরনের পোকামাকড়। প্রৌঢ়া দিদিমণি জানালেন, বর্ষার সময়ে বেশ কয়েক বার সাপও বেরিয়েছে।

উর্দুভাষী এলাকায় ঘুপচি ঘরে ক্লাস চলছে। দিদিমণি বাংলা ছড়া বলছেন। তার বিষয়বস্তু বুঝতে না পেরে নিজেদের মধ্যে গল্পে মত্ত শিশুরা। পাশেই নোংরা, ভাঙা, কাদাজলে ভর্তি একটা জায়গায় রান্না চলছে। বাসনপত্রের অবস্থাও তথৈবচ।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ঢিল-ছোড়া দূরত্বে একটি কেন্দ্র। সেখানে প্রতি দিন গড়ে ৩০টির বেশি বাচ্চা আসে না। অথচ, রোজ ১০০ জনের খাবারের হিসেব দিয়ে সেই মতো টাকা নেওয়া হয়।

কলকাতার আইসিডিএস প্রকল্পের এমনই শোচনীয় হাল ধরা পড়েছে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়। মিড ডে মিলের তালিকায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যে ছিটেফোঁটা পুষ্টির ব্যবস্থা নেই, সেটাও জানিয়েছেন সমীক্ষকেরা। বিহারে মিড-ডে মিল বিপর্যয়ের পরে এ রাজ্যের আইসিডিএস প্রকল্প এবং মিড-ডে মিল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্যাকেটবন্দি ছাড়া অন্য খোলা তেল যাতে ব্যবহার না হয়, সে ব্যাপারেও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এর পরেই আইসিডিএস প্রকল্প নিয়ে সমীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। সমীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগকে। সেই মতো বিভাগীয় শিক্ষক অরিজিতা দত্তের যে রিপোর্ট সমাজকল্যাণ দফতরে জমা পড়েছে, তাতে টাকা নয়ছয়, শিশুদের পুষ্টির ব্যাপারে উদাসীনতা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্নাবান্না, পানীয় জল ও শৌচাগারের অভাবের বিষয়গুলিও সামনে এসেছে।

পরিকাঠামোর দিক থেকে বিচার করতে গেলে দেশে অঙ্গনওয়াড়ি পরিষেবায় এ রাজ্যের স্থান ২০টি বড় রাজ্যের মধ্যে ১৫ নম্বরে। কলকাতায় ১৩টি প্রকল্পের অধীনে মোট ১৫২৮টি কেন্দ্র রয়েছে। দিনে চার ঘণ্টা খোলা থাকার কথা সেগুলি। কিন্তু বেশির ভাগ জায়গাতেই তা খোলা থাকে দেড়-দু’ঘণ্টা। তা-ও নির্দিষ্ট কোনও সময়ে নয়। সরকারি নিয়ম না মেনে অনেকেই ইচ্ছেমতো কেন্দ্র চালান। দরজা ভেঙে পড়ছে। জানলা নেই। ওজনের যন্ত্রগুলিও বেহাল। যথাযথ শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সমীক্ষকেরা দেখে এসেছেন, বেশির ভাগ জায়গাতেই খাবারের মান ভাল নয়। শিশুদের দিনের পর দিন আধসেদ্ধ খাবার পরিবেশন করা হয়। রান্নার জায়গা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। প্রতি মাসে রিপোর্ট তৈরি করতে হয় কর্মীদের। সেখানে কত বাচ্চা, কত জন মা, কত প্রসূতি তার হিসেব থাকার কথা। কত জন নিয়মিত হাজির থাকে, প্রতি দিন কত জন খাবার নেয়, তার বিবরণও বাধ্যতামূলক। কিন্তু সমীক্ষকেরা জানিয়েছেন, বহু কেন্দ্রেই এই রিপোর্ট নিয়ম মেনে তৈরি হয় না। শিশুদের পুষ্টি ও বৃদ্ধির চার্ট-ও তৈরি হয় না। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বয়স ভাঁড়ানোরও প্রমাণ মিলেছে। বার্ধক্যের দোরগোড়ায় পৌঁছেও কেন্দ্র চালাচ্ছেন, এমন নজির অজস্র। এই সমীক্ষা রিপোর্ট সরকারি আধিকারিকদের সামনে পেশ হয়েছে।

সমীক্ষক দলের প্রধান, অর্থনীতির শিক্ষক অরিজিতা দত্ত বলেন, “সরকার কিছু করছে না, তা একেবারেই নয়। সরকারি তরফে যথেষ্ট উদ্যোগ রয়েছে। কিন্তু আমরা যেটা বুঝলাম, নজরদারির বড়ই অভাব। বেশির ভাগ জায়গাতেই কোনও ভাবনাচিন্তা নেই। এক দিকে, এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছেন কর্মীরা। অন্য দিকে, লক্ষ লক্ষ সরকারি টাকা নয়ছয় হচ্ছে। পুষ্টির জন্য এত বড় একটা প্রকল্পকে সফল করতে হলে যথাযথ নজরদারিটা খুব জরুরি।”

এ রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা জানিয়েছেন, অনিয়মের খবর তাঁর কাছেও আছে। তিনি বলেন, “কলকাতায় ওয়ার্ড-ভিত্তিক মনিটরিং কমিটি তৈরি করা হয়েছে। উপরমহল থেকে একটা চাপ না থাকলে ঠিকঠাক ভাবে কাজ হবে না। এ ক্ষেত্রে সব স্তরেই আরও স্বচ্ছতা দরকার।”

anganwadi soma mukhopadhyay survey state govt kolkata news latest news online news kolkata latest news online latest news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy