ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে খিদিরপুর মনসাতলা বন্ধু সঙ্ঘের সরস্বতী প্রতিমা তৈরি হচ্ছে অন্য আঙ্গিকে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
বাঙালির শৈশব আছে। প্রৌঢ়ত্বও। মাঝে যৌবন পর্বটাই শুধু বড় লজ্জার, লুকিয়ে রাখার সময়। বিস্মৃত গল্পকার দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অশ্বমেধের ঘোড়া’য় এ দীর্ঘশ্বাস (অবিকল উদ্ধৃতি নয়, তবে কাছাকাছি) উঠে এসেছিল। ক’জন সেকেলে ছাড়া কে আর মনে রেখেছে! তবে, এই ২০২৪-এ আসন্ন সরস্বতী পুজো এবং ভ্যালেন্টাইন দিন-এর মণিকাঞ্চন যোগে উদ্বেল বঙ্গজীবন অন্য কথা বলছে। ‘অশ্বমেধের ঘোড়া’ গল্পটি নিষ্ঠুর কলকাতার পথেঘাটে একটু নিভৃতির অভাবে নানা অপমানের শিকার যুগলদের যন্ত্রণা মেলে ধরে। যৌন বুভুক্ষু ও অবদমিত শহরের অশালীনতায় রেখা আর কাঞ্চন কান্না গিলে রাস্তায় হাঁটতে থাকে। আর এই ২০২৪-এর কলকাতার যুগলেরা অন্তরঙ্গতার জন্য অ্যাপ যোগে নিভৃতিও কিনতে পারেন। ভ্যালেন্টাইন দিনে গত বছরও এ দেশে বিভিন্ন শহরেই নির্দিষ্ট অ্যাপ সূত্রে ঘর ভাড়ার প্রবণতা ৩৫ শতাংশ বেড়েছিল বলে সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছিল। তাতে কলকাতা জাতীয় গড়ের থেকে এগিয়েই ছিল।
এ কালে যৌবন বয়সের সীমারেখায় আটকে নেই। বিভিন্ন ডেটিং অ্যাপ, ভরন্ত ভ্যালেন্টাইন বাজার তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। তবে, একযোগে সরস্বতী পুজো এবং ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র উৎসাহে অনূর্ধ্ব ৩০ বা তরুণতর জেনারেশন জ়েড, এমনকি সবে টিনএজ ছোঁয়া জেনারেশন আলফারাই পুরোভাগে। একেবারে খুদেদের কচি-সংসদও এ কালে ভ্যালেন্টাইন দিন নিয়ে
সজাগ, সরব। আবার বহু স্কুলেই সরস্বতী পুজোর সংস্কৃতি বহমান। শ্যামবাজার পাড়ার শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ের জীববিদ্যার শিক্ষিকা তনুশ্রী সেন কিন্তু এক দিনে দুটো উপলক্ষ মিশে যেতে ছাত্রেরা একটু বিমর্ষ বলেই মনে করছেন। তনুশ্রীর কথায়, “বাঙালির প্রেম দিবস
সরস্বতী পুজোয় স্কুলের দরজা সবার জন্য খোলা। কোনও উঁচু ক্লাসের ছেলে বান্ধবীকেও সঙ্গে করে আনে। তবে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে অন্য দিনে পড়লে যুগলেরা আনন্দ করার একটা বাড়তি উপলক্ষ পেত!” আরও অনেক স্কুল, কলেজের শিক্ষকেরা কিন্তু মনে করছেন, দুটো দিন মিশে যাওয়ায় ১৪ ফেব্রুয়ারি অঞ্জলির নাম করে সকাল-সকাল বেরিয়ে ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে অভিসারে (পড়ুন, ডেট) সুবিধাই পাবে আনকোরারা। কিন্তু বেশির ভাগের চোখে সরস্বতী পুজো মানে বাসন্তী রঙা শাড়ি, পাঞ্জাবির কেতায় স্কুল-কলেজেই হলুদ বসন্ত আমেজ! আর বাজারচলতি ভ্যালেন্টাইন্স ডে হল স্কুল-কলেজ কেটে ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে হারিয়ে যাওয়ার দিন। এ দুয়ের ঠোকাঠুকিতে ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই টানাপড়েনে জেরবার।
এই সঙ্কটে মুশকিল-আসান খুঁজে পেয়েছেন খিদিরপুরের মনসাতলার একটি ক্লাবের সরস্বতী পুজোর উদ্যোক্তারা। পুজোর তরুণ কর্তা, জেন জ়েড অনিকেত বর্ধন জানালেন, এ বার তাঁদের ভ্যালেন্টাইন থিমের সরস্বতী ঠাকুরের চালচিত্র জুড়ে লাল টুকটুকে প্রতীকী ‘হার্ট’ বা হৃদয়ের সাজ। তরুণ তুর্কিদের ধরে রাখতে দুপুরে মণ্ডপেই নানা রকম ‘কাপল গেমস’-এর আয়োজন হয়েছে। তপন-স্মিতা, সঞ্জয়-রূপালি বা সমীর-দীপশিখাদের জন্য জুটিতে বুকে হৃদয়াকৃতি বেলুন বয়ে নিয়ে যাওয়ার খেলা বা অভিনব বাস্কেটবলের বন্দোবস্ত হচ্ছে।
ভ্যালেন্টাইন উপহারের বিরাট বাজার অবশ্য শুধু দোকা নয়, দোকা হতে চাওয়া একাদেরও লোভ দেখায়। তবে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য দিনটা বিরস, বিস্বাদ। গত সরস্বতী পুজোয় কলেজে বিয়ারের বোতল উদ্ধার বা মফস্সলি স্কুল চত্বরে বহিরাগত ছোকরাদের ভিড় নিয়ে জল্পনা চলছে শিক্ষকদের স্টাফ রুমে।
চির নতুন প্রেমের যন্ত্রণা বা সঙ্গীত আজও আসে শহরের যৌবন-রাজ্যে! ‘‘তবে তাতে সক্কলে খড়কুটোর মতো ভেসে যাচ্ছে ভাববেন না’’, বললেন জেন জ়েড অনুস্মিতা গুহ। “প্রেমের সম্পর্কে নানা পরত থাকে। হাবুডুবু খেয়ে নিজেকে ভালবাসতে ভুললে প্রেমটা মিষ্টি থাকে না!” শেষ কথা বললেন একালিনীই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy