Advertisement
E-Paper

জেসপ এখন নজরে, চোর তাই গৃহস্থ-ঘরে

এত দিন যাঁরা ‘ব্যস্ত’ থাকতেন জেসপে, এখন তাঁরা সিঁদ কাটতে শুরু করেছেন গৃহস্থ বাড়িতে। এ ছাড়া যে আর কোনও উপায়ও নেই তাঁদের। আগুন লাগার পরে জেসপে পাহারায় কড়াকড়ি বেড়েছে।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৯

এত দিন যাঁরা ‘ব্যস্ত’ থাকতেন জেসপে, এখন তাঁরা সিঁদ কাটতে শুরু করেছেন গৃহস্থ বাড়িতে।

এ ছাড়া যে আর কোনও উপায়ও নেই তাঁদের। আগুন লাগার পরে জেসপে পাহারায় কড়াকড়ি বেড়েছে। আঁটোসাঁটো হয়েছে কারখানার নিরাপত্তা।

স্বভাবতই রোজগারে টান পড়েছে জেসপ কারখানায় চুরি করতে আসা চোরেদের। তা-ও রবিবার রাতে একদল এসেছিলেন বুক ঠুকে। কিন্তু ধরা পড়ে যান পুলিশের হাতে। ফলে এখন জেসপের দিকে বাড়ানোর আগে কেঁপে যাচ্ছে তাঁদের পা। রুট ঘুরিয়ে তাঁরা এখন আবাসিক এলাকায় ঢুকছে।

পুলিশই জানাচ্ছে সে কথা। এবং দমদম এলাকায় সম্প্রতি অপরাধের ঘটনা আচমকা বেড়ে যাওয়ার পিছনে একেই অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা।

রবিবার রাতে এমন দুই নাবালক ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে গ্রেফতারও করেছে দমদম থানার পুলিশ। এই দুই ছিনতাইবাজ এত দিন জেসপ থেকে মাল সরানোর কাজ করত বলে পুলিশ জানিয়েছে। সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধ্যায় দমদমের মজুমদার পাড়ায় স্থানীয় বাসিন্দা অনিমা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাঁর গলার হার ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টা করে ওই দুই কিশোর। অনিমাদেবী চিৎকার করলে রাস্তার লোকজন ওই দুই কিশোরকে তাড়া করে ধরে ফেলেন। পরে দু’জনকেই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (জোন-২) ধ্রুবজ্যোতি দে এ দিন জানান, ওই দুই কিশোর জেসপের ভিতরে চুরি করত। তারা জেরায় সে কথা স্বীকারও করেছে। তিনি বলেন, ‘‘জেসপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজা হয়েছে। ফলে এখন এই ধরনের অপরাধীরা চেষ্টা করবে আবাসিক এলাকায় চুরি-ছিনতাই করার। তবে পুলিশও সতর্ক থাকবে।’’

দীর্ঘদিন ধরেই জেসপের ভিতরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে কার্যত কিছু ছিল না। রাতের অন্ধকারে পাঁচিলের ভাঙা অংশ দিয়ে চুপিসাড়ে ভিতরে ঢুকে চোরেরা লোহার যন্ত্রাংশ চুরি করত। জেসপের কর্মীরাই জানিয়েছেন, পাঁচিলের পাশে লরি দাঁড় করিয়ে জেসপ কারখানার ভিতর থেকে লোহা-লক্কড় সহ অন্য যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যেত ওরা। সেই লোহা ঘুরপথে কালোবাজারীদের হাতে পৌঁছে যেত। পুলিশের দাবি, চোরেদের মধ্যে যেমন কালোবাজারীদের লোহা সরবরাহকারীরা রয়েছে, তেমনই একেবারে ছিঁচকে চোর আর মাদকাসক্তদের দলও রয়েছে।

ঘটনাচক্রে জেসপের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের কড়াকড়ি শুরু হওয়ার পরেই শুক্রবার দমদম আবাসিক এলাকায় দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের তরফ থেকে থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দাগি চোরেদের মধ্যে কারা আগে জেসপে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে তার আলাদা তালিকা করতে বলা হয়েছে।

তবে কাজটা যে কঠিন, তা মেনে নিচ্ছেন পুলিশকর্তারাই। পুলিশ জানাচ্ছে, দমদম তো বটেই, নিমতা, বিরাটি, বেলঘরিয়া, বাঁকরা, মাইকেলনগর, মধ্যমগ্রামের মতো যশোহর রোড-লাগোয়া এলাকাগুলিতে মাদকসক্ত ও ছিঁচকে চোরেদের আস্তানা রয়েছে। কর্তাদের মতে, এই চোরেদের মধ্যে কারা এতদিন শুধু জেসপে চুরি করত তা খুঁজে বার করা প্রায় অসাধ্য। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা স্বীকারও করেছেন বিষয়টি। তিনি বলেন, ‘‘চোরেদের কাছে জেসপ ছিল একটা উন্মুক্ত খনির মতো। যে পারত সে-ই চুরি করত। তাই জেসপের চোরদের আলাদা করে চিহ্নিত করাটা মুশকিল। তবু করতে তো হবেই।’’

দমদমের আশপাশের এলাকার থানার অফিসারেরাও বেশ শঙ্কিত। তাঁরাও মনে করছেন জেসপে চুরি আটকে যাওয়ায় চোরেরা তাঁদের এলাকাতেও ঢোকার চেষ্টা করবে।

jessop theft dumdum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy