বাড়ির বাইরে ডাঁই করা সরঞ্জামের মাঝেই বসে মনোজ মিত্র, মেঘনাদ ভট্টাচার্য এবং অন্য নাট্যকর্মীরা। শুক্রবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে কবেকার তোরঙ্গ, আসবাব। লন্ডভন্ড সাবেক বাহারি পালঙ্ক থেকে খাঁচার খেলনা টিয়াপাখি, ধুলো জমা হারমোনিয়াম!
শুক্রবার দিনভর এই দৃশ্যই দেখা গেল দক্ষিণ কলকাতার ৫৭ নম্বর যতীন দাস রোডের একটি তিনতলা বাড়ির সামনে। ওই বাড়ির একতলার দু’টি ঘরের দখল নিয়ে দিনভর চলল নাটকীয় টানাপড়েন!
বাড়ির মালিক বসু পরিবারের দাবি, বিচারকের নির্দেশে আদালতের লোকজনই বৃহস্পতিবার ওই দু’ঘরের ভাড়াটে ‘সুন্দরম’ নাট্যগোষ্ঠীর আসবাব বার করে দিয়েছে। সুন্দরম-এর কর্ণধার তথা প্রবীণ নাট্যকার মনোজ মিত্রের দাবি, ‘‘কী থেকে কী যে ঘটল, কিছুই বুঝতে পারছি না!’’ ঘর থেকে আচমকাই তাঁদের সেট, সরঞ্জাম বার করে দেওয়া হয় বলে আফশোস করে মনোজবাবু বলেন, ‘‘আমাদের দল সুন্দরম নাট্যগোষ্ঠীর নতুন নাটকের শো ছিল এ মাসেই। মনে হচ্ছে, শো বাতিল করা ছাড়া গতি নেই।’’ ঠিক কেন এমন ঘটল, তা নিয়ে বসু পরিবার এবং সুন্দরম পরস্পরবিরোধী দাবি করে চলেছে।
যতীন দাস রোডের ওই বাড়ির সামনে চেয়ার পেতে মনোজ মিত্রের পাশে বসেই একটি নাটকের দলের ঘরে এ হেন ‘হামলা’র নিন্দা করলেন বিভাস চক্রবর্তী, মেঘনাদ ভট্টাচার্য, সীমা মুখোপাধ্যায়, দেবশঙ্কর হালদারেরা। মনোজবাবুদের দাবি, ঘর দু’টিতে তাঁদের আনাগোনা ৬০ বছরেরও বেশি। ২০১৪ পর্যন্ত ওখানে তাঁরা মহড়া দিয়েছেন। কবে কারা মামলা করল, তাঁরা জানেন না! তবে ক’বছর ধরে তাঁরা রেন্ট কন্ট্রোলে ওই ঘর দু’টির ভাড়া জমা দিচ্ছেন। বসু পরিবারের তরফে গোপা বসুর কিন্তু দাবি, ‘‘আমাদের আরও ক’টি ঘর দরকার বলে মনোজবাবুদের বহু বছর ধরে উঠে যেতে বলা হচ্ছে। ওঁরাই আমাদের আদালতে যেতে বলেছিলেন। মামলার বিষয়ে জানতেন না, এটা হতে পারে না।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, কোর্টের নির্দেশে আইনজীবীর উপস্থিতিতেই দু’টি ঘর থেকে সুন্দরম-এর জিনিসপত্র খালি করা হয়। ডাঁই করা সরঞ্জামের দিকে তাকিয়ে নাট্যকর্মীরা বারবার বলছিলেন, আপাত ভাবে অকাজের পুরনো কাঠের টুকরোও সেটের জন্য খুব জরুরি হতে পারে। প্রবীণ নাট্যকর্মী তথা মঞ্চসজ্জা বিশারদ খালেদ চৌধুরীর তৈরি সেটের টুকরোও ছুড়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ। ছুড়ে ফেলা সরঞ্জামের মধ্যে ‘সাজানো বাগান’, ‘অলকানন্দার পুত্রকন্যা’, ‘শোভাযাত্রা’, ‘গল্প হেকিম সাহেব’ বা সুন্দরম-এর নতুন নাটক ‘মামণি’র সেটও ছিল বলে মনোজবাবুদের দাবি। সন্ধ্যার পরে নাটকের দলের লোকেরা ফের ঘর দু’টিতে বার করা সরঞ্জামের কিছুটা ঢুকিয়ে দেন। বসু পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা ফের আদালতে যাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy