Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভাড়াটে-বাড়িওয়ালার কাজিয়ার মধ্যে ভাতের হাঁড়িতে দগ্ধ শিশু

ভাতের হাঁড়ির উপরে তাঁদের মেয়েকে বসিয়ে দিয়েছেন। তাই বাড়ি ছেড়ে উঠে যেতে হবে তাঁদের! ভাড়াটের দাবি, মেয়েটি খেলতে খেলতে নিজেই পড়ে গিয়েছে। ফাঁসিয়ে দিয়ে তাঁদের বাড়ি ছাড়া করার চেষ্টা হচ্ছে।

মর্মান্তিক: এসএসকেএম হাসপাতালে সেই শিশুটি। নিজস্ব চিত্র

মর্মান্তিক: এসএসকেএম হাসপাতালে সেই শিশুটি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৮ ০৩:০৬
Share: Save:

বয়স দু’বছর তিন মাস। মুখ, ডান হাত এবং শরীরের ডান দিক সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে চিকি‌ৎসাধীন শিশুটির বাবা-মায়ের অভিযোগ, এক ভাড়াটে গরম ভাতের হাঁড়ির উপরে তাঁদের মেয়েকে বসিয়ে দিয়েছেন। তাই বাড়ি ছেড়ে উঠে যেতে হবে তাঁদের! ভাড়াটের দাবি, মেয়েটি খেলতে খেলতে নিজেই পড়ে গিয়েছে। ফাঁসিয়ে দিয়ে তাঁদের বাড়ি ছাড়া করার চেষ্টা হচ্ছে।

দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার উল্টোডাঙা থানায় লিখিত অভিযোগ করে। অভিযুক্ত ভাড়াটে রাজেশ এবং তাঁর স্ত্রী সুনু গুপ্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটি নিজেই পড়ে গিয়েছিল না ফেলে দেওয়া হয়েছিল, দেখা হচ্ছে। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘ওদের ভা়ড়াটে-বাড়িওয়ালার পুরনো ঝগড়া আগেও থানায় এসেছিল। শিশুটির বাবা-মা তাকে বাঁচানোর কথা বলছেন কম, ভাড়াটে তাড়াতেই বেশি ব্যস্ত।’’

উল্টোডাঙার গোরাপদ সরকার লেনের বাসিন্দা শিশুর পরিবারের দাবি, গত শুক্রবার সকালে শিশুটির চিৎকার শুনে তার মা অঞ্জনা ভুঁইয়া দেখেন, রাজেশের ঘরে গরম হাঁড়ির উপর পড়ে শিশুটি প্রচণ্ড চিৎকার করছে। ঠান্ডা জল এনে মেয়ের গায়ে ঢালছেন রাজেশ এবং সুনু। রাজেশই শিশুটিকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরিয়ে পরে শিশুটিকে এসএসকেএমে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রের

খবর, শিশুটির শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে।

এত দেরিতে থানায় এলেন কেন? শিশুর বাবা সুষেণ ভুঁইয়ার দাবি, ‘‘থানায় গেলে মেরে ফেলা হবে বলে ভয় দেখানো হয়েছিল।’’ জখম শিশুর মা বলেন, ‘‘বহু দিন ধরে ওই ভাড়াটে আমাদের মারধর করছে। এ বার মেয়েটাকে খুনের চেষ্টা করল। পুলিশকে অনুরোধ, বাড়ি থেকে ওদের তুলে দেওয়া হোক।’’ অভিযুক্ত রাজেশ আর তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘‘শিশুটি ঘরের দরজা দিয়ে উঁকি মারছিল। পাশেই স্টোভে ভাত হচ্ছিল। হঠাৎ পড়ে যায় হাঁড়ির উপরেই। আসলে আমাদের বাড়ি ছাড়া করতে চাইছেন ওঁরা।’’

বস্তিতে টালির চালের ছোট ঘরে বাবা-মা আর ন’মাসের ভাইয়ের সঙ্গে থাকে শিশুটি। মা অঞ্জনা গৃহবধূ। বাবা সুষেণ লরি চালান। সেই সঙ্গে ভাড়ার টাকায় সংসার চলে। বাড়ির বাসিন্দারা আপাতত ভাড়াটে-বাড়িওয়ালার ঝামেলা নিয়েই ব্যস্ত। কেউ জানেনই না মেয়েটা কেমন আছে! এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘মেয়েটার অবস্থা তো শুনেছিলাম খুবই খারাপ। এখন ভালই আছে হয়তো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child SSKM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE