Advertisement
E-Paper

পুজোর উপহার নতুন গাড়ি চেপেই ঘুরবে ওরা

কুকুরের জন্য সাতটি গাড়ি কেনার টাকাও উঠে যায়। আজ, শনিবার ওই গাড়িগুলিই কুকুরগুলিকে বেল্টের মাধ্যমে পরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২০ ০৪:০২
উদ্যোগ: আহত কুকুরদের জন্য তৈরি করা হয়েছে এমনই গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

উদ্যোগ: আহত কুকুরদের জন্য তৈরি করা হয়েছে এমনই গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

কারও পিছনের দু’টি পা ট্রেনে কাটা পড়েছে। কারও সামনের দু’টি পা ভেঙে গিয়েছে গাড়ির ধাক্কায়। কেউ পাড়ার লোকের মার খেয়ে কোমর ভেঙে চলাফেরার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মাস চারেকের একটির আবার তিনটি পা-ই কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছে বড় কুকুরের দল! বুকে ভর দিয়ে চলাফেরা করতে করতে ওদের বেশির ভাগেরই বুকের ছাল-চামড়া উঠে গিয়েছে। যেখানে মলমূত্র ত্যাগ করছে, সেখান থেকে দ্রুত সরে যাওয়ারও শক্তি নেই ওদের বেশির ভাগের।

‘প্রায় পঙ্গু অবস্থায় দিন কাটানো এই ধরনের কুকুরদের জন্য পুজোর আগে কিছু করা যায় না?’

এই প্রশ্ন তুলে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন বেহালা চৌরাস্তার বাসিন্দা দময়ন্তী সেন নামে এক তরুণী। সেই সঙ্গে তিনি লেখেন, ‘‘এই কুকুরদের চলাফেরায় সাহায্য করতে পারে এমন এক ধরনের গাড়ি পাওয়া যায়। নিজেদের পুজোর খরচের টাকা থেকে কিছুটা বাঁচিয়ে ওদের জন্য গাড়ি কিনে দিলে ওরা হয়তো আবার একটু ভাল করে বাঁচতে পারবে।’’ এই পোস্টে দ্রুত সাড়া পড়ে যায়। দুর্গাপুরের একটি সংস্থায় থাকা এমনই সাতটি কুকুরের জন্য সাতটি গাড়ি কেনার টাকাও উঠে যায়। আজ, শনিবার ওই গাড়িগুলিই কুকুরগুলিকে বেল্টের মাধ্যমে পরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

দময়ন্তী বলেন, ‘‘করোনার মধ্যেও এ বার পুজোর হুজুগে ভাটা পড়েনি। তার মধ্যে যে যেমন পারেন, সাহায্যের আবেদন করেছিলাম। অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। তা দিয়েই সাতটি কুকুরের জন্য গাড়ি কেনা হয়েছে।’’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, বিদেশে এই ধরনের গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ে সচেতনতা থাকলেও এ দেশে এখনও তেমন ভাবে তা নেই। গাড়িগুলি তৈরি করে দিয়ে সাহায্য করেছেন অলোকেশ কর্মকার নামে এক ব্যক্তি।

বেহালা সখেরবাজারের বাসিন্দা অলোকেশবাবু ঘানায় একটি জুটের সংস্থায় চাকরি করেন। গত বছর তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। তবে লকডাউনের জন্য এখনও ঘানায় ফিরতে পারেননি। তাঁর স্ত্রী, পেশায় ফ্যাশন ডিজ়াইনার সুতপার সঙ্গে এখন তিনি চলাফেরার শক্তি হারানো কুকুরদের জন্য এই ধরনের গাড়ি তৈরির কাজ করছেন। অলোকেশবাবু জানান, যে কুকুরের জন্য গাড়িটি বানানো হচ্ছে, সে কতটা লম্বা, কতটা চওড়া এবং তার উচ্চতা কত, জেনে নেওয়া হয়। সেই মতো চাকার সঙ্গে নাটবল্টু, স্ক্রু, পাইপ এবং হালকা লোহার রড যুক্ত করে গাড়ি তৈরি করা হয়। এর পরে গাড়িটি পরিয়ে কুকুরটিকে হাঁটিয়ে প্রয়োজন মতো ছোট-বড় করা হয়। গাড়ির বেশির ভাগ কাঁচামাল কলকাতাতেই পাওয়া যায়। চাকাগুলি শুধু মুম্বই থেকে আনানো হয়।

অলোকেশবাবুর কথায়, ‘‘ঘানার মতো দেশেও চাকরি করতে গিয়ে দেখেছি, এই ধরনের কুকুরদের জন্য কত চেষ্টা করা হয়। আমাদের এখানে তেমন কিছুই নেই। এই গাড়ি তৈরি নিয়েই এখানে পাকাপাকি কিছু করার কথা ভাবছি। বহু মহিলা বাড়ি বসে নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তেমনই একটি বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে মন্দ কী?’’

দময়ন্তী বললেন, ‘‘সব সময়ে এটাই মনে রাখতে চাই, অঙ্গহানি মানেই জীবন শেষ নয়। মানুষের জন্য এই বক্তব্য সত্যি হলে, ওদের জন্য নয় কেন?’’

Dogs Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy