Advertisement
E-Paper

বেশি অ্যাপ ব্যবহারেই বিপদের ঝুঁকি

স্মার্টফোনের দুনিয়ায় খাবারই হোক বা শপিং, মায় মামুলি ভিডিও গেম— সবই কার্যত অ্যাপ নির্ভর। ফোনের মগজে তাই প্রয়োজনে–অপ্রয়োজনে অ্যাপ পুরে রাখেন লোকজন।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ১৩:৫৭

সাইবার দুনিয়ায় তাঁর ছবি এবং ফোন নম্বর কী ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তা বুঝতেই পারছিলেন না কলকাতাবাসী এক মহিলা। হেনস্থার শিকার হতে হতে শেষমেশ লালবাজারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। তাঁর অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই মহিলার ফোনে থাকা একটি অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) থেকেই তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য সাইবার-হেনস্থাকারীদের হাতে পৌঁছে গিয়েছিল।

স্মার্টফোনের দুনিয়ায় খাবারই হোক বা শপিং, মায় মামুলি ভিডিও গেম— সবই কার্যত অ্যাপ নির্ভর। ফোনের মগজে তাই প্রয়োজনে–অপ্রয়োজনে অ্যাপ পুরে রাখেন লোকজন। সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অ্যাপ নির্ভরতাই বিপদ ডেকে আনতে পারে। শুধু তাই নয়, বহু মানুষের তথ্য জোগাড় করা অ্যাপ-পরিষেবা সংস্থাগুলিরও কিন্তু দায় ষোলো আনা। সম্প্রতি হ্যাকার হানা হয়েছিল ‘জোম্যাটো’ নামে একটি অ্যাপের সার্ভারে। গোয়েন্দারা জানান, ১ কোটি ৭০ লক্ষ গ্রাহকের তথ্য চুরি হয়ে গিয়েছিল।

কেন বিপদ ঘটতে পারে অ্যাপ থেকে?

সাইবার বিশেষজ্ঞেরা জানান, অ্যাপ ডাউনলোড করতে গেলেই তাকে ব্যবহারকারীর ফোন-বুক, ক্যামেরা, এসএমএসের তথ্য জানার অধিকার দিতে হয়। এর ফলে সেই সব তথ্য অ্যাপ-পরিষেবা সংস্থার সার্ভারে জমা হয়। এর বিপদের দিক দু’টি। প্রথমত, সংস্থাটির উদ্দেশ্য অসৎ হলে সেই তথ্য দুষ্কৃতীদের কাছে পাচার হতে পারে। দ্বিতীয়ত, সংস্থার সার্ভারে হ্যাকার হানা হলে গ্রাহকের তথ্য বেরিয়ে যেতে পারে। ঠিক যেমন হয়েছিল ‘জোম্যাটো’র ক্ষেত্রে।

সাবধান

• অ্যাপটি আদৌ কাজে লাগবে কি না, আগে সেটা দেখুন

• কত জন অ্যাপটি ডাউনলোড করেছে, দেখে নিন

• প্লে-স্টোরে অ্যাপের রিভিউ দেখে নিন

• প্লে-স্টোরের বাইরে কোনও অ্যাপ ডাউনলো়ড নয়

• অপরিচিত সংস্থার অ্যাপ এড়িয়ে চলা উচিত

• নিয়মিত মোবাইলের ‘ডেটা ইউসেজ’ পরীক্ষা করুন

• মোবাইলে অ্যান্টি-ভাইরাস ব্যবহার করুন

গ্রাহকদের তথ্য বিদেশে পাচার করার অভিযোগ ওঠেনি, এমন নয়। ইন্ডিয়ান স্কুল অব এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বলছেন, গত বছরের ডিসেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মোবাইল থেকে চারটি অ্যাপ সরিয়ে ফেলতে বলেছিল। গোয়েন্দাদের বক্তব্য ছিল, ওই অ্যাপগুলি এ দেশের ব্যবহারকারীদের তথ্য পাচার করছে পাকিস্তানে। ‘বেলুন পপ ২’ নামে একটি অ্যাপ ফেসবুকের তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ‘ট্রু কলার’-এর মতো বিভিন্ন অ্যাপে ফোনে থাকা যাবতীয় নম্বর নিয়ে নেওয়া হয়। সেই সংস্থার সার্ভারে হ্যাকার হানার পরে কিন্তু সেই তথ্য দুষ্কৃতীদের হাতে চলে গিয়ে থাকতে পারে। সন্দীপবাবু বলেন, ‘‘কোনও কম ব্যবহৃত অ্যাপ যদি নিয়মিত ডেটা লেনদেন করে, তা হলেই সেটি আনইনস্টল করে দেওয়া উচিত। মোবাইলের ডেটা ব্যবহার পরীক্ষা করলেই তা ধরা সম্ভব।’’

এই যে বিপদের হাতছানি, তার পিছনে ব্যবহারকারীদের অজ্ঞানতাকেও বহু ক্ষেত্রে দায়ী করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা বলছেন, প্রতি বছরই অ্যাপ ডাউনলোডের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি-র একটি সমীক্ষা বলছে, ২০১২ সালে ভারতে এর সংখ্যা ছিল দে়ড় কোটি। ২০১৫ সালে তা হয়েছে ৯০ কোটি! সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বছর অ্যাপ ডাউনলোডের সংখ্যা ১০০ কোটি ছুঁতে পারে।

সাইবার বিশেষজ্ঞদের আরও মত, প্লে-স্টোরে থাকা কোন অ্যাপ্লিকেশন কাজে লাগবে এবং কোনটা লাগবে না, তা অনেকেই ভেবে দেখেন না। সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘আগুপিছু না ভেবে অ্যাপ ডাউনলোড করাটাই বিপদের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।’’ তিনি জানান, এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি এমন ভাবেই তৈরি হয় যাতে ফোনের অপারেটিং সিস্টেমের স্তরে এগুলি কাজ করতে পারে। এই তথ্য জানার অধিকার না দিলে অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারই করা যাবে না। এবং সেই সূত্রেই এই অ্যাপগুলি ফোন এবং ব্যবহারকারীর বিভিন্ন তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত অনেকের ফোনে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে। সে সব বেরিয়ে গেলে সমাজ এবং দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। কোনও সন্দেহজনক অ্যাপ ডাউনলোড করে ফেললেও তা সঙ্গে সঙ্গে আনইনস্টল করে দেওয়া উচিত।’’

Mobile apps Risk Dangerous স্মার্টফোন Cyber crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy