Advertisement
১১ মে ২০২৪

দৈনিক ২০ লক্ষ টাকার জল অপচয়! 

শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরলেই রাস্তার কল থেকে অনবরত জল পড়ে যাওয়ার দৃশ্য নজরে আসে। শ্যামবাজার, মানিকতলা থেকে বেহালা, গার্ডেনরিচ, বাঘা যতীন সর্বত্র এমন পরিস্থিতি চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

 নষ্ট হচ্ছে জল।

নষ্ট হচ্ছে জল।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৯ ০০:৫৬
Share: Save:

সম্প্রতি বিধানসভা অধিবেশনে জলসঙ্কটের প্রসঙ্গ তুলে প্রশাসনের কর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছিলেন, যাতায়াতের পথে শহরের রাস্তার কল থেকে অনবরত জল পড়তে দেখেছেন তিনি। এ ভাবে জলের অপচয় বন্ধ করতে সব রাজনৈতিক দল এবং জনগণকে এগিয়ে আসার আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী।

শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরলেই রাস্তার কল থেকে অনবরত জল পড়ে যাওয়ার দৃশ্য নজরে আসে। শ্যামবাজার, মানিকতলা থেকে বেহালা, গার্ডেনরিচ, বাঘা যতীন সর্বত্র এমন পরিস্থিতি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি টালা ট্যাঙ্কের নীচেও ক্রমাগত জল পড়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের অফিসারেরা। এ তো গেল মাটির উপরে জল অপচয় হওয়ার নমুনা। চোখের আড়ালে মাটির নীচে যে জল নষ্ট হচ্ছে তার পরিমাণ কিন্তু অনেক বেশি, এ কথা মানছেন পুর কর্তারাই। পাইপলাইন ফেটে বা বিভিন্ন জলাধারে ছিদ্র হয়ে সেই অপচয় হচ্ছে। পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের অফিসারদের যুক্তি, ব্রিটিশ আমলের পাইপলাইন, জলাধার কালের নিয়মে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি মহম্মদ আলি পার্কে পুরসভার জলাধারের পাঁচিল ভেঙে জলে ভেসে গিয়েছিল চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ।

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, এ শহরে দৈনিক ৪৪৬ মিলিয়ন গ্যালন অর্থাৎ ২০২ কোটি লিটার পরিস্রুত পানীয় জল উৎপাদন হয়। উৎপাদিত জলের পরিমাণ ধরলে বাসিন্দাপিছু ৪৫০ লিটার জল পাওয়ার কথা। অথচ এখনও শহরের বেশ কিছু এলাকায় জলসঙ্কট অব্যাহত। যার অন্যতম কারণ এই অপচয়। কলকাতা পুর এলাকায় ভূপৃষ্ঠ এবং ভূগর্ভ মিলিয়ে দৈনিক প্রায় ৫০ কোটি লিটার জল নষ্ট হচ্ছে। শতাংশের হিসেবে যা দৈনিক উৎপাদিত জলের ২৮-৩০ ভাগ। এক পুর ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘এক হাজার লিটার পরিস্রুত পানীয় জল উৎপাদন করতে খরচ হয় প্রায় চার টাকা। সেই হিসেবে অপচয় হওয়া ৫০ কোটি লিটার জল তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ২০ লক্ষ টাকার জল নষ্ট হচ্ছে এ শহরে।’’ শুধু টাকা নষ্টই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জলসঙ্কট যে হারে বাড়ছে, তাতে অপচয় রুখতে পুর প্রশাসনের এখনই কোমর বেঁধে নামা প্রয়োজন বলে মানছেন অনেকে।

পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের একাধিক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘প্রাথমিক কয়েকটি জিনিসেই মূল সমস্যা হচ্ছে। যেমন, কোথাও রাস্তার ধারের কল থেকে জল পড়ে যাচ্ছে, কোথাও আবার কলই না থাকায় সারাদিন জল বেরিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া মাটির নীচে পাইপলাইনে কোনও ফুটো আছে কি না, তা জানার উপায় নেই, যত ক্ষণ না জল ছাপিয়ে উপরে উঠে আসছে।’’

তা হলে উপায়? মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘টালার জলাধারে যে একাধিক ফুটো ছিল, তা সারানোর কাজ চলছে। জল অপচয় নিয়ে সজাগ থাকতে মিটার বসানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে পুরসভা। ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে ১-৬ নম্বর ওয়ার্ডে তা বসানো হচ্ছে।’’ তবে সে সব যে যথেষ্ট নয় এবং সময়সাপেক্ষ তা মানছেন মেয়র। তিনি জানান, অপচয়ের কারণ খোঁজা হচ্ছে। তা বন্ধ করতে জরুরি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water Wastage Water Scarcity Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE