Advertisement
E-Paper

অনেক গোলমাল দেখেছি বিনোদন পার্কটিতে

সুপর্ণা মালাকার (অ্যাকোয়াটিকায় অভিজ্ঞতা)সুইমিং পুলের এক পাশে সপরিবার স্নান করছি। হঠাৎই কানে এল এক মহিলার চিৎকার। ঘুরে তাকাতেই দেখলাম, জল থেকে তোলা হচ্ছে একটি বছর আটেকের বাচ্চাকে। মাথা ফেটে ঝরঝর করে রক্ত পড়ছে! পাশেই হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন জনা তিনেক তরুণ।

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১০

সুইমিং পুলের এক পাশে সপরিবার স্নান করছি। হঠাৎই কানে এল এক মহিলার চিৎকার। ঘুরে তাকাতেই দেখলাম, জল থেকে তোলা হচ্ছে একটি বছর আটেকের বাচ্চাকে। মাথা ফেটে ঝরঝর করে রক্ত পড়ছে! পাশেই হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন জনা তিনেক তরুণ। তত ক্ষণে ‘ফার্স্ট এড, ফার্স্ট এড’ বলে চিৎকার জুড়ে দিয়েছেন মহিলা। কিন্তু আশেপাশে কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। অ্যাকোয়াটিকায় ঘুরতে আসা আর এক যুবকই বাচ্চাটিকে কোলে করে দৌড়লেন ওই বিনোদন পার্কের অফিসের দিকে। কিন্তু সেখানেও কোনও ‘ফার্স্ট এড’ নেই! শেষে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুটিকে।

খোঁজ নিতেই জানলাম, উঁচু জায়গা থেকে বয়ে আসা জলের ঢাল বেয়ে নেমে আসছিলেন কয়েক জন তরুণ। ঠিক যে জায়গাটায় এসে তাঁরা জলে পড়তেন, সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই মহিলা ও তাঁর সন্তান। নিয়ম অনুযায়ী ওই জায়গায় দাঁড়ানো যায় না। কিন্তু আনকোরা লোকজনকে সেটা বোঝাবেন বা সতর্ক করবেন যাঁরা, অ্যাকোয়াটিকার সেই কর্মীদের দেখাই পাওয়া যায়নি। শিশুটি আহত হওয়ার পরেও তো তাঁরা এলেন না!

অ্যাকোয়াটিকার ভিতরের হাল কী, তা অবশ্য ঢোকার মুখেই টের পেয়েছিলাম। অ্যাকোয়াটিকার পাস পেয়ে স্বামী, কন্যাসন্তানকে নিয়ে হাজির হয়েছিলাম। গেটের মুখেই দেখলাম, টিকিট কাউন্টারে মারাত্মক হুড়োহুড়ি। চলছে বচসাও। সেই ভিড় ঠেলেই ভিতরে ঢুকলাম। দেখলাম, ভিতরেও লাইন পড়েছে, স্নানের পোশাকের জন্য। সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে একটা করে বড় মাপের প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ। শুনেছিলাম তো অ্যাকোয়াটিকায় ‘লকার’ থাকে। জিজ্ঞাসা করতেই পোশাকের কাউন্টারে বসে থাকা এক কর্মী বলেন, ‘‘লকার সব ভর্তি। ওই ব্যাগেই রাখতে হবে।’’ এক-একটি ক্যারিব্যাগের জন্য গুনে গুনে ২৫ টাকাও দিতে হল।

আমাদের পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিল এক দল যুবক। লকার কেন দেওয়া হবে না, প্রশ্ন তুললেন তাঁরাও। সঙ্গে সঙ্গে বচসা শুরু হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কাউন্টারে বসা কয়েক জন ষণ্ডামার্কা কর্মী লাঠি নিয়ে তেড়ে এলেন ওই যুবকদের দিকে। টের পেলাম, আমার হাতে ধরে থাকা মেয়ের হাত কাঁপছে! তাড়াতাড়ি পাশ কাটিয়ে ভিতরে পোশাক বদলের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম আমি।

সেই ঘরের ভিতরে ঢুকেই গা গুলিয়ে উঠল। ঘরের মেঝে থইথই করছে কাদাজলে। দরজার ছিটকিনিগুলোও ঠিক মতো আটকায় না। কী করব! ওই ঘরেই কোনও মতে পোশাক বদলে বেরিয়ে এলাম। ছোট মেয়েটার পোশাক বদলে দিলাম বাইরেই। তার পরে জামাকাপড় ব্যাগে ভরে জমা রাখতে গিয়ে দেখলাম, আমাদের ব্যাগগুলো জঞ্জালের ব্যাগের মতো দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে রাখা হচ্ছে। পাশেই কয়েক জনকে জামাকাপড় ফেরত দিতে গিয়ে ব্যাগ ছিঁড়ে গিয়েছিল। তা নিয়ে আপত্তি করতেই ফের লাঠির ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দিলেন এক দল মাতব্বর গোছের লোক।

এখানেই অবশ্য শেষ নয়। সে দিন দেখেছিলাম, সুইমিং পুলের নামে কাদাগোলা জলেই স্নান করতে হচ্ছে। মিলছে না পাসে লেখা সব ক’টা রাইডও। একটু দূরে দাঁড়ানো এক নিরাপত্তারক্ষীকে সে কথা বলতেই জবাব মিলেছিল, ‘‘যা পাচ্ছেন, তাতেই খুশি থাকুন।’’ খুশি হতে পারিনি। তার পরেই পোশাক বদলে বেরিয়ে এসেছিলাম অ্যাকোয়াটিকা থেকে। স্বামীকে বলেছিলাম, জীবনেও আর কখনও এ মুখো হব না।

কিন্তু সোমবার সকালে অ্যাকোয়াটিকার খবরটা পড়েই ফের বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল! ওই পোশাক বদলের ঘরেই তো জামাকাপড় ছেড়েছিলাম। কাদাজল ভর্তি মেঝেতে চারপাশ ভাল করে দেখিনি। তা হলে কি...!

Suparna Malakar Hidden CCTV Aquatica changing room police goa fabindia smriti irani
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy