Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

এসএসকেএমে ফের পাকড়াও রক্তের দালাল

অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। রক্তের প্রয়োজন। সেই এক ইউনিট রক্তের জন্য দেড় হাজার টাকা চেয়েছিল এক দালাল। কিন্তু রোগীর আত্মীয়ের তৎপরতায় রবিবার হাতেনাতে পাকড়াও হল সে। ঘটনাস্থল সেই এসএসকেএম। যেখানে দালালদের আঙুলের ইশারায় রোগীর আত্মীয়দের চলতে হয় বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০৩
Share: Save:

অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। রক্তের প্রয়োজন। সেই এক ইউনিট রক্তের জন্য দেড় হাজার টাকা চেয়েছিল এক দালাল। কিন্তু রোগীর আত্মীয়ের তৎপরতায় রবিবার হাতেনাতে পাকড়াও হল সে।

ঘটনাস্থল সেই এসএসকেএম। যেখানে দালালদের আঙুলের ইশারায় রোগীর আত্মীয়দের চলতে হয় বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। যে অভিযোগ পেয়ে কড়া ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ সক্রিয় হতে কিছু দিনের জন্য বন্ধ হয়েছিল দালালদের আনাগোনা। কিন্তু পুজোর পরে দালালেরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে অভিযোগ। এ দিনের ঘটনা তারই প্রমাণ দিল মনে করছেন অনেকে।

বালিগঞ্জের বাসিন্দা এক রোগীর আত্মীয়ের কাছে খবর পেয়ে এ দিন মহম্মদ শেখ নাসিম নামে ওই দালালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নাসিমের বাড়ি হাওড়ার পাঁচলায়।

পুলিশ জানায়, বেশ ক’দিন ধরেই পিজি-র কার্ডিও-ভাস্কুলার থোরাসিক সার্জারি বিভাগে ঘোরাঘুরি করছিল ওই ব্যক্তি। অভিযোগ, রক্তের প্রয়োজন রয়েছে এমন রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে নিজে থেকেই যোগাযোগ করে রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার বিনিময়ে টাকা নিত সে। বালিগঞ্জের এই রোগীর ক্ষেত্রেও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনে রক্ত খুঁজছিলেন তাঁর পরিজনেরা। পুলিশ জানায়, ওই রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল নাসিম। অভিযোগ, এক ইউনিট রক্তের জন্য তাঁদের কাছে দেড় হাজার টাকা দাম হেঁকেছিল সে।

শনিবার ওই রোগীর আত্মীয়ের কাছ থেকেই খবর পায় পুলিশ। তাঁদের সাহায্য নিয়েই রবিবার ফোন করে নাসিমকে হাসপাতালে ডেকে নেওয়া হয়। নাসিম এসএসকেএমে পৌঁছনোমাত্র তাকে চেপে ধরে পুলিশ। জানতে চাওয়া হয়, কী কারণে সে হাসপাতালে এসেছে। পুলিশের দাবি, নাসিম সদুত্তর দিতে পারেনি। পরে জেরায় সে রক্তের দালালির কথা স্বীকার করে। নাসিমকে জেরা করে এমন আরও কয়েক জনের নাম জানা গিয়েছে বলেও দাবি পুলিশের।

পুলিশের সক্রিয়তা সত্ত্বেও এসএসকেএমে দালালদের রমরমা বজায় থাকার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, হাসপাতালে এসে এই দালালেরা মোটেও উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করে না। বরং কোন রোগীর কী লাগবে, কার পক্ষে কোন জিনিস জোগাড় করা সম্ভব নয়, তার সমস্ত খবর আগেভাগেই থাকে তাদের কাছে। ফলে এর পিছনে হাসপাতাল কর্মীদের একাংশও জড়িয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ। আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ হাসপাতালে এসে খেই হারিয়ে ফেলেন। অভিযোগ, সেই সুযোগটাও দালালেরা কাজে লাগায়।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে লাগাতার অভিযান চালিয়ে এ বছর হাসপাতাল থেকে ১১ জন দালাল ধরা পড়েছে। অভিযোগ, পুলিশি অভিযানের পরে বেশ কিছু দিন গা ঢাকা দিয়েছিল দালাল চক্রের সদস্যেরা। কিন্তু পুজোর পরেই ফের স্বমহিমায় ফিরছে তারা। গত বৃহস্পতিবারও রোগীর আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগে এক আয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশের দাবি, প্রতি বারই দালাল ধরা পড়ার পরে তদন্তে উঠে আসা তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনমতো কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। অভিযোগ মানতে চায়নি হাসপাতাল। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE