বিধ্বস্ত: বিস্ফোরণের পরে বিরাটির সেই দোকান। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
বিরাটি কলেজের কাছে এম বি রোডে সদাব্যস্ত বিরিয়ানির দোকান। রবিবার সকালে বন্ধ ছিল দোকানটি। আচমকা কান ফাটানো আওয়াজ। আতঙ্কিত হয়ে আশপাশের লোকজন দেখলেন, উড়ে গিয়েছে দোকানের অ্যাসবেস্টসের চাল ও লোহার শাটার। পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতার একটি নামী বিরিয়ানির দোকানের কাউন্টার ছিল ওই ভাড়া করা ঘরটিতে। বিস্ফোরণের কারণ স্পষ্ট নয় এখনও। আজ, সোমবার ওই ঘরটির ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হবে। দমকল আধিকারিকদের অনুমান, দোকানটিতে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। ছিল না প্রয়োজনীয় ছাড়পত্রও।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সাড়ে ১১টা নাগাদ যখন ঘটনাটি ঘটে, তখন দোকানের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলেন স্থানীয় দেবী নগর এলাকার বাসিন্দা এক তরুণী। উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক পথচারী। বিস্ফোরণে ছিটকে আসা শাটারের টুকরোর আঘাতে দু’জনে জখম হন। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে দোকানের পাশে একটি মন্দিরের চাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জানলার কাচ ভেঙেছে আশপাশের কয়েকটি দোকান ও বাড়ির। দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনেও ফাটল ধরে। দোকানের ভিতরে গ্যাসের তীব্র গন্ধ বাইরের রাস্তায় ছিল দুপুর পর্যন্ত। আগুন নেভাতে প্রথমে হাত লাগান স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন আসে।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেও আতঙ্ক তাড়া করছিল স্থানীয় বাসিন্দা রাজদীপ তালুকদার, সমীর গঙ্গোপাধ্যায়দের। এম বি রোডের দু’ধারে এমন খাবারের দোকান অসংখ্য। সরু রাস্তায় ২৪ ঘণ্টা যানবাহনের ভিড়। বাসিন্দাদের বড় অংশের অভিযোগ, নর্দমার উপরে কংক্রিটের স্ল্যাব ফেলে ফুটপাথ তৈরি হলেও প্রায় সব ক’টি দোকানের উনুন এবং কাউন্টার ফুটপাথ দখল করে আছে। দিনের পর দিন বিনা ছাড়পত্রে এই সব দোকান চলছে। অন্য নিয়ম মানা তো দূর অস্ত্। পুর প্রশাসন সব দেখেও চুপ করে থাকে।
সমীরবাবু বলেন, ‘‘একটা দোকানও নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করে না। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, টাকা আর শাসক দলের তকমা থাকলেই সব কিছু করা যায়!’’ রাজদীপবাবুর কথায়, ‘‘প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ, এ ভাবে ব্যবসা করার অনুমতি দেবেন না। এই ধরনের অন্য দোকানগুলিতে সব ব্যবস্থা ঠিক মতো আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হোক।’’ পুলিশ জানিয়েছে, দোকানঘরটি ভাড়া দিয়েছেন সুভাষ সাহা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ঘটনাচক্রে, এ দিনের দুর্ঘটনার পরেই এম বি রোডের ধারে খাবারের দোকানগুলি নিয়ম মেনে চলছে কি না, তা দেখার জন্য পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছেন ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের খাবারের দোকান মানেই দাহ্য পদার্থ থাকে। সেখানে সব নিয়ম ঠিক মতো মানা হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত নজরে রাখতে বলেছি পুরসভাকে।’’ অন্য দিকে, ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (২) ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, ‘‘সিলিন্ডার ফেটেই বিস্ফোরণ বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান। ফরেন্সিক পরীক্ষার পরে বিষয়টা স্পষ্ট হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy