Advertisement
E-Paper

অটোয় বসেই স্বনির্ভরতার উড়ানে প্রমীলা বাহিনী

বছর কুড়ির মৌসুমীর বাড়ি বাঘা যতীন রেলগেট সংলগ্ন কলোনিতে। স্বামী স্থানীয় একটি সাইকেলের দোকানে কাজ করেন।

ফিরোজ ইসলাম

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩০
দাপটে: অটো মেরামতিতে ব্যস্ত মৌসুমী। —নিজস্ব চিত্র।

দাপটে: অটো মেরামতিতে ব্যস্ত মৌসুমী। —নিজস্ব চিত্র।

সংসারে অভাব থাকলেও ওঁদের উদ্যমে কোনও ঘাটতি নেই। অভাবের সংসার আগলে রাখতে অটোর ব্রেকে পা রাখতেও পিছপা নন ওঁরা।

সরকারি খাতায় এত দিন নথিভুক্ত ছিল না এ শহরের কোনও মহিলা অটোচালকের নাম। তবে তন্দ্রা সাধুখাঁ, মৌসুমী সর্দার, কৃষ্ণা বিজলিদের মতো এক ঝাঁক মহিলা ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন রুটে অটো চালানোর। লাইসেন্স এবং পারমিট হাতে এসে গেলে মাস খানেকের মধ্যেই অটো নিয়ে পথে নামবেন ওঁরা। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, মেয়েদের জন্য আলাদা কোনও নিয়ম নেই। তিনি বলেন, “প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করতে পারলেই লাইসেন্স পেতে অসুবিধে হবে না কোনও মহিলারই।”

বছর কুড়ির মৌসুমীর বাড়ি বাঘা যতীন রেলগেট সংলগ্ন কলোনিতে। স্বামী স্থানীয় একটি সাইকেলের দোকানে কাজ করেন। শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে চার জনের সংসার চালাতে প্রয়োজন বাড়তি আয়। অটো চালানোর তালিম নেওয়ার পাশাপাশি মৌসুমী তাই রপ্ত করে নিয়েছেন অটো মেরামতির কাজও। মৌসুমীর কথায়, “বাড়িতে সাইকেল সারানো দেখেছি। অটো চালানো শিখতে গিয়ে মনে হল, মেরামতির কাজটা শিখে নিলে সুবিধেই হবে।”

আরও পড়ুন: ফ্ল্যাটে টাকা রাখেন ভারতী-ঘনিষ্ঠ, বলছে সিআইডি

বছর সাতাশের তন্দ্রার বাড়ি টালিগঞ্জ ফাঁড়িতে। বাবা সংবাদপত্র বিক্রেতা। অভাবের জন্য কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের পরে আর পড়া হয়নি। বাবার পাশে দাঁড়াতে রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে খবরের কাগজ বিক্রি করেছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংবাদপত্র পৌঁছনোর কাজও করেছেন। এ সবেরই ফাঁকে কয়েক মাস চেষ্টা করে অটো চালানো শিখেছেন তন্দ্রা। তাঁর কথায়, “অটো চালাতে পারলে খানিকটা স্বচ্ছলতা আসবে। বাবা একা পেরে ওঠেন না।”

কৃষ্ণার অবশ্য পরিস্থিতি খানিকটা অন্য রকম। তাঁর স্বামী রবীনও অটো চালান। পারিবারিক ভাবে অটো চালানো শেখার ক্ষেত্রে তাঁর সুবিধাই হয়েছে। স্বামীর পাশপাশি সংসার সামলে তিনিও অটো নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়বেন বলে ঠিক করেছেন।

পড়শি রাজ্য রাঁচিতে ইতিমধ্যেই সফল ভাবে কাজ করে চলেছেন মহিলা অটোচালকেরা। এ রাজ্যেও অটো চালিয়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে আগ্রহী আরও অনেকে। তাঁদেরই মধ্যে অন্যতম রূপা নায়েক এবং শম্পা কুণ্ডু। বিবাহ বিচ্ছিন্না রূপা একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় কাজ করেন। তাঁর কথায়, “স্বাধীন রোজগারের খোঁজ করছি। অটো চালাতে শিখলে সেটা সম্ভব হবে বলেই মনে হয়।”

কিন্তু পুরুষ সহকর্মীরা কী ভাবে দেখছেন বিষয়টি? তাঁদের সহযোগিতা কতটা মিলবে? দক্ষিণ কলকাতা জেলা অটো ড্রাইভার্স অ্যান্ড অপারেটর্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোপাল সুতার জানান, পুরুষ সহকর্মীদের সাহায্য না পেলে এত জন নবাগতাকে অটো চালানো শেখানো সম্ভবই হত না। পুরুষ সহকর্মীদের অনেকেই চান তাঁদের পরিবারের মহিলাদের জন্যও এই পেশার দরজা খুলুক।

তবে মহিলা চালকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কিছুটা চিন্তা প্রকাশ করেছেন অটোর চালক এবং যাত্রীদের কেউ কেউ। রাতদুপুরে হঠাৎ কোনও বিপদ হলে দেখবে কে, উঠেছে প্রশ্ন। যদিও সে ভয়ের তোয়াক্কা না করেই নতুন কাজ ভাল ভাবে করতে উদ্যোগী এই মহিলারা। তাঁদের বক্তব্য, সব কাজেই কিছু না কিছু অসুবিধে থাকে। ভয় পেয়ে বসে থাকলে চলবে নাকি? এগিয়ে চলার প্রথম ধাপে আপাতত টালিগঞ্জ-রবীন্দ্র সরোবর, যাদবপুর-টালিগঞ্জ, যাদবপুর–রানিকুঠির মতো কিছু রুটে ওই মহিলাদের অটো চালাতে দেখা যাবে বলে খবর। শুরুর দিকে অটো ভাড়া নিয়েই তাঁরা চালাবেন। ধীরে ধীরে চেষ্টা করবেন নিজেদের গাড়িও কিনে ফেলতে।

Auto Woman Kolkata অটো কলকাতা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy