Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সিন্ডিকেট-জুলুম: ফোন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রীরও

হুমকি দেওয়ার অভিযোগে বিধাননগরের তৃণমূল কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি নিশ্চিত হয়েছিল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠিতে। এ বার উত্তরপ্রদেশের এক মন্ত্রীর ফোনে সিন্ডিকেট-দৌরাত্ম্যে জড়িয়ে গেল বিধাননগরেরই আর এক তৃণমূল কাউন্সিলরের নাম।

সিপি-কে লেখা মেয়রের চিঠি।

সিপি-কে লেখা মেয়রের চিঠি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৬ ০১:২৯
Share: Save:

হুমকি দেওয়ার অভিযোগে বিধাননগরের তৃণমূল কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি নিশ্চিত হয়েছিল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠিতে। এ বার উত্তরপ্রদেশের এক মন্ত্রীর ফোনে সিন্ডিকেট-দৌরাত্ম্যে জড়িয়ে গেল বিধাননগরেরই আর এক তৃণমূল কাউন্সিলরের নাম। অভিযোগ, সেই কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ ‘সিন্ডিকেট-দাদাদের’ হুমকির জেরে শুরুই করা যায়নি একটি কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের কাজ।

ঘটনাচক্রে এ বারের অভিযোগটি যে দিনের, তার দু’দিন আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন অনিন্দ্য। যার অর্থ, কাউন্সিলরের ধরা পড়াতেও সিন্ডিকেট দাদাদের হুঁশ ফেরেনি। এ বারের ঘটনায় নাম জড়ানো তৃণমূল কাউন্সিলর পুরো বিষয়টিতে নিজের সংস্রব অস্বীকার করলেও এ কথা মেনে নিয়েছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁদের দলেরই কর্মী। তাকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।

এই ঘটনায় দৌরাত্ম্যের শিকার ‘ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট’ (নাবার্ড)। অভিযোগ, রাজ্যের গর্বের মুখ বিধাননগরের পাঁচ নম্বর সেক্টরে নাবার্ডের অফিস বিল্ডিং তৈরির দায়িত্ব পাওয়া নির্মাণকারী সংস্থাকে হুমকি দিয়েছে সিন্ডিকেট দাদারা। সোমবার বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের কাছে এমনই অভিযোগ জানায় ওই সংস্থা। মেয়র সঙ্গে সঙ্গে চিঠি লিখে অভিযোগপত্রটি পাঠিয়ে দেন বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহের কাছে। আর্জি জানান, ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ করতে, যাতে অন্য কেউ এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে না পারে। সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ফোনে আমাকে প্রথমে ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন। আমি লিখিত অভিযোগ দিতে বলি। তার পরে আজ সংস্থার তরফে সেই লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।’’ ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত ইমারতি দ্রব্যের সরবরাহকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম রমেশ মণ্ডল।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, রমেশ ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়দেব নস্করের ঘনিষ্ঠ। জয়দেব নিজে অবশ্য সে কথা অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘রমেশকে চিনি। কিন্তু ও আমার ঘনিষ্ঠ নয়। রমেশ দলের মিটিং-মিছিলে থাকে। ব্যানার, পোস্টার লাগায়।’’ তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে জয়দেবের দাবি, ‘‘আমি বৈঠকে ছিলাম। শুনেছি, ওঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আইন আইনের পথে চলবে। এমন ঘটনা সমর্থন করছি না।’’

ঠিক কী ঘটেছিল? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, অনিন্দ্য গ্রেফতার হন ১২ জুলাই। তার দু’দিন পরে, ১৪ জুলাই পাঁচ নম্বর সেক্টরের ডিপি ব্লকের ২ নম্বর প্লটে কাজ শুরু করে নির্মাণকারী সংস্থা। ওই জায়গায় নাবার্ডের অফিস বিল্ডিং নির্মাণের বরাত পেয়েছিল ন্যাশনাল বিল্ডিং কনস্ট্রাকশান কর্পোরেশন লিমিটেড। তাঁরা বরাত দেয় কসানা বিল্ডার্সকে। নির্মাণসংস্থার এক আধিকারিক তাঁর অভিযোগে জানান, ১৪ তারিখ কাজ শুরু করতে নির্মাণস্থলে যন্ত্রপাতি রাখা হয়। সে দিনই ৮-১০ জন যুবক এসে হুমকি দেয়, তাদের ঠিক করা দামে সমস্ত ইমারতি দ্রব্য কিনতে হবে। অন্যথায় ওই নির্মাণ সংস্থাকে ঝামেলায় পড়তে হবে বলেও জানায় তারা।

বিধাননগরের এক উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ পাঁচ নম্বর সেক্টরের প্রশাসনিক সংস্থা নবদিগন্তের চেয়ারম্যান তথা পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘ঘটনায় যে-ই জড়িত থাকুক, আইন আইনের পথে চলবে। এমন ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে— নির্মাণকাজ আরম্ভ হচ্ছে দেখে বালি, পাথর সরবরাহ করার জন্য গিয়েছিল সিন্ডিকেটের লোকেরা। তখনই তারা হুমকি দেয় বলে অভিযোগ।

পাঁচ নম্বর সেক্টরে বহু সংস্থার অফিস নির্মাণের ক্ষেত্রেই একই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ শোনা যায়। যদিও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জমা পড়েনি। নবদিগন্তের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ এলেই পুলিশকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলা হবে।’’ তথ্যপ্রযুক্তি মহলের একাংশের দাবি, সিন্ডিকেটের কাছ থেকেই তাদের ঠিক করা দামে ইমারতি দ্রব্য কিনতে হয়। এবং স্থানীয় নেতা-নেত্রীরাও এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল। যদিও এ বিষয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়দেববাবু বলেন, ‘‘এমন কোনও ঘটনা জানা নেই আমার। কে কোথায় কী করছে, তা সব সময়ে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু এমন ঘটলে প্রশাসন তা বরদাস্ত করবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bidhannagar police extortion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE