Advertisement
২১ মে ২০২৪

যোধপুর পার্কে বৃদ্ধা খুনে ধৃত ২

যোধপুর পার্কের বাসিন্দা শ্যামলী ঘোষের (৭৫) খুনের কিনারা করল পুলিশ। খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার সকালে গ্রেফতার করা হয়েছে দু’জনকে।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৩৫
Share: Save:

যোধপুর পার্কের বাসিন্দা শ্যামলী ঘোষের (৭৫) খুনের কিনারা করল পুলিশ। খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার সকালে গ্রেফতার করা হয়েছে দু’জনকে। ধৃতদের নাম স্বপন মণ্ডল ও সঞ্জীব দাস। শ্যামলীদেবী যে আবাসনে থাকতেন, স্বপন সেখানকার মালি। সঞ্জীব সেই আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী। মাঝেমধ্যে সে রাজমিস্ত্রির কাজও করত। দু’জনেরই বাড়ি লেক থানা এলাকার দাসনগর কলোনিতে। পুলিশের দাবি, শ্যামলীদেবীকে খুনের কথা জেরায় কবুল করেছে ধৃতেরা।

৪ এপ্রিল দুপুরে শ্যামলীদেবীর মৃতদেহ তাঁর তিনতলার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তিন হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। মুখে বালিশ চাপা ও গলায় কাপড় পেঁচানো অবস্থায় শোয়ার ঘরের মেঝেতে চিৎ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। মৃতদেহের পাশে পড়েছিল রক্তমাখা একটি সাঁড়াশি। দেহটিতে পচনও ধরেছিল। পুলিশ জানায়, শ্যামলীদেবীর দেহের ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা যায়, তাঁর মাথার পিছনে বাঁ দিকে আঘাতের চিহ্ন ছিল। আততায়ীরা তাঁর গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে।

এ দিন স্বপন ও সঞ্জীবকে গ্রেফতার করা হলেও, কী কারণে ওই বৃদ্ধাকে খুন করা হয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সাউথ-ইস্ট ডিভিশন) কল্যাণ মুখোপাধ্যায় এ দিন দুপুরে বলেন, ‘‘খুনের পিছনে আরও কেউ রয়েছে কি না, তা এখনও জানা যায়নি। খুনের উদ্দেশ্যও পরিষ্কার নয়। ফ্ল্যাট থেকে কিছু খোয়াও যায়নি। ধৃতদের আরও জেরা করা দরকার। তবে শ্যামলীদেবীর ফ্ল্যাট থেকে যে

ডায়েরি মিলেছে, তাতে স্বপন ও সঞ্জীবকে তিনি তাঁর সন্দেহের তালিকায় রেখেছিলেন বলে প্রমাণ মিলেছে।’’ ওই পুলিশকর্তা জানান, বৃদ্ধার দু’টি মোবাইল ফোনের একটি উদ্ধার হয়েছে। অন্যটির খোঁজ চলছে।

কী ভাবে খুন করা হয় ওই বৃদ্ধাকে? পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, ২ এপ্রিল, মঙ্গলবার সকালে ফুল দেওয়ার অছিলায় তাঁর ফ্ল্যাটের কলিং বেল বাজায় স্বপন ও সঞ্জীব। তারা বৃদ্ধার পরিচিত ও ওই ফ্ল্যাটে তাদের যাতায়াত ছিল। ফ্ল্যাটের সদর দরজা শ্যামলীদেবী খুলে দিতেই তারা তাঁকে ঠেলে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ে। সঞ্জীব তাঁকে ধাক্কা মারতে মারতে ঘরের ভিতর নিয়ে যায়। স্বপন সেই সুযোগে রান্নাঘরে ঢুকে একটি সাঁড়াশি হাতে তুলে নেয়। দুর্বল

বৃদ্ধাকে এর পরে তারা বাথরুমের সামনে নিয়ে গিয়ে ঠেলে ফেলে দেয়। তিনি পড়ে গেলে তারা তাঁর মাথায় সাঁড়াশি দিয়ে মারতে থাকে। শ্যামলীদেবী প্রতিবাদ ও বাধা দিয়েও তাদের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। এর পরে স্বপন ও সঞ্জীব তাঁকে শোয়ার ঘরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় থাকা ওড়না তাঁর গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে এর পরে তাঁর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে কিছু ক্ষণ ধরে থাকে ওরা।

পুলিশের দাবি, ধৃতেরা আরও জানিয়েছে, শ্যামলীদেবীকে খুনের পরে তারা বিছানায় বেশ কিছু ক্ষণ বসেছিল। পরে ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে টেনে দিয়ে চলে যায়। পরে বৃদ্ধার বোন আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাসিন্দা দীপালি মিত্র পুলিশের উপস্থিতিতে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলেছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃদ্ধার ফ্ল্যাট থেকে দামি কোনও জিনিস খোয়া যায়নি। কী কারণে তাঁকে খুন হতে হল, তা এখনও স্পষ্ট নয় তদন্তকারীদের কাছে। ডেপুটি কমিশনার কল্যাণবাবু জানিয়েছেন, শ্যামলীদেবীকে যে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত পুলিশ। তিনি যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেটি তাঁর বাবার। ফ্ল্যাটের মালিকানা পেতেই তাঁকে খুন করানো হয়েছে বলেই ধারণা পুলিশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE