উবের-চালক পিন্টু যাদব
দিল্লির পরে কলকাতা। ফের ‘উবের’ ট্যাক্সির এক চালক মহিলা যাত্রীর সম্মানহানি করেছে বলে অভিযোগ উঠল। ৮ জুলাই রাতের ওই ঘটনায় পিন্টু যাদব নামে অভিযুক্ত চালককে সোমবার তিলজলা এলাকার কুষ্টিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে ভবানীপুর থানার পুলিশ। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪-এ ধারায় যৌন হেনস্থা করার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে চালকের বিরুদ্ধে।
চলতি মাসে দিল্লিতেও এক ‘উবের’ চালকের বিরুদ্ধে এক জন নৃত্যশিল্পীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করার অভিযোগ উঠেছিল। দু’টি ক্ষেত্রেই চালকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং ‘উবের’ দু’জনকেই বরখাস্ত করে।
কী ঘটেছিল ৮ জুলাই?
ভবানীপুর এলাকার একটি শপিং মলের সামনে থেকে টালিগঞ্জের বাসিন্দা এক তরুণী বাড়ি যাবেন বলে মোবাইল অ্যাপ-এর মাধ্যমে ‘উবের’-এর ট্যাক্সি ডাকেন। তখন রাত আটটা বেজে গিয়েছে। অভিযোগ, কিছু দূর যাওয়ার পরে তরুণী দেখেন, চালক গাড়ির ‘রিয়ার গ্লাস’ দিয়ে তাঁর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। গাড়ি তখন লেক গার্ডেন্সে পৌঁছেছে। এর পরেই চালক গাড়ি চালাতে চালাতেই তাঁকে দেখিয়ে কুৎসিত আচরণ শুরু করে বলে তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন। বিস্মিত তরুণী অবশ্য ট্যাক্সিতে প্রতিবাদ করেননি। তিনি নির্দিষ্ট জায়গায় নেমে যান।
পুলিশ জানায়, আদতে মুম্বইয়ের বাসিন্দা ওই তরুণী এক পোশাক বিপণি সংস্থার কর্ণধার। মাসখানেক আগে এখানে এসেছেন। ঘটনার পরের দিনই তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। তরুণীর অভিযোগ, চালক নিজের আসনে বসে এমন কিছু অঙ্গভঙ্গি করে, যা শুধু কুরুচিকর নয়, শালীনতার যাবতীয় সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে। ‘উবের’-এর কলকাতার জেনারেল ম্যানেজার অশ্বিন ডায়াস বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই চালককে বাতিল করেছি। তদন্তে পুলিশকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে।’’
পুলিশের বক্তব্য, এর পরে তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে, সেই আঁচ পেয়ে পিন্টু নিজের মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা ঘন ঘন পাল্টাতে থাকে। পুলিশ জানিয়েছে, উবের থেকে বরখাস্ত হয়ে পিন্টু হলুদ ট্যাক্সি চালাচ্ছিল। সেই সূত্রে অন্য কয়েক জন চালকের সঙ্গে কুষ্টিয়ায় থাকছিল সে। সোমবার রাতে সেখানে হানা দিয়ে পুলিশ পিন্টুকে গ্রেফতার করতে গেলে অন্য চালকেরা বাধা দেন। পুলিশের দাবি, এক ব্যক্তি নিজেকে বড়বাজার থানার পুলিশকর্মী বলে পরিচয় দিয়ে পিন্টুকে গ্রেফতার না করতে ভবানীপুর থানার অফিসারদের হুমকি দিতে থাকেন।
লালবাজার সূত্রে খবর, ওই পুলিশকর্মীর বেশ কিছু ট্যাক্সি রয়েছে। তারই একটি চালাচ্ছিল পিন্টু। যদিও ওই পুলিশকর্মী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এক পুলিশকর্তা জানান, ওই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশের একাংশের মতে, কলকাতার ঘটনায় ফের প্রমাণিত যে এক শ্রেণির চালকদের কিছুতেই শোধরানো যাচ্ছে না। বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থায় যেমন রক্ষী হিসেবে নিয়োগ করার আগে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হয়, এই ধরনের ট্যাক্সির চালকদের ক্ষেত্রেও সংস্থার সেটা করা উচিত। কিন্তু সেটা কত দূর হচ্ছে বা আদৌ হচ্ছে কি না, পুলিশের একাংশ সেই প্রশ্ন তুলেছেন।
‘উবের’-এর সদর দফতর আমেরিকায়। দিল্লিতে এক ‘উবের’ চালকের বিরুদ্ধে গাড়ির মধ্যেই এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল গত বছর ডিসেম্বরে। যদিও ‘উবের’-এর দাবি, চালক হিসেবে কাউকে নিয়োগ করার আগে শুধু পুলিশ ভেরিফিকেশনই নয়, সেই ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হয়। তাঁর স্বভাব, বিশ্বাসযোগ্যতা, দায়বদ্ধতা সম্পর্কে যতটা বেশি সম্ভব, তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করা হয়।
সংস্থার পক্ষে অশ্বিন ডায়াসের বক্তব্য, ‘‘ট্যাক্সির ভিতরে কোনও বিপদ বুঝলে যাত্রী ‘উবের’-এর মোবাইল অ্যাপে ‘এসওএস’ বোতাম টিপে নিকটবর্তী থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে যাতে সঙ্গে সঙ্গে সহায়তা চাইতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও রয়েছে।
কথায় কথায় হলুদ ট্যাক্সিচালকদের প্রত্যাখ্যান আর বেশি ভাড়ার চাহিদায় অতিষ্ঠ শহরবাসীর অনেকে বেছে নিয়েছেন ‘ওলা’ বা ‘উবের’-এর মতো মোবাইল অ্যাপ নির্ভর ট্যাক্সি-পরিষেবা। কিন্তু দিল্লির পরে কলকাতায় একই ঘটনা ঘটায় আতঙ্কিত যাত্রীরা। লালবাজারের এক কর্তা এ দিন জানান, যাত্রী-নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে ‘ওলা’, ‘উবের’-এর মতো সংস্থার সঙ্গে শীঘ্রই বৈঠক হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy