Advertisement
E-Paper

‘শহর’ হব কবে, প্রশ্ন বাইপাস ঘেঁষা কলকাতার

এক ধারে চিংড়িঘাটা খাল। অন্য দিকে ভেড়ি। এই দুই ধার ঘেঁষেই গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য বেড়া, ইটের ঘর। খাল ও ভেড়ির কালো জল আবার আটকে রয়েছে কচুরিপানায়। টাইম কল দূরে থাকায় ওই জলেই চলছে স্নান, কাপড় কাচা, বাসন মাজা। খালের উপরে বাঁশ পুঁতে বস্তা ঘিরে তৈরি হয়েছে শৌচালয়।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৫
ওয়ার্ড ৫৭

ওয়ার্ড ৫৭

এক ধারে চিংড়িঘাটা খাল। অন্য দিকে ভেড়ি। এই দুই ধার ঘেঁষেই গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য বেড়া, ইটের ঘর। খাল ও ভেড়ির কালো জল আবার আটকে রয়েছে কচুরিপানায়। টাইম কল দূরে থাকায় ওই জলেই চলছে স্নান, কাপড় কাচা, বাসন মাজা। খালের উপরে বাঁশ পুঁতে বস্তা ঘিরে তৈরি হয়েছে শৌচালয়। বড় রাস্তা থেকে গলি পথ ধরে সোজা এই এলাকার দিকে এলে দেখা যাবে রাস্তার কিছুটা অংশ পিচ করা, বাকিটা কাঁচা মাটির। নেই পর্যাপ্ত আলোও। গাড়ি তো দূর অস্ত্‌, অ্যাম্বুল্যান্সও ঢোকে না এখানে। রোগীকে পাঁজাকোলা করে ধাপা এলাকার সাত বা দশ নম্বর মোড় দিয়ে মাঠপুকুর হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়। নেই কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা ইম্যুনাইজেশন সেন্টারও। বাইপাস থেকে এক কিলোমিটার ভিতরে চিংড়িঘাটা সংলগ্ন টাপোরিয়া ঘাট ও মাকালতলা অঞ্চলে এ ভাবেই গড়ে উঠেছে কয়েক হাজার লোকের বসতি। এঁরাও কিন্তু কলকাতার মানুষ। পুরসভার ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

পাশেই বাইপাস ও বাসন্তী হাইওয়ের মাঝে অনন্তবাদাল, ধাপা-দুর্গাপুর, খানাবেড়িয়া, উঁচুপোতা, আরুপোতা, বৈঁচতলাতেও পানীয় জল সীমিত। পুরসভার জলের গাড়ির জন্য প্রতীক্ষার শুরু হয় ভোর থেকে। এ ছাড়া, জল বলতে ভরসা ভেড়ি বা ডোবার দূষিত জল। এখানেও ভেড়ির উপরে মাচা করে তৈরি শৌচাগার। যত্রতত্র জমে নোংরা জল। ছেঁড়া প্লাস্টিক, ভাঙা বেড়ায় তৈরি ঘরগুলি। কোথাও বা মাটির ঘর। মূল রাস্তার পিচ ভাঙাচোরা, গলিপথ কাঁচা। বর্ষার কাদা-মাটি থেকে নিষ্কৃতি পেতে কোথাও ছড়ানো ভাঙা ইট। বেশির ভাগ বাসিন্দা যুক্ত ময়লা কুড়ানো, প্লাস্টিক দানা তৈরি বা শুয়োরের চাষে। কয়েক জন চাষবাসও করেন। অপুষ্টি, ডায়েরিয়া ও চর্মরোগ ঘরে ঘরে। অসুস্থ হলে ওষুধ আনতে আধ ঘণ্টার পথ পেরোতে হয়। যানবাহন বলতে ইঞ্জিন ভ্যান বা আবর্জনার গাড়ি। এই ছবি পুরসভার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের।


ওয়ার্ড ৫৮

বাইপাস-চিংড়িঘাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে চিংড়িঘাটা খাল এবং ক্যাপ্টেন ভেড়ির পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে টাপোরিয়া ঘাটের রাস্তা। এখানে হরিমন্দির পর্যন্ত অংশে পিচ থাকলেও, এর পরে মাকালতলা পর্যন্ত রাস্তাকে মাঠ বা আলপথ বলাই ভাল। খালপাড়ের এক বাসিন্দা অসীম সাঁপুই জানালেন, বর্ষায় ভেড়ি ও খালের জল ছাপিয়ে চলে আসে রাস্তায়। পাম্প চালিয়ে বার করতে হয়। মাকালতলার অনিতা শী বললেন, ‘‘ধাপা হয়ে বাইপাস ধরতে দ্বিগুণ রাস্তা পেরোতে হয়। কোনও যানবাহন নেই। নিজস্ব মোটরবাইক বা সাইকেল না থাকলে রিকশাভ্যান ভাড়া করতে হয়।’’

টাপোরিয়া ঘাটের একাদশী মণ্ডল জানালেন, এখানে বড় সমস্যা পানীয় জল। অনেকে বেলেঘাটা থেকে পরিশোধিত জল আনতেন। এ ছাড়া, সুকান্ত নগর ভেড়ির কাছে পরিশোধিত জল বিক্রি হয় লিটারে তিন থেকে বারো টাকায়। টাপোরিয়া ঘাট ঢুকতে কয়েকটি টাইমকল থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। বাসিন্দাদের দাবি, সম্প্রতি ভোটের দৌলতে পুরসভার জলের গাড়ি ঢুকলেও তা আসে পিচ রাস্তা পর্যন্ত। সমস্যাটি নিয়ে ওয়াকিবহাল পুর-প্রশাসনও।

স্থানীয় পুর-প্রতিনিধি তৃণমূলের জীবন সাহার বক্তব্য, বাম আমলে এই এলাকার জন্য কিছু হয়নি। তবে কয়েক বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংসদ তবহিলের টাকায় রাস্তা ও আলোর কাজ হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘জলাভূমি থাকায় নিকাশির কাজ করতে কিছু অসুবিধা হচ্ছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি পরিকল্পনা করার কথা ভাবা হয়েছে। ভোটের পরে তার প্রস্তুতি নেওয়া হবে।’’ একাধিক প্রবীণ বাসিন্দার কথায়, ভোটের প্রার্থীরা আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন নতুন বোর্ড তাঁদের দুর্দশা ঘোচাবে। এখন সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন ওঁরা।

৫৮ নম্বর ওয়ার্ড অবশ্য দু’দশকেরও বেশি আগে কলকাতা পুর এলাকায় সংযোজিত হয়েছে। ধাপাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই বসতির মধ্যে সব থেকে বিপজ্জনক অবস্থা উঁচুপোতার। ১২০ ঘরের বাস এখানে। এলাকায় ঢুকলে দেখা যায় ভাঙাচোরা রাস্তা। দু’টি মাত্র টিউবওয়েল। বাসিন্দা সোমনাথ বাগ বলেন, ‘‘বিভিন্ন সময়ে পুর-উদ্যোগে সৌর আলো-সহ তিন ধরনের আলো লাগানো হলেও কোনওটি জ্বলে না। সৌর আলোর ব্যাটারি চুরি গিয়েছে। কিছু বাড়িতে সরকারি-বেসরকারি সাহায্যে শৌচাগার হলেও বেশির ভাগই খোলা জায়গায় মলত্যাগ করেন।’’ রাস্তা, নিকাশি ব্যবস্থা এখানেও বেহাল। প্রায় ৪৫০ পরিবার নিয়ে এই ওয়ার্ডের শেষ বিন্দু খানাবেড়িয়ার জনবসতি। পশ্চিম খানাবেড়িয়ায় রাস্তাঘাট নেই। বাড়িতে বিদ্যুৎ থাকলেও রাস্তায় নেই। কোথাও বাড়ি থেকে বিদ্যুৎ টানা হয়েছে রাস্তায়। কোথাও তা-ও নেই। প্রায় একই পরিস্থিতি আরুপোতা ও বৈঁচতলারও।

এক বাসিন্দা হরিমতি দাস বলেন, ‘‘বাইপাস পার করলে চম্পামণি মাতৃসদন। সাধারণ প্রসব ছাড়া আর কিছু হয় না ওখানে। বড় কিছু হলে সব থেকে কাছে বলতে এনআরএস। রাতে রোগী নিয়ে যাতায়াতের জন্য নেই যানবাহন , রাস্তা খারাপ। সন্ধ্যা হতেই বন্ধ হয়ে যায় ইঞ্জিন ভ্যানও। আবর্জনার গাড়িও তখন অমিল।’’

এলাকার একটি মাত্র স্কুল আরুপোতার পুরসভা চালিত স্কুলটি। হাইস্কুলের গণ্ডি ছুতে যেতে হয় চৌবাগা বা বামনঘাটায়। ৮০ শতাংশের বেশি স্কুলছুট এখানে। অভিযোগ, শিশু নিগ্রহ, বাল্যবিবাহের প্রবণতা এখানে খুব বেশি। এক বাসিন্দা রমেশ সামন্ত জানাচ্ছেন, অশিক্ষা, শিশু নিগ্রহের মতো ঘটনার জন্যই পরিবারগুলির মধ্যে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বাড়ছে।

ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শম্ভুনাথ কাও বছরখানেক আগে থেকে খুনের অভিযোগে জেলবন্দি। তাই পুরসভার তরফে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয় মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দারকে। তিনি আবার ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীও। এই সমস্যা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘকাল ধরে ওই সব এলাকা অনুন্নত ছিল। বাম আমলে কোনও কাজ হয়নি। তবে গত সাড়ে তিন বছরে আমরা পানীয় জল, নিকাশির কিছু কিছু সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছি। তবে এটা ঠিক যে, আরও কাজ বাকি আছে।’’

EM Bye pass town tag jayati raha municipal election Trinamool Sambhunath Cow Sambhunath Caw
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy