অশান্ত পাহাড়। রাস্তায় জ্বলছে একের পর এক গাড়ি। কখনও আবার জ্বলে উঠছে সরকারি অফিস। প্রায় সব হোটেলেরই ঘর ফাঁকা। অশান্ত দার্জিলিংয়ের এই চেনা ছবি দেখার পরে উঠে আসছে একটাই প্রশ্ন: এ বারের পুজোও কি পর্যটকহীন কাটাবে দার্জিলিং?
অনিশ্চয়তা কিছুটা রয়েছেই। তাই পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন সকলেই। পর্যটকদের এই জল মাপার মনোভাবেই আশায় বুক বাঁধছেন ভ্রমণ সংস্থার কর্তারা। কারণ, শৈল শহর দার্জিলিংয়ের পরিবেশ যতই অশান্ত হোক, এ বারের পুজোয় সেখানে ছুটি কাটাতে যাওয়ার জন্য ‘বুকিং’ করে ফেলেছেন দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক। অশান্তির খবরে তাঁরা যে হুড়মুড়িয়ে পরিকল্পনা বাতিল করে দিচ্ছেন, তেমনটাও কিন্তু নয়।
ঠিক সেই কারণেই গরমের ক্ষয়ক্ষতি পুজোর মরসুমে সুদে-আসলে মিটিয়ে নেওয়ার আশা ছাড়ছেন না ভ্রমণ সংস্থার কর্তারা। তাঁদের কথায়, ‘‘আশা ছিল, গরমে ভাল ব্যবসা হবে। কিন্তু তাতে জল ঢেলে দিল অশান্তি। তবে পরিস্থিতির বদল হবেই। তাই পুজোর বুকিং নিয়ে এখনই অতটা চিন্তিত নই।’’
বুধবারই মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, রাজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়বে। তাই পর্যটকদেরও বেড়াতে আসার আগে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। মোর্চা-প্রধানের এমন ‘ঠান্ডা হুমকি’র জেরে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পাহাড়ের হোটেল-মালিক, পর্যটন ব্যবসায়ী ও সংগঠনগুলির কর্তাদের কপালে। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘জুনের শেষ পর্যন্ত গরমের মরসুম চলে। এ বার জুনের প্রথম সপ্তাহেই কার্যত পাহাড়ের অশান্তিতে সব শেষ হয়ে গেল। এমন চলতে থাকলে আগামী মরসুমেও তার প্রভাব পড়বে।’’
যদিও ‘দার্জিলিং গোর্খা হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক বিজয় খন্নার কথায়, ‘‘এখন তো হোটেলগুলি সুনসান। তবে পুজোর বুকিং নিয়ে অনেকেই খোঁজ করছেন।’’ তবে এ দিন মোর্চা সভাপতির মন্তব্যের পরে দার্জিলিংয়ের হোটেল-মালিকদের একাংশের আশঙ্কা, পুজোর সময়েও অশান্তি এবং বন্ধ চললে পর্যটকেরা হয়তো ও-মুখো হবেনই না।
কিন্তু এত কিছুর মাঝেও পরিস্থিতি বদলের আশা ছাড়ছেন না পর্যটক থেকে ভ্রমণ সংস্থা— সকলেই। ‘ইস্টার্ন হিমালয় ট্র্যাভেলস অ্যান্ড ট্যুর অপারেটার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘এখনও বুকিং বাতিলের আঁচ পাইনি। পুজোর সময়ে তাইল্যান্ড থেকে একটা বড় দল আসার কথা। আর ওই সময়ের ট্রেনও প্রায় সব ভর্তি।’’
বুধবার দুপুরে কলকাতার এক ভ্রমণ সংস্থার অফিসে গিয়ে দেখা গেল, বেশ ভিড়। সংস্থার মালিক বাচ্চু চৌধুরী বললেন, ‘‘সামনে যাঁদের দেখছেন, এঁরা অনেকেই পুজোর সময়ে দার্জিলিং যাবেন বলে বুকিং করছেন। এখনও পর্যন্ত পুজোর বুকিংয়ে তেমন ভাটা পড়েনি। আসলে পর্যটকেরাও জল মাপছেন।’’ দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা ঝন্টু পালের কথায়, ‘‘দার্জিলিং যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে, তাই টিকিট কেটে নিয়েছি। আশা করছি, পরিস্থিতি বদলাবে। পাহাড় আর জ্বলবে না।’’
তবে পর্যটকদের একাংশ যে দার্জিলিং নিয়ে কিছুটা হলেও সতর্ক, সে কথাও গোপন করছেন না পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এক ভ্রমণ সংস্থার মালিক অনিমেষ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অন্য বারের তুলনায় এ বার বুকিংয়ের সংখ্যা কিছুটা কম তো বটেই।’’ ‘দার্জিলিং অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস’-এর এক মুখপাত্রের কথায়, ‘‘অনেকেই আরও কিছু দিন পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন। টেলিফোনেও যোগাযোগ রাখছেন তাঁরা। বুকিং বাতিলের কোনও হিড়িক নেই।’’ তবে তিনি জানান, দার্জিলিংয়ের পরিবর্তে অনেকে আবার মিরিক কিংবা কালিম্পংয়ের হোটেল নিয়েও খোঁজ করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy