Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সময়ের ঠিক নেই ইন্ডিগো উড়ানের, দুর্ভোগ যাত্রীদের

সময় মেনে উড়ানই ছিল তাদের সাফল্যের চাবিকাঠি। আর্থিক অনটনের বাজারেও তাই প্রতিযোগীদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে ইন্ডিগো। কিন্তু এখন তাদের ওই ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:০৭
Share: Save:

সময় মেনে উড়ানই ছিল তাদের সাফল্যের চাবিকাঠি। আর্থিক অনটনের বাজারেও তাই প্রতিযোগীদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে ইন্ডিগো। কিন্তু এখন তাদের ওই ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার বিশাখাপত্তনম থেকে ইন্ডিগোর উড়ানে কলকাতা ফিরেছেন আইআরসিটিসি-র পূর্ব ভারতের জিএম দেবাশিস চন্দ্র। টিকিট যখন কেটেছিলেন, তখন বিশাখাপত্তনম থেকে উড়ান ছাড়ার কথা ছিল দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে। দু’দিন আগে ফোনে জানানো হয়, ওই উড়ান ছাড়বে দুপুর ২টোয়। এ দিন সকালে জানানো হয়েছে, উড়ানের সময় সওয়া তিনটেয়।

সেই অনুযায়ী বিমানবন্দরে পৌঁছে যান দেবাশিসবাবু। কিন্তু তার পরের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখের নয়। বিরক্ত দেবাশিসবাবু এ দিন বিশাখাপত্তনম থেকে ফোনে বলেন, ‘‘সময় বদলেই যাচ্ছে। এক বার বলছে ৩টে ৫০, তার পরে ৪টে ২৫, আবার ৫টা ২৫। ইন্ডিগোর কর্মীদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা এমন ভাব করছেন, যেন আমি কঠিন অঙ্ক কষতে দিয়েছি।’’

সেখানেই শেষ হয়নি দুর্ভোগ। সন্ধ্যার উড়ানে তুলে রানওয়ে পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসেছে দেবাশিসবাবুদের বিমান। বলা হয়েছে, পাইলট ও সেবিকাদের দিনের ডিউটির সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। ওই সময়ের বাইরে তাঁরা আর কাজ করতে পারবেন না। বিমানে যাত্রী তোলার আগে এটা যে কেন বিমান-কর্তৃপক্ষের মনে হয়নি, তা বুঝতে পারছেন না যাত্রীরা। রাত আটটা নাগাদ খবর আসে, তখনও তাঁরা বিমানবন্দরে বসে উড়ানের অপেক্ষায়। বিমান সংস্থা জানিয়েছে, বেঙ্গালুরু থেকে পাইলট আসছেন। এসে তাঁদের নিয়ে যাবেন। সন্ধ্যায় ক্ষুব্ধ, বিরক্ত দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘আমাদের এমন বিপদে ফেলার অধিকার ইন্ডিগোকে কে দিল, তা কলকাতা ফিরে আমি ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন’ (ডিজিসিএ)-এর কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চাইব।’’

লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের তনু দাং পরীক্ষা নিতে গিয়েছিলেন গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বুধবার গুয়াহাটি থেকে কলকাতা হয়ে ফেরার পথে বিপদে পড়েছেন। ভিলেন সেই ইন্ডিগো। গুয়াহাটি থেক ঠিক সময়ে কলকাতা এসেছিলেন তনু। কলকাতা থেকে লখনউয়ের বিমান ছাড়ার কথা ছিল বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত কলকাতাতেই আটকে থাকতে হয় তাঁকে। লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষিকা বলেন, ‘‘আমাকে লখনউ থেকে আবার কানপুর ফিরতে হবে। এত রাতে কী করব, জানি না। সকাল সাড়ে ১০টায় বেরিয়েছি গুয়াহাটি থেকে। কতক্ষণে যে বাড়ি পৌঁছব বলতে পারছি না। এই সবে লখনউয়ের বিমানে উঠেছি।’’

অমিত শূর বুধবার গুয়াহাটি থেকে সস্ত্রীক কলকাতায় আসছিলেন ইন্ডিগোর উড়ানে। দুপুর আড়াইটে নাগাদ উড়ান ছাড়বে বলে সময় মতো বিমানবন্দরে পৌঁছন। বারবার সময় বদলে সেই বিমান অবশেষে ছেড়েছে বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ। অমিতবাবু জানিয়েছেন, গুয়াহাটি থেকে কলকাতা ছুঁয়ে বিমানটির মুম্বই যাওয়ার কথা। তিনি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুম্বই যাচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এত দেরি করে বিমান ছাড়ল যে বিয়েবাড়ি পৌঁছতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আমি না হয় বিয়েবাড়ি যাচ্ছিলাম, কোনও চিকিৎসক তো অন্য শহরে জরুরি অপারেশনের জন্যও যেতে পারতেন। তা হলে কী হত?’’

কেন নিয়মিত দেরি হচ্ছে উড়ান?

ইন্ডিগোর যুক্তি, দিল্লি-সহ দেশের বেশ কিছু শহরে শীতের শুরুতেই ঘন কুয়াশা। তার জেরে সকালে দিল্লি থেকে ছাড়ার সময়ে একটি উড়ানের দেরি হওয়া মানে তার ঠেলায় সারা দিনে ৭-৮টি উড়ান ছাড়তে দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া, সম্প্রতি চেন্নাইয়ের বিমানবন্দর বেশ কিছু ক্ষণ বন্ধ থাকার ফলে দক্ষিণ ভারতের উড়ানগুলিও দেরিতে ছাড়ছে। তবে এ দিন নিজেদের পাঠানো আবহ রিপোর্টেই ইন্ডিগো লিখেছে, বৃহস্পতিবার আগরতলা ছাড়া অন্য কোনও শহরে কুয়াশার সমস্যা ছিল না। ফলে বিশাখাপত্তনমের উড়ানের দেরি হওয়ার কোনও কারণ দেখা যাচ্ছে না।

কলকাতা বিমানবন্দরে বিমানসংস্থা এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে অবশ্য অন্য একটি ছবিও পাওয়া গিয়েছে। অভিযোগ, সময়সূচি মেনে কলকাতা এত উড়ান ছাড়ার জন্য যত কর্মী প্রয়োজন, তা নেই। বিমানবন্দরে নেমে আসার পরে বিমান দাঁড় করানোর ঠিক আগে যে ‘মার্শাল’-রা বিমানকে শেষ মুহূর্তে পথ দেখান, কলকাতায় সেই কর্মী রয়েছেন মাত্র পাঁচ জন। অথচ দিনে ৮৭টি বিমান নামে।

এ ছাড়া, এরোব্রিজ থেকে বিমানকে টেনে নেওয়ার জন্য আছে তিনটি টো-ট্র্যাক্টর। তাই একটি বিমানকে টো-এর জন্যও অপেক্ষা করতে হয়। বিমানবন্দরের এক অফিসারের কথায়, ‘‘আগে কলকাতায় নামার ২৫ মিনিট পরেই অন্য শহরে উড়ে যেত ইন্ডিগোর বিমান। এখন কলকাতায় এসে প্রায়ই ৪০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে ইন্ডিগোর বিমানকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indigo Flight
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE