—প্রতীকী ছবি।
ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত হলেন এক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার ভোরে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের উপরে চারু মার্কেট থানা এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, আহত ওই যুবকের নাম প্রীতম দাস। তাঁর বয়স ২৪ বছর। এই ঘটনায় আহতের বয়ানের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর দুই বন্ধুকে। ধৃতদের নাম সায়ন রায় এবং লাবণী সরকার।
পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ওই যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান রাস্তার ধারের একটি চায়ের দোকানদার। সঙ্গে সঙ্গে তিনি লোকজন ডেকে পুলিশে খবর দিলে ওই যুবককে উদ্ধার করে প্রথমে এম আর বাঙুর হাসপাতালে, সেখান থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে তপসিয়ার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসা চলছে তাঁর। পুলিশ জানিয়েছে, প্রীতমের বুকে এবং পেটে ধারালো অস্ত্রের চারটি কোপ রয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
২৬১/৩, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি চায়ের দোকানদার শ্যামল সাহা জানান, ভোরে দোকান খোলার সময়ে দূর থেকে এক যুবককে তাঁর দিকে আসতে দেখেন। সামনে এলে বুঝতে পারেন ছেলেটি তাঁরই পাড়ার, নাম প্রীতম। তিনি দেখেন, ছেলেটির শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ওই অবস্থায় কোনও রকমে প্রীতম বলেন, ‘‘কাকা, আমাকে বাঁচাও। ওরা আমাকে মাথায় আর বুকে মেরেছে।’’ এর পরে শ্যামলবাবুই পাড়ার ছেলেদের ডেকে যাদবপুর থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে দেখে, এলাকাটি চারু মার্কেট থানায় পড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে তারাই সেখানে খবর দেয় এবং প্রীতমকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
উদ্ধারের পরে প্রীতম পুলিশকে জানিয়েছেন, আদতে তিনি শিলিগুড়ির বাসিন্দা। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত কলকাতার একটি ইনস্টিটিউট থেকে দূরশিক্ষায় সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র প্রীতম চারু মার্কেট থানা এলাকার একটি বাড়িতে বন্ধুর সঙ্গে ভাড়া থাকেন।
এ দিন কী ঘটেছিল? পুলিশ জানিয়েছে, প্রীতমের বয়ান অনুযায়ী, আগে থেকে লাবণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল তাঁর। আর সেই সুবাদে লাবণীর প্রেমিক সায়নের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁরও। এই সায়নের কাছ থেকে তিনি কম্পিউটারের কিছু গ্রাফিক্সের কাজ শিখছিলেন। কিন্তু সেই কাজের মান নিয়ে গত জুলাই মাস থেকে প্রীতম ও সায়নের মধ্যে গোলমাল শুরু হয়। তখন সায়নকে কেন লাবণী সমর্থন করছেন, তা নিয়ে প্রীতমের সঙ্গেও সম্পর্কে চিড় ধরে। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে দু’জনেরই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি ফের সোশ্যাল মিডিয়া ও ফোনে ফের নতুন করে গোলমাল বাধে।
কে এই সায়ন এবং লাবণী? তদন্তকারীরা জেনেছেন, শিলিগুড়ির বাসিন্দা সায়ন এবং লাবণীর আদতে বাড়ি দার্জিলিঙে। সায়ন কলকাতার হরিদেবপুর এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। লাবণী ভাড়া থাকেন রিজেন্ট পার্ক এলাকায়। তবে সায়ন বেশির ভাগ সময়েই লাবণীর ভাড়া বাড়িতেই থাকতেন।
শনিবার সকাল থেকে প্রীতমের সঙ্গে অন্য দু’জনের মধ্যে নতুন করে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। রবিবার ভোরে লাবণী এবং সায়ন প্রীতমের বাড়ির কাছে রাজেন্দ্র প্রসাদ কলোনিতে পৌঁছে তাঁকে ডাকেন। অভিযোগ, তখন কথা কাটাকাটির মাঝে রাস্তাতেই তাঁকে সায়ন ধারালো জিনিস দিয়ে একাধিক বার আঘাত করেন। প্রীতমের অভিযোগ, তার পরেই ট্যাক্সি ধরে পালিয়ে যান দু’জনে। তিনি কোনও রকমে শ্যামলবাবুকে দেখে তাঁর চায়ের দোকানে পৌঁছন।
প্রীতম ও ধৃতদের বয়ান মিলিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। দু’জনের বিরুদ্ধেই খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। আজ, সোমবার দু’জনকেই আদালতে তোলা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy