ময়দানেই পোশাক কেনার ভিড়।
শহর জুড়ে যেন মেলা বসেছে! ধর্মতলা-পার্ক স্ট্রিট চত্বরে ফুটপাতের সারিবদ্ধ দোকানে শনিবার বিকিকিনি চলল ‘ব্রিগেড সেল’-এর বিশেষ ছাড়ে!
এ দিন ভোর থেকেই ধর্মতলা চত্বরে ব্রিগেড উপলক্ষে বিশেষ ভাবে প্রস্তুত ছিলেন দোকানিরা। কোথাও সোয়েটার-মোজা-টুপিতে দামের উপরে অর্ধেক ছা়ড়, তো কোথাও শাড়ি বা রোদচশমা একটা কিনলে আর একটা ‘ফ্রি’!
সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ পশ্চিম বর্ধমান থেকে ধর্মতলায় পৌঁছে যান বছর চল্লিশের পুষ্পিতা সাহা। বিশেষ ছাড়ের টানে সভাস্থলে যাওয়ার আগেই দোকানে ঢুকে পড়েন। তাঁর কথায়, ‘‘দিদি তো বারোটার আগে আসবেন না। হাতে সময় রয়েছে। সস্তায় কেনার সুযোগও আছে। তাই দোকানে এসেছি।’’ ধর্মতলায় শাড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন রাকেশ যাদব। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোর সময়ে সকাল থেকেই কেনাবেচা শুরু হয়। আজও ঠিক পুজোর মতোই সকাল থেকে খদ্দের আসছে।’’
গঙ্গার জল নিয়ে যাওয়ার জন্য বাজে কদমতলা ঘাটে বিকোচ্ছে পুরনো বোতল।
গঙ্গার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি হচ্ছে গঙ্গার জল ভরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সভাস্থলে আসা অনেকেই সেই বোতল কিনে গঙ্গার জল ভরে নেন।
হেস্টিংস এলাকায় রাস্তার দু’দিকই মেলার চেহারা নিয়েছিল এ দিন। কেউ প্লাস্টিক বিছিয়ে, কেউ বা দু’চাকার ট্রলি নিয়ে বিক্রি করছিলেন জামাকাপড়, প্রসাধনী, ঝুটো গয়না, সাবান, পাউডার, গামছা, শীতের জ্যাকেট, উলের টুপি, মোজা-সহ হরেক জিনিস।
এ দিন সকাল থেকে ব্রিগেড উপলক্ষে হাওড়া স্টেশন চত্বরও হয়ে উঠেছিল মিলন মেলা। দূরদূরান্ত থেকে ট্রেনে করে হাজার হাজার মানুষ স্টেশনে এসে পৌঁছন। সকাল আটটার পরে হাওড়া স্টেশনে একের পর এক ট্রেন এসেছে। তার পরে স্টেশনের ভিতরেই বাজতে শুরু করেছে ধামসা-মাদল। সঙ্গে আদিবাসী নৃত্য। বর্ধমানের পৌষ গ্রাম থেকে ধামসা-মাদল নিয়ে এসেছিলেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। মোদী-বধের পথনাটিকা করতে করতে হাওড়া ফেরিঘাটে পৌঁছেছে পুরুলিয়ার ছো নাচের একটি দল।
সকালেই দত্তাবাদ থেকে ব্রিগেডের দিকে রওনা দেওয়া কয়েক হাজার মানুষের এক বর্ণাঢ্য মিছিল দেখা যায়। তাতে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরা হয়েছিল। কীর্তনের দল, ছো শিল্পী থেকে শুরু করে বাউলরাও ছিলেন সেই মিছিলে।
শুধু কেনাকাটা আর ঘোরাই নয়, ব্রিগেডে আসা লোকজন পিকনিকও করেছেন শহরে। এক জায়গায় দেখা যায়, রাস্তার উপরেই রীতিমতো পাত পেড়ে বসে খাওয়াদাওয়া করছেন অনেকে। যাঁরা যানজটের জন্য ব্রিগেড পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি, তাঁদের অনেকে পথেই ত্রিপল টাঙিয়ে রান্নাবান্না শুরু করে দেন।
উত্তর কলকাতার একাধিক রাস্তায় শনিবার এই পিকনিকের ছবি দেখা গিয়েছে। কালনা থেকে বাসে ৭৫ জনকে নিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় নেতা মদন ঘোষ। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের পরে আর গাড়ি এগোয়নি। দুপুরের খাওয়ার জন্য মাংস, চাল, আলু, রান্নার গ্যাস সঙ্গেই এনেছিলেন। পিকনিকে যেমন হয় আর কী!
জনতা ঢুকে পড়ল ইডেন গার্ডেন্স স্টেডিয়ামেও।
পিকনিক ও কেনাকেটার সঙ্গে শহরের দ্রষ্টব্য স্থানগুলিও ঘুরে দেখলেন অনেকে। কেউ বাবুঘাটে গঙ্গায় ডুব দিলেন। কেউ ঘুরে দেখলেন ভিক্টোরিয়া। কেউ ঢুঁ মারলেন ইডেন গার্ডেন্সে।
ইডেনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যাটিং দেখেছেন টিভিতে। কিন্তু চাক্ষুষ করা হয়নি সেই মাঠ। এ দিন সুযোগ পেয়ে গেলেন পূর্ব মেদিনীপুরের সুজয় ঘোষ। ইডেনের পাশ দিয়ে ব্রিগেডে যাওয়ার সময়ে তিনি দেখতে পান, সেখানে প্রচুর মানুষ ঢুকে পড়েছেন। আর অপেক্ষা করেননি সুজয়। তিনিও সটান ঢুকে পড়েন সেখানে। তাঁরই মতো সেখানে এসেছিলেন বীরভূমের প্রসেনজিৎ বসু। বললেন, ‘‘টিভিতে হিরো কাপের সেই ঐতিহাসিক ফাইনাল তো এখানেই হয়েছিল। সেই মাঠ দেখতে পেলাম। স্বপ্নপূরণ হল।’’
ছবি: শৌভিক দে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy