Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
আলিপুর থানা

মুখরক্ষার পথ খুঁজল মুখ লুকনো পুলিশ

সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে তিনি এখন পরিচিত মুখ। পুলিশমহলে তো বটেই, হাটে-বাজারে আমজনতার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুও বটে। তিনি কার্তিক কর। আলিপুর থানার কনস্টেবল। শুক্রবার বিধান রায় কলোনির ক্ষিপ্ত তৃণমূল সমর্থকদের হামলায় যিনি থানার মধ্যেই টেবিলের আড়ালে লুকিয়ে প্রাণে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন।

থানার চেয়ারে সেই কার্তিক কর। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

থানার চেয়ারে সেই কার্তিক কর। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে তিনি এখন পরিচিত মুখ। পুলিশমহলে তো বটেই, হাটে-বাজারে আমজনতার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুও বটে। তিনি কার্তিক কর। আলিপুর থানার কনস্টেবল। শুক্রবার বিধান রায় কলোনির ক্ষিপ্ত তৃণমূল সমর্থকদের হামলায় যিনি থানার মধ্যেই টেবিলের আড়ালে লুকিয়ে প্রাণে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। আলিপুর থানার পুলিশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, “শুক্রবার ক্ষিপ্ত জনতা যখন থানার সামনে ভিড় জমিয়েছিল, তখন গোটা পরিস্থিতি জানানো হয়েছিল লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে। কিন্তু সেখান থেকে কোনও নির্দেশ না আসায় হামলাকারীদের প্রতিহত করা যায়নি। উল্টে নিজেদেরই প্রাণে বাঁচার কৌশল খুঁজতে হয়েছে।”

সেই ঘটনার রেশ কাটিয়ে শনিবার সাতসকালেই আলিপুর থানায় হাজির হয়েছিলেন কার্তিকবাবু। কী পরিস্থিতিতে তাঁকে বাধ্য হয়ে টেবিলের পিছনে আশ্রয় নিতে হয়েছিল, ওই ঘটনার পর থেকে দফায় দফায় ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে ওই পুলিশকর্মীকে। তাঁর নিজের মুখে সে কথা শুনে এবং টিভিতে-কাগজে ওই ছবি দেখার পরে ছোট-মেজো-বড় সব সহকর্মীই কার্তিকবাবুর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা বলছেন, “কার্তিকবাবু আদতে খুবই সাদামাটা, নিরীহ মানুষ। মুখে হাসি লেগেই থাকে। এমন মানুষের ও রকম উত্তেজিত জনতার হামলার সামনে পড়ে হতবাক হওয়ারই কথা।” আলিপুর থানার একাধিক পুলিশকর্মী জানান, ওই ‘ঝড়ের’ মুখে পড়লে তাঁরাও হয়তো এমনই করতেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশকর্তাদের একাংশ বলছেন, শুধু আলিপুর থানার পুলিশই নয়, কার্যত একই অবস্থা গোটা রাজ্যের পুলিশের। কোথাও শাসকদলের মারামারি ঠেকাতে গিয়ে মাথায় ঢিল খাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা, কোথাও বা পেটে তির নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে সমাজরক্ষকদের। ওই পুলিশকর্তাদের মতে, যে ভাবে বাহিনীকে ঠুঁটো করে রাখা হচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে পুলিশ-লাইন কিংবা থানা আক্রমণের ঘটনা বাড়বে বৈ কমবে না। এবং পুলিশকে তা দেখেও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে। কারণ, ‘অ্যাকশন’ নিতে গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যে অনুমতির দরকার হয়, প্রয়োজনের সময়ে তা মিলছে না।

শনিবার দুপুরের দিকে আলিপুর থানায় গিয়ে দেখা যায়, অন্য দিনের চেয়ে ভিড় বেশ কম। হাতে গোনা যে দু’-এক জন এসেছেন, অভিযোগ জমা নিয়েই তাঁদের পত্রপাঠ বিদায় দিয়েছেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। গোটা থানার পরিস্থিতিই আর পাঁচটা দিনের চেয়ে আলাদা। অন্য দিন থানায় অপরিচিত কেউ ঢুকলে পুলিশের মধ্যে তেমন কোনও তৎপরতা দেখা যেত না। কিন্তু এ দিন সদর গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢোকা মাত্রই একাধিক প্রশ্ন ধেয়ে এল। “আপনি কে? কী দরকার? কোথা থেকে আসছেন?” পরপর নানা প্রশ্ন। উত্তরে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি শুনেই সোজা থানার ভিতরে সেঁধিয়ে গিয়েছেন তাঁরা।

থানায় ঢুকে ডান দিকের সেরেস্তায় বসেছিলেন কার্তিকবাবু। সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। নিজের পরিচয় দিয়ে শুক্রবারের প্রসঙ্গ তুলতেই মুখে কুলুপ কার্তিকবাবুর। এগিয়ে এলেন অন্য এক পুলিশকর্মী। বললেন, “ওঁকে (কার্তিকবাবুকে) কেন বিব্রত করছেন? উনি কিছু বলবেন না। বড়বাবুও (ওসি) বলবেন না। যা বলার উঁচুতলার কর্তারা বলবেন।” পরের প্রশ্ন ছিল, বড়বাবু আছেন? উত্তর মিলল, “না, তিনি বেরিয়েছেন।” কোথায় গেলেন? “জানি না।” আর দাঁড়ালেন না ওই পুলিশকর্মী। ঢুকে গেলেন থানার ভিতরে। পিছন পিছন চলে গেলেন কার্তিকবাবুও। নজরে এল, ওসি-র অফিসঘরের সামনে বোর্ডে লেখা আছে ‘আউট’। অর্থাৎ, বড়বাবু নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE