E-Paper

‘ছায়া’-দৌড়ে পিছিয়েই কলকাতার তৃণমূল

এসআইআর-এর কাজে রাজ্যের সর্বত্র দলকে জড়িয়ে রাখার কৌশল নিয়েছিল তৃণমূল। প্রস্তুতি-পর্বে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি বা বিএলও-র সঙ্গে দলের মনোনীত বিএলএ-২’দের ছায়ার মতো লেগে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

রবিশঙ্কর দত্ত

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৩১

—প্রতীকী চিত্র।

কলকাতা শহরেই সাংগঠনিক সক্রিয়তায় সব চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস! জনপ্রতিনিধিত্বের নিরিখে এই তথ্য ‘ভুল’ বলে মনে হলেও ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় দলের দেওয়া কাজের বিচারে অন্তত এই অবস্থাই স্পষ্ট হচ্ছে। দলের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা রাজ্যের অন্যান্য জেলা ৯০% বা তার বেশি পূরণ করতে পারলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত কলকাতা শহরে তা মাত্র ৭২%। শীর্ষ নেতৃত্বের হুঁশিয়ারির পরেও এই তথ্য বলছে, নীচের তলায় দলীয় কর্মীদের সে ভাবে নামাতে পারেননি তাঁরা।

এসআইআর-এর কাজে রাজ্যের সর্বত্র দলকে জড়িয়ে রাখার কৌশল নিয়েছিল তৃণমূল। প্রস্তুতি-পর্বে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি বা বিএলও-র সঙ্গে দলের মনোনীত বিএলএ-২’দের ছায়ার মতো লেগে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনে অন্য জেলাগুলির থেকে পিছিয়ে পড়েছেন কলকাতার দুই সংসদীয় কেন্দ্রের দলীয় নেতারা। উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতায় এ দিন দুপুর পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী, গণনা-পত্র জমার কাজ হয়েছে ৭১ ও ৭৩%। প্রাথমিক পর্যালোচনায় এই ইঙ্গিত পেয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি। দুই সাংসদ, ১১ বিধায়ক ও শতাধিক পুর-প্রতিনিধি নিয়েও এই ‘দুর্বলতা’ দেখে চিন্তিত নেতারা। উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার এই অবস্থা সম্পর্কে দুই জেলার দুই নেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় ও কুণাল ঘোষের বক্তব্য মোটামুটি এক। তাঁদের দাবি, ‘‘কিছুটা পিছিয়ে আছি ঠিকই। তবে হয়ে যাবে, সকলেই রাস্তায় আছেন।’’

রাজ্যের ২৯৪টি আসনে গণনা-পত্র পূরণে ১০০% লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে বুথ স্তরে দলকে সক্রিয় করতে চেয়েছিলেন অভিষেক। সর্বত্র শিবির, ‘ওয়ার রুম’ তৈরি করে সাধারণ মানুষকে পাশে থাকার বার্তা দিয়ে জনসংযোগে নেমেছিল তৃণমূল। দলের ‘অ্যাপে’ গণনা-পত্র জমার এই হিসেবে তাই মাপছেন দলীয় নেতৃত্ব। তাতে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের বেশির ভাগ জেলাতেই সাংগঠনিক সক্রিয়তাকে ‘ইতিবাচক’ মনে করছে তৃণমূল। কোচবিহার থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা পর্যন্ত প্রায় সব জেলায় গণনা-পত্র জমার হিসেব ছুঁয়েছে ৯৮ থেকে ৯৯%। বিজেপির দখলে থাকা জেলাগুলি থেকে আসা হিসেবও বলছে, দলীয় প্রতিনিধি বা বিএলএ-রা প্রায় ১০০% জায়গাতেই ‘ছায়া’ হয়ে ঘুরেছেন বিএলও-দের সঙ্গে।

যে সব জায়গায় সাংগঠনিক সক্রিয়তার অভাব ছিল, শেষ পর্যালোচনা বৈঠকে তা জানিয়ে রাজ্য থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এক দল নেতাকে। তার মধ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরেও দলের কাজে শিথিলতা দেখে মন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে পাঠিয়েছিলেন অভিষেক। সাত দিনে সেই জেলায় সক্রিয়তা বেড়েছে। বিধানসভা ভিত্তিক হিসেবে গণনা-পত্র জমার কাজে জেলার ১৬ আসনের গড় ৯৬%।

বিজেপি-প্রভাবিত উত্তরবঙ্গে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের মতো জেলায় দলের এই সক্রিয়তা ‘ইতিবাচক’ বলে মনে করছে তৃণমূল। একই ভাবে এই কাজে মালদহ ও মুর্শিদাবাদে গোড়া থেকেই ভাল সাড়া পেয়েছে তারা। দু-একটি জায়গায় ‘ফাঁক’ ভরতে এই দুই জেলায় তদারকিতে পাঠানো হয়েছে দুই সাংসদ সামিরুল ইসলাম ও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একই ভাবে হুগলি ও দুই বর্ধমানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy