E-Paper

জনজোয়ারে তৃতীয়াই যেন অষ্টমী, ফিকে হবে কি পুজোর মূল দিনগুলি

মহালয়া থেকেই মুখ্যমন্ত্রী পুজোর উদ্বোধন শুরু করার পরে গত কয়েক বছর ধরেই মণ্ডপে মণ্ডপে পুজো জনতার এমন ঢল দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয়া, তৃতীয়া থেকেই।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৩
সপরিবার: খিদিরপুর ২৫ পল্লির প্রতিমা।

সপরিবার: খিদিরপুর ২৫ পল্লির প্রতিমা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

রাত দেড়টা। শয়ে শয়ে মানুষ চলেছেন মণ্ডপের দিকে। ভিড় এমনই যে, মাঝেমধ্যেই মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ঘোষণা চলছে, ছবি তোলার জন্য দাঁড়িয়ে না পড়ার। কাশী বোস লেনের পুজো চত্বরের এই চেনা ভিড়ের চিত্র অষ্টমী বা নবমীর নয়, এ আদতে তৃতীয়ার রাতের!

মহালয়া থেকেই মুখ্যমন্ত্রী পুজোর উদ্বোধন শুরু করার পরে গত কয়েক বছর ধরেই মণ্ডপে মণ্ডপে পুজো জনতার এমন ঢল দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয়া, তৃতীয়া থেকেই। এ বছর মহালয়ার আগের দিনই পুজোর উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু রাতভর বৃষ্টির পরে দ্বিতীয়ায় জলবন্দি পরিস্থিতি তৈরি হয় কলকাতায়। পুজোয় বৃষ্টি ফের ভাসাতে পারে, এই আশঙ্কায় তৃতীয়া, চতুর্থীর দিনকেই নিজেদের মতো করে অষ্টমী বা নবমী ধরে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে পুজো জনতা। নানা মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে, ঠাকুর দেখার এমন অগ্রিম ভিড়ে কি ফিকে হয়ে যাচ্ছে সপ্তমী, অষ্টমী বা নবমীর মতো চিরাচরিত দুর্গাপুজোর দিনগুলি?

টালা বারোয়ারির মধুবনী কাজের থিম দেখে বেরোনোর মুখে এক দর্শনার্থী এ নিয়ে বললেন, ‘‘উদ্বোধন হয়ে যাওয়া মানেই পুজো শুরু। যত আগে থেকে দেখা শুরু করা যায়, তত বেশি ঠাকুর দেখার সুযোগ তৈরি হয়। তা ছাড়া, এ বার বৃষ্টিতে পুজো ভাসবে বলেই মনে হচ্ছে। তাই তৃতীয়াতেই অষ্টমী ভেবে বেরিয়ে পড়েছি।’’ একই দাবি টালা প্রত্যয়ের ‘বীজ অঙ্গন’ থিম দেখে বেরোনো এক জনের। তিনি বললেন, ‘‘এখন অষ্টমী আর নবমী রাখি শুধু ভাল খাওয়াদাওয়া আর আড্ডার জন্য। মণ্ডপে ঘোরা আগেই সেরে ফেলি।’’

ভিড়ের নিরিখে প্রতি বারই শোরগোল ফেলা শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের উদ্যোক্তা দিব্যেন্দু গোস্বামী আবার বললেন, ‘‘কে কোন দিন ঠাকুর দেখবেন, সেটা আমরা বলার কে? মহালয়ার আগেই আমাদের পুজোর উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। ফলে, উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিদিনই আমাদের জন্য সমান। আমাদের অষ্টমী, নবমী আর দ্বিতীয়া, তৃতীয়ায় পার্থক্য করা উচিত নয়।’’ আর একটি বড় পুজো সুরুচি সঙ্ঘের উদ্যোক্তাদের দাবি, ‘‘এত আগে থেকে ভিড় হওয়ায় আমাদের জন্য ভালই হয়েছে। এক বা দু’দিনে সব ভিড় এসে পড়লে খুব চাপ হয়ে যায়। এ বছর চতুর্থী দু’দিন পড়েছে। প্রথম চতুর্থী, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার আমাদের মণ্ডপে এক লক্ষ দর্শনার্থী এসেছেন। এক দিনে সাত লক্ষ লোক সামলানোর থেকে প্রতিদিন এক-দু’লক্ষ লোক সামলানো সহজ।’’ ত্রিধারা সম্মিলনীর উদ্যোক্তা তথা মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার আবার বললেন, ‘‘আগাম ভিড়ে অষ্টমী, নবমীর জৌলুস ফিকে তো হয়ইনি, উল্টে গোটা পুজোর জৌলুস বেড়েছে। বেশি দিন ধরে পুজো দেখার সুযোগ হওয়ায় দর্শনার্থী বেড়েছে।’’

‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সহ-সভাপতি তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের উদ্যোক্তা শাশ্বত বসু যদিও বললেন, ‘‘বাড়তে বাড়তে এ বার কত দিনের পুজোয় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটাই দেখার। শুরুতেই এত ভিড় সামলাতে হয় যে, পুজোর মূল দিনগুলোয় উদ্যোক্তাদের আর এনার্জি থাকে না।’’ সমাজসেবী সঙ্ঘের উদ্যোক্তা অরিজিৎ মৈত্রের কথায়, ‘‘পুজোটা আর পুজোর মতো থাকছে না। ভাইরাল করার রোগ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মণ্ডপে গিয়ে ঠাকুর দেখার মজাটাই হারিয়ে যাচ্ছে। ভাইরাল ভিডিয়োই এত আগে ভিড় টেনে আনছে। এতে আসলে পুজোর মজাটা হারিয়ে যাচ্ছে।’’

হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীনের উদ্যোক্তা সুতপা দাসের মন্তব্য, ‘‘ভাল জিনিস কিন্তু অল্প হওয়াই ভাল। নয়তো তার মূল্য থাকে না। দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রেও এটা মনে হয়, মনে করানোর সময় এসেছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja Durga Puja 2025

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy