E-Paper

পুড়েছে পরিচয়পত্র, এসআইআর নিয়ে চিন্তায় আগুনে ঘর হারানো বস্তিবাসীরা

গত বছরের ডিসেম্বরে তপসিয়ার মজদুরপাড়া এবং দুর্গাপুর সেতুর নীচে আগুন লাগে। ভস্মীভূত হয় বহু ঝুপড়ি। এসআইআর-এর কাজ করতে মজদুরপাড়াতেও পৌঁছে গিয়েছেন বিএলও।

মিলন হালদার

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৪০
আগুনে পুড়েছে ভোটার কার্ড। তাই চিন্তায় দুর্গাপুর সেতুর নীচে বসবাসকারী বেবি দাস।

আগুনে পুড়েছে ভোটার কার্ড। তাই চিন্তায় দুর্গাপুর সেতুর নীচে বসবাসকারী বেবি দাস। —নিজস্ব চিত্র।

চলতি বছরের এপ্রিলে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে উদ্বিগ্ন মুখে বসেছিলেন স্বপ্না সরকার। সে বার প্রগতি ময়দান থানা এলাকার পাগলাডাঙা খালধারের আগুনে অন্যদের সঙ্গে তাঁর ঘরও পুড়েছিল। তবে এ বার স্বপ্নার আশঙ্কা, ছেলেটা সঙ্গে থাকতে পারবে কিনা। ছেলেকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে না তো? কারণ, ওই আগুনে ভস্মীভূত হয়েছিল এলাকার একাধিক ঝুপড়ি, সঙ্গে স্বপ্না এবং তাঁর বড় ছেলে রাজেশ সরকারের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ডের মতো পরিচয়পত্রও। অনেক দৌড়াদৌড়ি করে নিজের সব পরিচয়পত্র ফের বানিয়ে নিতে পেরেছেন স্বপ্না। কিন্তু ছেলের এই সব পরিচয়পত্র এখনও বানানো সম্ভব হয়নি।

এই মুহূর্তে রাজ্যে চলছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজ। সম্প্রতি স্বপ্নার কাছে এসেছিলেন বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)। স্বপ্না বলেন, ‘‘ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছি।’’ স্বপ্নার মতোই উদ্বিগ্ন নিউ আলিপুরের দুর্গাপুর সেতুর নীচের ঝুপড়ির বাসিন্দা বাপি দাস, তরু হালদারেরা। গত ডিসেম্বরের ভয়াবহ আগুনে তাঁদের আপনজনেরাও ভোটার, আধার কার্ড হারিয়েছেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে তপসিয়ার মজদুরপাড়া এবং দুর্গাপুর সেতুর নীচে আগুন লাগে। ভস্মীভূত হয় বহু ঝুপড়ি। এসআইআর-এর কাজ করতে মজদুরপাড়াতেও পৌঁছে গিয়েছেন বিএলও। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই এলাকার বহু মানুষের ঘর আগুনে পুড়ে যাওয়ায় আধার, ভোটার কার্ড নেই। আতঙ্ক এতটাই যে, বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি কেউ। এক বাসিন্দা সুরাইয়া বিবি বলেন, ‘‘আমার সব ঠিক আছে। একটা ব্যাগের মধ্যে আধার, ভোটার, প্যান কার্ড রাখা ছিল। আগুন লাগতে কোনও রকমেসেই ব্যাগটা ঘর থেকে বার করে আনি।’’ পাশ থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা বললেন, ‘‘তুমি না হয় সব কিছু বাঁচাতে পেরেছ। যাঁদের পুড়ে গিয়েছে, তাঁদের কী হবে?’’

আতঙ্কে রয়েছেন দম্পতি বাপি দাস-বেবি দাস। দুর্গাপুর সেতুর নীচের অগ্নিকাণ্ডে ঘর হারিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। তবে, দুর্গাপুর সেতুর নীচে কোনও রকমে রয়ে গিয়েছেন বাপি এবং বেবি। বেবির ভোটার কার্ড, আধার কার্ড পুড়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আধার কার্ড আবার হয়েছে। কিন্তু ভোটার কার্ড এখনও হয়নি। খুব চিন্তায় আছি।’’ বাপির পরিচয়পত্র অবশ্য সবই রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আগুন লাগার পরে কোনও রকমে আমার ভোটার কার্ড, আধার কার্ড বার করতে পেরেছিলাম। কিন্তু স্ত্রীর পরিচয়পত্রগুলি অন্য ঘরে থাকায় বাঁচাতে পারিনি। আমাদের আলাদা করে দেওয়া হবে কিনা, সেই চিন্তায় আছি।’’

ওখানকারই বাসিন্দা তরু হালদার নিজের পুড়ে যাওয়া ভোটার-আধার কার্ড বানিয়ে নিতে পারলেও তাঁর মেয়ে মিন্টা হালদারের আধার কার্ড এখনও বানানো হয়নি। ফলে, মেয়ের জন্য চিন্তায় রয়েছেন মা। মিন্টা এখন তাঁর মেয়ের কাছে দিল্লিতে আছেন। সেখান থেকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘আগুনে আমার সব পরিচয়পত্র পুড়ে গিয়েছিল। রেশন কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড হয়ে গেলেও ভোটার কার্ড এখনও হয়নি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কলকাতায় ফিরব। আমার প্রথম কাজই হবে ভোটার কার্ড বানানো।’’

ছেলের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড বানানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা করছেন স্বপ্নাও। তিনি জানান, তাঁর বড় ছেলে রাজেশ গুজরাতের গ্রিলের কারখানায় কাজ করেন। কিছু দিনের মধ্যেই ফিরবেন। স্বপ্না বলেন, ‘‘বাড়ি পুড়ে গিয়েছে। সেটা মেরামত করার সরকারি টাকা এখনও পাইনি। ছেলেরও পরিচয়পত্র আগুনে পুড়েছে। সব মিলিয়ে উদ্বেগে রয়েছি।’’ স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি জীবন সাহা বলেন, ‘‘পুরসভা থেকে এই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। যাঁদের ঘর-বাড়ি পুড়ে গিয়েছে, সরকারি নিয়ম মেনে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আর যাঁদের ভোটার-আধার কার্ড পুড়ে গিয়েছে, এসআইআর-এ তাঁদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা-ও দেখা হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Election Commission Fire break out

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy