Advertisement
E-Paper

পুলিশকে তোপ খোদ তৃণমূল বিধায়কের

এত দিন বিরোধীরা বলতেন। এ বার সেই একই অভিযোগ খোদ শাসক দলের এক বিধায়কের গলায়। প্রসঙ্গ: এন্টালির গোলমাল।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৭:২৭
স্বর্ণকমল সাহা

স্বর্ণকমল সাহা

এত দিন বিরোধীরা বলতেন। এ বার সেই একই অভিযোগ খোদ শাসক দলের এক বিধায়কের গলায়। প্রসঙ্গ: এন্টালির গোলমাল।

যে এলাকা থেকে তিনি এ বারেও ভোটে জিতে বিধানসভায় গিয়েছেন, সেই এন্টালিতে বৃহস্পতিবার সমাজবিরোধীদের তাণ্ডব নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা তোপ দাগলেন পুলিশের বিরুদ্ধেই। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ সঠিক ভূমিকা নিচ্ছে না। তাই গ্রেফতার হলেও দ্রুত জামিন পেয়ে যাচ্ছে অভিযুক্তেরা।

বৃহস্পতিবার কিছু ক্ষণের ব্যবধানে দু’-দু’বার গুলি চলে এন্টালিতে। আহত হন দুই যুবক। ওই এলাকায় দুষ্কতীদের তাণ্ডব নতুন নয়। কিন্তু একই দিনে দু’বার গুলি চালানোর ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুদ্ধ স্বর্ণকমলবাবু। শুক্রবার ফোনে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ যদি সত্যিই অপরাধীদের শাস্তি চায়, তা হলে ধৃতেরা জামিন পায় কী ভাবে? স্থানীয় থানা কড়া হাতে রাশ ধরছে না। তাই বারংবার একই ঘটনা ঘটছে।’’ এ বিষয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও অভিযোগ জানাবেন বলে জানান স্বর্ণকমলবাবু।

পুলিশ সূত্রের খবর, সে দিন দুপুরে দু’টি জায়গায় গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে এলাকার দুই দুষ্কৃতী দলের বিরুদ্ধে। দু’টি ঘটনাই এন্টালি থানা এলাকায়। প্রথমটি বিবির বাগান রোডে। দ্বিতীয়টি মতিঝিল কলোনিতে।

পুলিশ জানায়, বিবির বাগানের ঘটনায় শেখ আসলাম নামে এক জনের ডান পায়ে গুলি লাগে এবং মতিঝিল কলোনিতে সামেদ আলি ওরফে হাসু নামে এক ব্যক্তির হাতে গুলি লাগে। দু’জনেরই চিকিৎসা চলছে এন আর এস হাসপাতালে। গুলি চালানোর পাশাপাশি দুষ্কৃতীরা ওই দুই এলাকায় ব্যাপক হারে বোমাবাজিও করেছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ওই ঘটনার পরেই পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু শুক্রবার রাত পর্যন্ত বাকি অভিযুক্তদের কোনও সন্ধান পাননি তদন্তকারীরা। আর তাতেই ক্ষুব্ধ এলাকার বিধায়ক।

বিধায়কের অভিযোগ যে যুক্তিসঙ্গত, তা মেনে নিয়েছেন কলকাতা পুলিশের একাংশও। তাঁরা বিধায়ককে সমর্থন জানিয়ে বলছেন, পুলিশের মনোভাবের ফলেই এলাকায় দুষ্কৃতীদের এত বাড়বাড়ন্ত। যার ফলে একের পর এক গুলি চালানোর মতো ঘটনা ঘটছে। তবে পুলিশের নিচুতলার একাংশের দাবি, এলাকার অভিযুক্তেরা সকলেই এখন রয়েছে শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায়। তাই কোনও পুলিশকর্মীই তাদের গ্রেফতার করে শাসক দলের বিষ নজরে পড়তে চান না।

অভিযোগ উড়িয়ে স্বর্ণকমলবাবুর দাবি, ‘‘ওই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। ক্ষমতায় থাকার সুবাদে অনেকেই শাসক দলের ছাতার নীচে আসে। তবে তাদের কোনও ভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হয় না।’’ তিনি ওই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার জন্য বারংবার পুলিশের কাছে আবেদন করেছেন বলে দাবি স্বর্ণকমলবাবুর। লালবাজারের কর্তারা অবশ্য এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।

বৃহস্পতিবারের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দাদের দাবি, বিবির বাগানে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের এক-একটি ফ্ল্যাটকে প্রোমোটার একাধিক বার বিক্রি করেছেন। তার জেরেই সে দিনের গণ্ডগোল। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত নিয়াজুরের এক আত্মীয় প্রোমোটার মাজহার ইকবালের কাছ থেকে ওই বহুতলের একটি ফ্ল্যাট বুক করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে সেই ফ্ল্যাট না দিয়ে এলাকার অন্য এক বাসিন্দার কাছে তা বিক্রি করে দেন প্রোমোটার। আর সেই ফ্ল্যাট নিয়েই নিয়াজুরের সঙ্গে এলাকাবাসীর গোলমালের শুরু। তার জেরেই দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব। অভিযোগ, নিয়াজুরের সঙ্গে ছিল কালো বাপির মতো দুষ্কৃতীরা। দুষ্কৃতীদের হামলায় আহত হন শেখ আসলাম নামে এক বাসিন্দা। এ দিকে, ওই ঘটনার ঠিক পরে শিয়ালদহ কোর্টে অন্য একটি গুলি চালানোর মামলায় হাজিরা দিয়ে ফিরছিল এলাকার আর এক দুষ্কৃতী নেটো এবং তার বাহিনী। তাদের উপরে কালো বাপি হামলা করেছে, এই গুজবে তারা সোজা হাজির হয় মতিঝিল এলাকায়। সেখানে কালো বাপির এক সঙ্গী সামেদ আলি ওরফে হাশুকে গুলি করে পালিয়ে যায় তারা।

এ দিন এলাকার এক বাসিন্দা নাসিমা খাতুনের অভিযোগ, ২০১৪ সালে তিনি তিনটি ফ্ল্যাট বুক করেছিলেন মাজহারের কাছ থেকে। কিন্তু দু’বছর ধরে ফ্ল্যাট না দিয়ে মাজহার তাঁকে ঘুরিয়ে চলেছেন। একই অভিযোগ করেছেন এলাকার একাধিক বাসিন্দা। এমনকী, ওই জমির মালিককেও ফ্ল্যাট দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে পুলিশের কাছে। তদন্তকারীদের দাবি, মাজহার ঘটনার পর থেকেই পলাতক। তার খোঁজ মিললেই বাকি রহস্যের সমাধান হবে।

পুলিশ জানায়, ওই দিনের ঘটনায় নেটোর ভাই সুখেনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকে শুক্রবার বিচারক পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তদন্তকারীদের দাবি, সুখেন মতিঝিলে গুলি চালানোর সঙ্গে যুক্ত। বাকিরা পালিয়ে গিয়েছে। তাদের খোঁজ চলছে।

TMC MLA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy