E-Paper

গুলি চালায় ভাড়াটে খুনি, টিটাগড়-কাণ্ডে গ্রেফতার তিন

ধৃতদের নাম মহম্মদ সানি, মহম্মদ আরিফ এবং সানির স্ত্রী শবনম বানু। গুলি যে চালিয়েছিল, সে এক জন পেশাদার খুনি বলে ধৃত তিন জনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৪৭
An image of Gun

গুলি যে চালিয়েছিল, সে এক জন পেশাদার খুনি বলে ধৃত তিন জনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে। প্রতীকী ছবি।

টিটাগড়ে ব্যবসায়ী আনোয়ার আলিকে (৫০) খুনের ঘটনায় মোবাইল ফোনের কথোপকথনের সূত্র ধরে মূল অভিযুক্ত-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম মহম্মদ সানি, মহম্মদ আরিফ এবং সানির স্ত্রী শবনম বানু। গুলি যে চালিয়েছিল, সে এক জন পেশাদার খুনি বলে ধৃত তিন জনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে। তদন্তকারীরা জানান,নৈহাটি থেকে তাকে ভাড়া করেছিল আরিফ। শুক্রবার রাতেই সানি, আরিফ ও শবনম পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে ধরা পড়ে। তাদের আটক করে নিয়ে আসার পরে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ ভেঙে পড়ে। কেন খুন করা হল, আরিফের কাছ থেকে তা শোনার পরে তিন জনকে মুখোমুখি বসিয়ে ফের জেরা করেন পুলিশ আধিকারিকেরা। তাতে পরস্পরের বয়ানে অসঙ্গতি মেলায় তিন জনকেই গ্রেফতারকরে পুলিশ।

শনিবার ধৃতদের ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘স্কুটার ফেলে দিয়ে গঙ্গা পেরিয়ে হুগলি হয়ে বর্ধমানে পৌঁছে গিয়েছিল অভিযুক্তেরা। শবনম অবশ্য আগেই গা-ঢাকা দিয়েছিল। শবনম ও সানির ফোনের টাওয়ারের অবস্থান ধরে তাদের খোঁজা শুরু হয়েছিল। কারণ, সকালে টাকা দেওয়া নিয়ে শবনমের কাছ থেকেই আনোয়ারের কাছে ফোন এসেছিল।’’ স্কুটারটি ঘটনার পরপরই আটক করেছিল পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, টিটাগড়ের উরনপাড়ায় সানির বাড়ি। বছর পাঁচেক আগে একটি খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। বেশ কিছু দিন হাজতবাসের পরে ছাড়া পেয়ে টিটাগড়ে ফিরলে আনোয়ারের ছেলে প্রিন্সের সঙ্গে তার যোগাযোগ তৈরি হয়। এর পরেই আনোয়ারের ব্যবসার সঙ্গে সে যুক্ত হতে চায়। আনোয়ারের তখন জমিজমার রমরমা ব্যবসা। সেই সঙ্গে তিনি নামী-দামি ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনের শোরুমও খুলেছেন স্থানীয় আলি হায়দর রোডে। দোকান সামলাতেন আনোয়ারের ছেলে। সেখান থেকেই মোবাইল নিয়ে বাইরে বিক্রি করত সানি। কিন্তু গোল বাধে মাসকয়েক আগে। আনোয়ারের ওই দোকান থেকে প্রায় চার লক্ষ ৬২ হাজার টাকার মোবাইল নিয়েও টাকা ফেরত দিচ্ছিল না সানি, এমনটাই অভিযোগ। এমনকি, টাকা চাইলে আনোয়ারের ছেলের সঙ্গে তার তুমুল বাদানুবাদ হয়। বিষয়টি জানতে পেরে আনোয়ার সানিকে ফোন করে টাকার জন্য চাপ দেন। ধারে মোবাইল ফোন দেওয়াও বন্ধ করে দেন। আনোয়ারের সঙ্গে এই টাকা নিয়ে গত তিন মাসে সানির একাধিক বার ঝগড়া হয়েছে বলে নিহত ব্যবসায়ীর পরিবারের দাবি।

তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় সানি স্বীকার করেছে, এক দিকে আনোয়ারের টাকা না দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি, অন্য দিকে, ব্যবসা মার খাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়েই সে বিষয়টি আরিফকে জানায়।আরিফ সানির দীর্ঘদিনের বন্ধু। দু’জনে মিলে আনোয়ারকে খুনের পরিকল্পনা করে। আরিফ সানিকে আশ্বস্ত করে বলে, আনোয়ারকে খুন করতে সে সব রকম সাহায্য করবে। আরিফের পরিচিত রোহিত নামে এক দুষ্কৃতীর সঙ্গে সানির কথা হয়। নৈহাটি থেকে আরিফই ‘শার্প শুটার’ ভাড়া করে। তার আগে শবনম আনোয়ার ও তাঁর ছেলের সঙ্গে ফোনেযোগাযোগ রাখতে শুরু করে তাঁদের গতিবিধি জানার জন্য। শুক্রবারঘটনার আগেই শবনমের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল আনোয়ারের। টাকা ফেরত কোথায় দেওয়া হবে, তা নিয়ে। সানি বকেয়া টাকা নিয়ে কখন বেরিয়েছে, এ সব কথোপকথনের পরেই নমাজ সেরে সানির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন আনোয়ার। আনোয়ারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে শবনমের যে কথা হয়েছিল, পুলিশ সেটিরও কল রেকর্ড ইতিমধ্যেই খতিয়ে দেখেছে। যে গুলি করেছিল, তার খোঁজ চলছে বলেও তদন্তকারীরা জানান।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Shoot out Shootout at Titagarh arrest

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy