Advertisement
E-Paper

ট্রেনে ছিন্ন দুই পা, মারা গেলেন বৃদ্ধ

রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল দশটা নাগাদ বালিগঞ্জ স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে শিয়ালদহমুখী চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়েছিলেন রেলেরই অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার বিপ্লববাবু।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৭ ০১:৩৯
বিপ্লব কর

বিপ্লব কর

স্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। ট্রেন সবে ছেড়েছে। দৌড়ে উঠতে গিয়ে পা হড়কে যায় বিপ্লব করের (৬৭)। নিচু প্ল্যাটফর্ম আর ট্রেনের মাঝে পড়ে হাঁটুর নীচ থেকে দু’টি পা-ই ছিন্ন হয়ে যায় ওই বৃদ্ধের। সেই সঙ্গে মাথায় গুরুতর চোট। এম আর বাঙুরে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বৃহস্পতিবার বালিগঞ্জ স্টেশনের এই ঘটনা ফের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে রেলের দায়বদ্ধতা নিয়ে।

কয়েক মাস আগে প্ল্যাটফর্ম আর ট্রেনের মাঝে ফাঁক বেশি থাকায় পার্ক সার্কাস স্টেশনে একই ভাবে মৃত্যু হয়েছিল এক স্কুলপড়ুয়ার। সেই ঘটনার পরে রেলকর্তারা জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন স্টেশনে দ্রুত এই ফাঁক ভরাটের কাজ শুরু হবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি রয়ে গিয়েছে মুখের কথাতেই।

রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল দশটা নাগাদ বালিগঞ্জ স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে শিয়ালদহমুখী চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়েছিলেন রেলেরই অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার বিপ্লববাবু।

এ দিন স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেনের চেয়ে প্ল্যাটফর্ম প্রায় এক ফুট নিচু। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেন তখন এগোতে শুরু করেছে। বিপ্লববাবু দৌড়ে উঠতে গিয়েছেন। দরজার মাঝের রড ধরে উঠতে গিয়ে পা ফস্কে যায় তাঁর। অন্য যাত্রী ও দোকানদারেরা এগিয়ে আসেন তাঁকে তুলতে। কিন্তু ততক্ষণে লাইনের নীচে পড়ে গিয়েছেন তিনি। এক দোকানকর্মী বলেন, ‘‘রড ধরে ফেললেও কোনও ভাবে ট্রেন আর প্ল্যাটফর্মের মাঝে পা ঢুকে যায় ওঁর। সবাই গিয়ে টেনে বের করতে চাইলেও তাঁকে উদ্ধার করা যায়নি।’’ যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, ট্রেন ও প্ল্যাটফর্মের উচ্চতার ফারাক নিয়ে বারবার কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানানো হলেও লাভ হয়নি।

প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের উচ্চতা হওয়া উচিত সাত থেকে আট ইঞ্চি। কিন্তু বালিগঞ্জ-সহ শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা এবং মেন লাইনের অধিকাংশ স্টেশনেই ওই ব্যবধান এক ফুটেরও বেশি। লাইন মেরামতির জেরে এই ব্যবধান বেড়ে গিয়েছে। পার্ক সার্কাসের ঘটনার পরেও এই ত্রুটি মেরামত হয়নি কেন? এ দিন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘বিষয়টি নজরে এসেছে। আমরা দেখছি।’’

ট্রেন এবং প্ল্যাটফর্মের ব্যবধানই বাড়াচ্ছে বিপদ। (ডান দিকে) ভেঙে পড়েছেন বিপ্লববাবুর মেয়ে দেবদত্তা। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

এ দিন বিপ্লববাবুর দাদা পল্লব কর জানান, কুঁদঘাটের বাসিন্দা বিপ্লববাবুর স্ত্রী মালাদেবী বছর তিনেক ধরে হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত। ১৫ অগস্ট তাঁকে বি আর সিংহ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ দিন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বিপ্লববাবুকে দেখা করতে বলেছিলেন। সেই জন্যই তিনি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সকালে বেরোনোর সময়ে মেয়ে দেবদত্তা বারবার বলেছিলেন অ্যাপ-ক্যাব নিতে। কিন্তু বিপ্লববাবু জানান, ট্রেনেই যাবেন। বিকেলে ফের মেয়েকে নিয়ে স্ত্রীকে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। বেলা ১১টা নাগাদ দেবদত্তাকে রেল পুলিশ ফোন করে জানায়, গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁর বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: অতিরিক্ত মদ্যপানেই কি ক্লারার মৃত্যু, তদন্ত

পরিবারের সঙ্গে হাসপাতালে ছুটে আসেন দেবদত্তা। চিকিৎসকেরা জানান, দুটো পা-ই কাটা পড়েছে। মাথায় গুরুতর চোট। তাঁর কাটা পা দু’টি প্লাস্টিকে ভরে আনা হয়েছিল হাসপাতালে। বাবার শরীর থেকে রক্ত চুঁইয়ে পড়তে দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিলেন না দেবদত্তা। কিছু পরে চিকিৎসকেরা জানান, বিপ্লববাবু মারা গিয়েছেন। তার পর থেকে দিশাহারা দেবদত্তা। সদ্য বেসরকারি কলেজে নার্সিংয়ে ভর্তি হয়েছেন। এ দিন বারবার বলছেন, ‘‘বাবার সঙ্গে হস্টেলে যাব। বাবা নিয়ে যাবে।’’

Biplab Kar Elderly Train Death বিপ্লব কর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy