Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
KMC Election 2021

KMC Election 2021: ‘কলকাতার নিরঙ্কুশ দখল তৃণমূলেরই’

জনমত সমীক্ষার ফল সব সময় হুবহু মেলে না। আবার অনেক সময়েই সমীক্ষার পূর্বাভাসের প্রতিফলন বাস্তবে ঘটে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৪৬
Share: Save:

কলকাতা পুরসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের জয় নিয়ে বিশেষ কোনও কোনও সংশয় ছিল না। আগ্রহ ছিল, কত আসন তারা পেতে পারে, তা নিয়ে। পুরভোটের আগে জনমত সমীক্ষায় ইঙ্গিত মিলল, কার্যত গোটা কলকাতাই চলে যেতে পারে শাসক দলের দখলে।

পুরসভার ভোট ঘিরে রাজনৈতিক শিবিরের যা অঙ্ক ছিল, সমীক্ষার আভাস তাকেই আরও স্পষ্ট করেছে। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল নিরঙ্কুশ ভাবে পুরসভার ক্ষমতায় আসছে এবং বিরোধীরা কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচন এবং তার পরের উপনির্বাচনের ফলের প্রেক্ষিতে, রাজনৈতিক ধারে-ভারে এবং প্রচার-প্রভাবের ভিত্তিতে কলকাতা পুরসভায় তৃণমূলের জয় নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশে কার্যত সংশয় নেই। এবিপি আনন্দ-সি ভোটারের জনমত সমীক্ষার ফল দেখাচ্ছে, কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩০টিতে জয়ী হয়ে পুরসভায় ফিরতে পারে শাসক দল। বাকি ১৪টির মধ্যে ১৩টি বিজেপি এবং একটি যেতে পারে বামেদের দখলে। সমীক্ষার ইঙ্গিত অনুযায়ী, কলকাতায় তৃণমূল পেতে পারে ৫২% ভোট। বিরোধীদের মধ্যে বিজেপির ২৪%, বামেদের ৯% এবং কংগ্রেসের ৩% ভোট পাওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে সমীক্ষায়।

জনমত সমীক্ষার ফল সব সময় হুবহু মেলে না। আবার অনেক সময়েই সমীক্ষার পূর্বাভাসের প্রতিফলন বাস্তবে ঘটে। ভোটের চূড়ান্ত ফলের আভাস বলে ধরে নেওয়া না হলেও জনমতের ধারণা হিসেবে এই ধরনের সমীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই এই সমীক্ষা থেকে কলকাতার পুরভোটের চিত্র অনেকটাই ধরা পড়ছে বলে রাজনৈতিক শিবিরের ধারণা।

বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতার কেন্দ্রগুলির ফল এবং তার পরে ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলের হিসেবে ধরলে পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩৩টিতে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূলই। বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ১০টিতে এবং বামেরা একটিতে। এ বারের সমীক্ষা ইঙ্গিত দিচ্ছে, কলকাতা পুরসভার মোট ১৬টি বরোর মধ্যে ৭টি বরোয় সবক’টি ওয়ার্ডেই জিততে পারে তৃণমূল। অন্য দিকে, বিজেপি যে ১৩টি ওয়ার্ড জিততে পারে, তার মধ্যে ৯টিই উত্তর ও মধ্য কলকাতায়। তাদের চারটি ওয়ার্ড আসতে পারে দক্ষিণ কলকাতায় ৮ ও ৯ নম্বর বরো থেকে। অর্থাৎ এই সমীক্ষার আভাস অনুযায়ী, অবাঙালি বা অ-বাংলাভাষী অধ্যুষিত এলাকাতেই বিজেপির প্রভাব মূলত সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। বামেরা যে একটি ওয়ার্ড পেতে পারে বলে সমীক্ষা দেখিয়েছে, তা ৫ নম্বর বরোয়।

শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার জলমগ্ন হয়ে পড়াকে এ বার প্রচারের হাতিয়ার করেছে সব বিরোধী দলই। সেই সঙ্গে বাম ও কংগ্রেসের অভিযোগ, নানা রাজ্যে গিয়ে কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল ভাঙিয়ে আসলে বিজেপিরই ‘সুবিধা’ করে দিচ্ছে তৃণমূল। কিন্তু সমীক্ষার ইঙ্গিত বলছে, বিরোধীরা পুরভোটে তেমন দাগ কাটতেই পারবে না। তবে তার মধ্যেও দ্বিতীয় স্থানে বিজেপিরই থাকার ইঙ্গিত রয়েছে। যদিও স্থানীয় স্তরে প্রচার ও প্রস্তুতির নিরিখে এ বার গেরুয়া শিবিরের চেহারা অনেকটাই ছন্নছাড়া।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সমীক্ষার রায় অনুযায়ী চারটি প্রতিষ্ঠিত দলের বাইরে ‘অন্যান্য’ শক্তির খাতায় ১২% ভোট যেতে পারে। যা বাম ও কংগ্রেসের মোট প্রাপ্ত ভোটের সমান! কিছু কিছু বরোয় এই ‘অন্যান্যেরা’ ১৫, ১৬ বা ১৭% ভোট পেতে পারেন বলে সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে। পুরসভার ভোটের চিরাচরিত দস্তুর মেনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নানা ধরনের নির্দল প্রার্থীরা আছেন। তাঁরা কেমন ভোট টানতে পারবেন, তার
উপরে ওয়ার্ডভিত্তিক ফল অনেকটাই নির্ভর করতে পারে।

জনমত সমীক্ষার এই ফলকে বাস্তবের প্রতিফলন বলেই মনে করছে তৃণমূল। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিধানসভা ভোটে মানুষ যে আস্থা দেখিয়েছেন, এটা তারই প্রতিফলন। সাধারণ পুর- পরিষেবার পাশাপাশি আসলে করোনা, লকডাউন এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো কতগুলি গুরুতর পরিস্থিতিতে আমাদের কাউন্সিলরেরা যে ভাবে মানুষের পাশে ছিলেন, এই সমীক্ষা তারই পূর্বাভাস দিচ্ছে। তবে আমার তো মনে হয়, ১৪৪ ওয়ার্ডের কোথাও বিরোধীরা এমন কিছু করেননি যে, বাকি আসনে জিততে পারব না!’’

বিরোধীরা অবশ্য এই সমীক্ষাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘এই সমীক্ষা আমরা মানছিই না। এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনও মিল নেই। এই ধরনের জনমত সমীক্ষা অনেক সময়েই মানুষের রায়কে প্রভাবিত করার জন্যও ব্যবহার করা হয়।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘আগরতলায় বিজেপির যা কায়দা, এখানে তৃণমূলেরও তা-ই। আগরতলায় বিজেপি যদি ৫১-এ ৫১ পায়, কলকাতায় তৃণমূল কেন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকবে? তারা ১৪৪ই পাবে!’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘সমীক্ষার দিকে তাকিয়ে আমরা ভোটে লড়ছি না। যা-ই হোক না কেন, কংগ্রেস শূন্য হাতে ফিরবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Election 2021 kolkata municipal corporation TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE