Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মদন-হোর্ডিংয়ে বিরক্ত নেত্রী, ঝটপট সরাল পুরসভা

মদন মিত্রের মাথার উপর থেকে ‘আশীর্বাদের হাত’ তুলে নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য: সাম্প্রতিক কালে মদনের নানা কথাবার্তা, আদালতে তাঁর আইনজীবীর মুখ্যমন্ত্রীর নাম নেওয়া ইত্যাদি ঘটনায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ছিলেন মমতা। তাঁর এই ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে সম্প্রতি শহর জুড়ে মদনের অনুগামীদের লাগানো হোর্ডিংয়ে।

খুলে ফেলা হচ্ছে মদন মিত্রের হোর্ডিং। মঙ্গলবার বাগবাজার চত্বরে বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

খুলে ফেলা হচ্ছে মদন মিত্রের হোর্ডিং। মঙ্গলবার বাগবাজার চত্বরে বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ০২:৫১
Share: Save:

মদন মিত্রের মাথার উপর থেকে ‘আশীর্বাদের হাত’ তুলে নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!

মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য: সাম্প্রতিক কালে মদনের নানা কথাবার্তা, আদালতে তাঁর আইনজীবীর মুখ্যমন্ত্রীর নাম নেওয়া ইত্যাদি ঘটনায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ছিলেন মমতা। তাঁর এই ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে সম্প্রতি শহর জুড়ে মদনের অনুগামীদের লাগানো হোর্ডিংয়ে।

সোমবার রাতে চার-চারটে ট্রাক এনে সেই হোর্ডিংগুলোই ভেঙে ধাপায় ফেলে এসেছেন পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের কর্মীরা। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, ২১ জুলাইয়ের আগে মদন মিত্রের অনুগামীদের লাগানো হোর্ডিং নিয়ে দলের মধ্যে কোনও অসন্তোষ হোক, চাননি নেত্রী। তাই সোমবার নবান্নে ডাক পড়ে পুরকর্তাদের। নবান্ন সূত্রের খবর, সেখানেই নির্দেশ দেওয়া হয়, শহরে মদন মিত্রের নামে যত হোর্ডিং-ব্যানার রয়েছে তা অবিলম্বে খুলে, ভেঙে ফেলতে হবে। এর পরেই সোমবার রাত থেকে শুরু হয়ে যায় কলকাতা পুরসভার ‘মদন অভিযান’।

দক্ষিণ কলকাতা থেকে উত্তর— সর্বত্র ওই সব হোর্ডিংয়ে কোথাও লেখা ছিল, ‘২২০ দিন বিনা অপরাধে মদন মিত্র বন্দি কেন? বাংলার মানুষ জবাব চায়।’ কোনওটাতে ‘মদন মিত্র জেলে কেন, জবাব চাইছে বাংলার মানুষ।’ বাদ যায়নি মদন মিত্রের বিধানসভা কেন্দ্র কামারহাটি, দক্ষিণেশ্বরও। তৃণমূল সূত্রের খবর, দক্ষিণ কলকাতার এমন সব জায়গায় ওই সব হোর্ডিং ছিল যে যাতায়াতের পথে প্রতিনিয়ত তা নেত্রীর নজরে পড়ত।

সম্প্রতি মদন মিত্র হাসপাতালে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, ‘‘দলনেত্রীর উপরে আস্থা রাখার ফল পাচ্ছি। সবাই বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আমি জেলে পচছি।’’ এর কয়েক দিন পরেই মদনের জামিনের আবেদন করার সময়ে তাঁর আইনজীবী আদালতে মুখ্যমন্ত্রীর নাম তুলেছিলেন। সওয়াল করার সময়ে মালদহের আশরাফুল হক নামে এক সাক্ষীর বয়ান উল্লেখ করে তিনি জানান— মদন একা না, সারদার কলম পত্রিকার উদ্বোধনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে আশরাফুল প্রভাবিত হয়েছিলেন। তা হলে শুধু মদন মিত্র জেলে কেন?

এই দু’টি ঘটনা সংবাদমাধ্যমে আসার পরে তৃণমূল মহলে শোরগোল পড়ে যায়। পরে অবশ্য পরিস্থিতি সামলাতে মদন মিত্র তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, ‘‘হনুমান যেমন রামভক্ত, আমি তেমনই মমতাভক্ত।’’ কিন্তু এর কিছু দিন পরেই মদন মিত্রের সমর্থনে শহর জুড়ে লাগানো হোর্ডিং ঘিরে ফের বিতর্ক দানা বাঁধে।

নবান্ন সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠদের কাছে দলের বিরুদ্ধেও যে নানা কথা বলেছেন মদন মিত্র, তা-ও মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্রী এতটাই বিরক্ত যে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, ‘ওঁর জন্য অনেক কিছু করা হয়েছে!’

পুরসভা সূত্রের খবর, মমতার নির্দেশ পেয়ে জঞ্জাল অপসারণ দফতরের অফিসারদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পুরকর্তারা। সিদ্ধান্ত নেন, রাতের মধ্যেই মদন মিত্রের নামে থাকা হোর্ডিং-ব্যানার খুলে ফেলা হবে। এর পরই পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতর দু’টো দল তৈরি করে। একটি দল যায় গোপালনগরে, চেতলায়, কালিঘাটে, হরিশ মুখার্জি, আশুতোষ মুখার্জি রোডে। অন্য দলটি যায় ভবানীপুর, পদ্মপুকুর, কাঁসারিপাড়া, গাঁজা পার্ক এবং হাজরা রোডে। পুরসভা সূত্রের খবর, রাতেই প্রায় ৭০-৮০টি হোর্ডিং-ব্যানার খুলে ফেলা হয়। এ দিন সকালে উত্তর কলকাতার বাগবাজারেও হোর্ডিং খুলতে দেখা যায় পুরকর্মীদের।

পুরসভার এক অফিসার বলেন, ‘‘পুরসভার অনুমতি না নিয়ে ওই হোর্ডিং লাগানো হয়েছিল। তাই আইন অনুসারে তা খোলার ক্ষমতা পুরসভার আছে।’’ কিন্তু শহর জুড়ে অজস্র বেআইনি হোর্ডিং না খুলে শুধুমাত্র মদন মিত্রের অনুগামীদের টাঙানো হোর্ডিং খোলা হল কেন? এই প্রশ্নের অবশ্য কোনও জবাব মেলেনি পুরকর্তাদের কাছে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় আবার পুরসভা হোর্ডিং খুলেছে বলেই মানেননি। তাঁর কথায়, ‘‘এটা সম্পূর্ণ অপপ্রচার।’’

তবে তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ বার থেকে নেতা বা ব্যক্তির মুখ বা ছবি দিয়ে কোনও ব্যানার বা হোর্ডিং থাকবে না— এটা দলের সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত মেনেই সবাইকে চলতে হবে। দলের পক্ষ থেকে যে ধরনের ব্যানার বা হোর্ডিং-এর নক্সা করে দেওয়া হয়েছে, তার বাইরে কোনও কিছু লাগানো যাবে না।

কী বলছেন মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠরা? তাঁদের দাবি, মদন মিত্রের নির্দেশেই ওই হোর্ডিংগুলো খুলে নেওয়া হয়েছে। জোর করে সেগুলো কেউ খোলেনি বলেই তাঁদের দাবি। কামারহাটি ও দক্ষিণেশ্বর এলাকায় অবশ্য হোর্ডিং রয়েই গিয়েছে। কামারহাটি পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, ‘‘কোন অনুগামী কোথায় কী ব্যানার লাগাচ্ছেন, তা বোঝা সম্ভব নয়। অনুগামীরা তো আর নিজেদের নামে ব্যানার লাগাচ্ছেন না।’’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, ‘‘এই সব ব্যানারই হল মানুষের ভালবাসা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE