Advertisement
E-Paper

আপৎকালীন নম্বর আছে, নেই ফোনের নেটওয়ার্ক

মেট্রোর কামরায় এখন একাধিক জায়গায় বোর্ডে লেখা রয়েছে দু’টি মোবাইল নম্বর। ৯০০৭০৪১৯০৮ এবং ৯০০৭০৪১৭৮৯। মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, যার একটি সাধারণ যাত্রী-সহায়ক নম্বর, অন্যটি নারী-সহায়ক। চলন্ত ট্রেনে বিপদে পড়লে কামরা থেকেই এই নম্বরে ফোন করে সরাসরি মেট্রোর কন্ট্রোল রুমের সাহায্য চাওয়ার কথা।

সায়নী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০১:০২

মেট্রোর কামরায় এখন একাধিক জায়গায় বোর্ডে লেখা রয়েছে দু’টি মোবাইল নম্বর। ৯০০৭০৪১৯০৮ এবং ৯০০৭০৪১৭৮৯। মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, যার একটি সাধারণ যাত্রী-সহায়ক নম্বর, অন্যটি নারী-সহায়ক। চলন্ত ট্রেনে বিপদে পড়লে কামরা থেকেই এই নম্বরে ফোন করে সরাসরি মেট্রোর কন্ট্রোল রুমের সাহায্য চাওয়ার কথা। অথচ বাস্তব ছবিটা বলছে, বিপদে সাহায্য পাওয়া দূরে থাক, চলন্ত মেট্রোয় তো মোবাইল ফোনের সংযোগই পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে ঘটা করে এই সহায়ক নম্বর দেওয়ার মানে কী? প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। উত্তরে অবশ্য স্রেফ চাপান-উতোর ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি।

মেট্রোর এই সহায়ক নম্বর দু’টি যে অলঙ্কার মাত্র, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। যাত্রীদের অভিজ্ঞতায়, একাধিক বার মেট্রোয় এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে প্রয়োজনে বারংবার চেষ্টা করেও টাওয়ারের অভাবে ওই নম্বরে ফোন করতে পারেননি মহিলা যাত্রীরা। এমনকী, ওই সহায়ক নম্বরের পরিষেবা সংস্থার অন্য নম্বর থেকে ফোন করেও লাভ হয়নি। মেট্রোর সুড়ঙ্গে এমনিতেই মোবাইল টাওয়ার থাকে না। কয়েকটি স্টেশনে নেটওয়ার্ক মিললেও কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ফের উধাও হয়ে যায়। যাত্রীদের অভিযোগ, আপৎকালীন এই সহায়ক নম্বরগুলির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নেই। ওই নম্বর দু’টি যে নির্দিষ্ট পরিষেবা সংস্থার, সুড়ঙ্গের ভিতরে যথারীতি তাদের কোনও নেটওয়ার্ক মেলে না।

মেট্রোর এক আধিকারিক জানান, সুড়ঙ্গে মোবাইলে টাওয়ার থাকে না ঠিকই, তবে স্টেশনে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। যাত্রীদের অবশ্য অভিযোগ, স্টেশনেও ঠিক মতো নেটওয়ার্ক মেলে না। মাঝে দু’-এক বার কিছুক্ষণের জন্য টাওয়ার ভেসে উঠলেও তা দিয়ে যোগাযোগ সংক্রান্ত কোনও কাজ করা যায় না। যাত্রীদের প্রশ্ন, তা হলে কি চলন্ত মেট্রোয় বিপদে পড়লে নম্বর নিয়ে ফোনে টাওয়ার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে হবে?

কিন্তু যে জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু রাখার ব্যবস্থাই সে ভাবে করা যায়নি এখনও, সেখানে যাত্রী-সহায়ক নম্বর হিসেবে মোবাইল নম্বর দেওয়া হল কী করে? সংশ্লিষ্ট পরিষেবা সংস্থার দাবি, মেট্রো কর্তৃপক্ষ তাঁদের থেকে ওই নম্বরগুলি কিনে নিয়েছেন। এর পরে তাঁরা যদি নম্বর দু’টিকে যাত্রী-সহায়ক নম্বর হিসেবে ব্যবহার করেন, তাতে সংস্থার কিছু বলার নেই। ওই সংস্থার আরও বক্তব্য, মেট্রো তাদের কাছ থেকে যে সব সিমকার্ড কিনেছে, সেগুলি সিইউজি কর্পোরেট সিমকার্ড। অর্থাৎ শহরে যেখানে যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগ পাওয়া যায়, সিমগুলি সেখানেই ব্যবহার করা যাবে। পাতালে মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগ ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও কেন নম্বরগুলি সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে, তার দায় মেট্রোর ঘাড়েই চাপিয়েছে ওই পরিষেবা সংস্থাটি।

নেটওয়ার্ক না থাকা সত্ত্বেও মোবাইল নম্বর দু’টিকে মেট্রো যাত্রী-সহায়ক নম্বর করল কেন?

মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানান, ওই পরিষেবা সংস্থার কাছ থেকে অফিসার এবং কর্মীদের জন্য প্রায় পাঁচশো সিম কার্ড নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যেই দু’টিকে সহায়ক নম্বর হিসেবে যাত্রীদের জানানো হয়েছে। তবে, সুড়ঙ্গে যে নেটওয়ার্কের সমস্যা রয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়ে মেট্রোর দাবি, সুড়ঙ্গে নিজেদের জন্য জিএসএম-আর বলে একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করেছে তারা। এর মাধ্যমে সুড়ঙ্গের ভিতরেও ফোনে যোগাযোগ করা যায়। তবে বর্তমানে তা শুধু মেট্রোর কর্মীরাই ব্যবহার করতে পারেন। অন্যান্য মোবাইল পরিষেবা সংস্থা জিএসএম-আর ব্যবহার করে সুড়ঙ্গে পরিষেবা দিতে চাইলে মেট্রোর সঙ্গে চুক্তিপত্র সই করে মাসিক ভাড়া দিয়ে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

তা হলে সমস্যা কোথায়? সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (জিএসএম অপারেটরদের একটি অ্যাসোসিয়েশন)-এর এক মুখপাত্র বলেন, “মেট্রো যাত্রীদের মোবাইল পরিষেবা দিতে ইচ্ছুক পরিষেবা সংস্থাগুলি। তবে ভাড়া বাবদ মেট্রো যে টাকা চাইছে, তা বাণিজ্যিক ভাবে লাভজনক নয়।” বিএসএনএল-এর তরফেও একই কথা জানানো হয়েছে।

মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র অবশ্য বলেন, “আমাদের প্রথম লক্ষ্য মেট্রো পরিষেবা ঠিক রাখা। দ্বিতীয়ত, যা খরচা হচ্ছে তার পাশাপাশি কিছু আয় করা। এই সমস্যা মেটাতে অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। এ বছরের শেষে একটি টেন্ডার ডাকার পরেই এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

কিন্তু যাত্রীদের সহায়ক নম্বর চালু করার কথা জানানোর এক বছর পরে টেন্ডার ডাকা হচ্ছে কেন? রবিবাবুর উত্তর, “জিএসএম-আর মেট্রোর নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা। অন্যান্য অপারেটরদের ডেকে আনার আগে আমরা ব্যবস্থাটার কার্যকারিতা আর একটু খতিয়ে দেখে নিতে চাইছি।”

তা হলে তার আগেই ঘটা করে যাত্রীদের নম্বর দিয়ে দেওয়া হল কেন?

উত্তর মেলেনি।

নারী-নিগ্রহ রোধে পোস্টার

এক দিকে যখন প্রশ্নের মুখে মেট্রোর আপৎকালীন যাত্রী-সহায়ক নম্বর দেওয়ার উদ্যোগ, তখনই মহিলাদের হেনস্থা এবং যৌন নির্যাতন রুখতে বিভিন্ন স্টেশনে সচেতনতার প্রচারও শুরু করেছেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। পুজোর আগে থেকেই এই ধরনের অপরাধে কী শাস্তি হতে পারে, তা পোস্টারে লিখে সেঁটে দেওয়া হয়েছে টিকিট কাউন্টারের পাশে, প্ল্যাটফর্ম চত্বরের বিভিন্ন জায়গায়। ২৪টি স্টেশনে লাগানো হয়েছে প্রায় ৭০টিরও বেশি পোস্টার।

এখন মাঝেমধ্যেই মেট্রোয় নারী নিগ্রহের ঘটনা ঘটে। ভিড়ের সুযোগে যেমন অপরাধের মাত্রা বাড়ে, তেমন অনেক ক্ষেত্রে অপরাধী পালিয়েও যায় সহজে। মেট্রোর বক্তব্য, ওই পোস্টার চোখের সামনে বারবার দেখলে সবাই কিছুটা সচেতন হবেন।

মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “মহিলাদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং জনসচেতনতা বাড়াতে ভবিষ্যতে আরও পদক্ষেপ করা হবে। শুধু অপরাধী নয়, যাদের অপরাধ করার দিকে ঝোঁক রয়েছে, এই পোস্টার দেখে আত্মসংযমী হবে তারাও।”

এই উদ্যোগের প্রশংসা করে মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলেন, “মেট্রোর প্রবেশপথে বা টিকিট কাউন্টারের সামনে যদি এই ধরনের পোস্টার লাগানো হয়, তবে তা মানুষের নজরে পড়বেই। কিছুটা মানসিক চাপও হবে অপরাধীদের।” তবে একই সঙ্গে প্রয়োজনে মহিলারা কী ভাবে দ্রুত আইনের সাহায্য পেতে পারেন, সেই বিষয়টিতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ আরও গুরুত্ব দিলে ভাল হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

তথ্য সহায়তা: অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়।

sayani bhattacharjya metro service kolkata metro emergency number no network kolkata news online kolkata news kolkata metro condition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy