Advertisement
E-Paper

বাসের ধাক্কায় দুই ছাত্রের মৃত্যু, অগ্নিগর্ভ চিংড়িঘাটা

ভাঙচুর চালানো হয় বেশ কয়েকটি বাসেও। আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পর পর দু’টি বাসে। চলন্ত অবস্থাতেই একটি বাস দাউদাউ করে জ্বলছে, এমন দৃশ্যও ধরা পড়েছে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৩:০৬
জ্বলছে বাস। —নিজস্ব চিত্র।

জ্বলছে বাস। —নিজস্ব চিত্র।

বন্ধুর দাদার বিয়ে। কনের বাড়িতে তত্ত্ব পাঠাতে হবে। তারই জিনিসপত্র কিনতে বেরিয়েছিল বন্ধুরা। বিভিন্ন জিনিস নিয়ে সকলেই ফিরে এল। কিন্তু, মিষ্টি নিয়ে ফিরতে পারল না বিশ্বজিৎ এবং সঞ্জয়। বেলেঘাটার দোকান থেকে তত্বের মিষ্টি কিনে সাইকেলে ফেরার পথে বাসের চাকায় পিষে মারা গেল ওই দুই তরুণ।

দুর্ঘটনার পরেই বেসরকারি বাসটির চালক লক্ষ্মণ সামন্তকে গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে ব্যস্ত সময়েও ট্রাফিক পুলিশ পথচারীদের দিকে নজর দেয় না। বাইপাস থেকে নিউ টাউনের দিকের রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের কাজ সামলায় সিভিক পুলিশ। যদিও পুলিশ কর্তাদের বক্তব্য, পথচারীদের অনেকে সিগন্যালই মানেন না।

শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ ইএম বাইপাসের উপর চিংড়িঘাটার মোড়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। এর পরেই ওই এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি, একাধিক গাড়ি ভাঙচুর, তার সঙ্গে একের পর এক বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া— সবই চলল দফায় দফায়। আগুন নেভাতে এলে দমকলের গাড়িতেও জনতা ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১১টা নাগাদ সিগন্যাল খোলা পেয়ে দুরন্ত গতিতে একটি বাস সেক্টর ফাইভের দিকে যাচ্ছিল। সেই সময় সাইকেলে রাস্তা পার হচ্ছিল বিশ্বজিৎ ভুঁইঞা (১৯) এবং সঞ্জয় বানু (১৯) নামে ওই দুই তরুণ। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি ওই সময় দু’জনকে পিষে দিয়ে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে আসেন স্থানীয়েরা। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ আসার পরেই পরিস্থিতি বিগড়ে যায়। পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ হাতের বাইরে চলে যায়। উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে শুরু করেন। ভাঙচুর চালানো হয় দাঁড়িয়ে থাকা একটি পুলিশের গাড়িতে।

দেখুন ভিডিও : রণক্ষেত্র চিংড়িঘাটা

ভাঙচুর চালানো হয় বেশ কয়েকটি বাসেও। আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় দু’টি বাসে। চলন্ত অবস্থাতেই একটি বাসকে দাউদাউ কর জ্বলতে দেখা যায়। প্রাণ বাঁচাতে বাস থেকে নেমে পালিয়ে যান যাত্রীরা। দমকলের গাড়ি আগুন নেভাতে গেলে তাদের গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পর পুলিশ কোনও ভাবেই সক্রিয় হয়নি। উল্টে এলাকাবাসীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এর পরই ক্ষেপে ওঠে জনতা। তাদের তাণ্ডবের জেরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে চিংড়িঘাটা। দু’দিকের লেনই সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। আটকে পড়ে একাধিক অ্যাম্বুল্যান্সও। পরে পুলিশের বিশাল বাহিনী এবং র‌্যাফ নামিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।

মৃত দুই ছাত্র। বিশ্বজিৎ ভুঁইঞা এবং সঞ্জয় বানু।

বেপরোয়া গাড়ির রাশ টানতে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয় না, এমন অভিযোগ তুলে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখায় জনতা। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। লাঠি চার্জও করে। কিন্তু, তাতেও কোনও ভাবে পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক সুজিত বসু ঘটনাস্থলে এলে তাঁকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এর পর পরিস্থিতি সামলাতে র‌্যাফ নামানো হয়। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করা হয়।

আরও পড়ুন: ১৭ বছর পরে খুনের বদলা খুন

দুর্ঘটনার পর একের পর এক বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। —নিজস্ব চিত্র।

সল্টলেকের শান্তিনগরের ওই দুই বাসিন্দা বঙ্গবাসী কলেজে হিসাবশাস্ত্র নিয়ে স্নাতকস্তরের প্রথম বর্ষে পড়ত। এ দিন এনআরএস হাসপাতালের বাইরে বসে বিশ্বজিতের মাসি বলছিলেন, ‘‘দিদিকে কী করে বলব, বুঝতে পারছি না। সকালে আমার কাছ থেকে ৩০ টাকা নিয়ে গেল। বিয়েবাড়িতে যাবে বলে। সেই ছেলে যে আর বাড়িতে ফিরবে না, কী করে জানব!’’

সঞ্জয এ দিন সকালে তার মাকে বলেছিল, ‘‘সায়নদের বাড়িতে যাচ্ছি। এখন জলখাবার খাব না।’’ মা তখন পরোটা ভাজছিলেন। খেয়ে যেতে বলায় ছেলে বলেছিল, ‘‘একটা বিস্কুট খেয়ে যাই। বেলায় ফিরে তোমার পরোটা খাব।’’ সেই পরোটা আর খাওয়া হয়নি ছেলের।

—নিজস্ব চিত্র।

Accident Chingrighata চিংড়িঘাটা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy